‘দেশেই হচ্ছে আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ'
২২ জুন ২০১৫ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১০ জন আইএস সদস্য অস্ত্র চালনা থেকে শুরু করে নানা শারীরিক কসরতের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, ঐ প্রশিক্ষণটি বাংলাদেশের কোনো গহিন এলাকায় হয়েছে, যেখান থেকে ভিডিও ধারণ করা হয়৷ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির খোঁজে এখন অভিযান চলছে৷ এছাড়া জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের খোঁজ করা হচ্ছে পার্বত্য এলাকাতেও৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহাজাহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সর্বশেষ আমরা বারিধারা ডিওএইচএস-এর নিজ বাসা থেকে আবদুল্লাহ আল গালিব নামে আইএস-এর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি৷ গালিব অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা কর্মকর্তার ছেলে৷ তার কম্পিউটার থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ১০ জন আইএস সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে গালিব ঐ ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি৷ তবে আমরা ধারণা করছি এটা দেশের মধ্যেই ধারণ করা হয়েছে৷''
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, এর আগে গত ২৫শে মে ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আমিনুল ইসলাম (৩৮) ও সাকিব বিন কামাল (৩০) নামে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ রাজধানীর উত্তরা ও লালমাটিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ এদের মধ্যে শাকিব বিন কামাল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন নারী উপদেষ্টার ছেলে৷ এরা দু'জনও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি৷ দেশের বিভিন্নস্থানে আমাদের অভিযান চলছে৷ আশা করছি আরো বেশ কিছু জঙ্গি এ অভিযানে গ্রেপ্তার হবে৷''
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত আবদুল্লাহ আল গালিব নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সহ-সমন্বয়ক ছিল৷ তার আগে হিজবুত তাহরীরের সদস্য এবং বর্তমানে আইএস-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিল গালিব৷ বারিধারায় নিজ বাসায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠনের প্রচার, অর্থ ও কর্মী সংগ্রহ এবং তাদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতো সে৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভলেকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আইএস সদস্যরা ইরাক ও সিরিয়ার মতো গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাতের মাধ্যমে আইএস নির্দেশিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ইন্টারনেটে কর্মী সংগ্রহ করছিল৷
জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুল ইসলাম জানায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের কাজ করতো সে৷ সিরিয়ায় কথিত জিহাদে অংশ নেবে – এমন ২০ জন যুবক সংগ্রহ করেছিল আমিনুল৷ এছাড়া সে অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এ রকম কোনো হামলার আগেই অবশ্য তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে৷
গোয়েন্দা পুলিশের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃত গালিব দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় অবনতি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিল৷ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের অনেক সদস্য তৎপর রয়েছে বলে আটক হওয়ার পর জানিয়েছে গালিব৷ এই জঙ্গি সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা৷ তাদের সংগঠনের নাম ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ'৷ নতুন এ সংগঠনটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর আদলে গঠিত বলে দাবি তার৷
উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, আইএস-এ যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল৷ এদের মধ্যে পাকিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে দু'জন নিহত হয়৷ এরা হলো – সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা শামীম আহম্মেদ ও বাতেনের ভগ্নিপতি মুহম্মদ সায়েম৷ গত ২৯শে জানুয়ারি ডিবি খিলক্ষেত ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সাখাওয়াতুল কবির (৩৫), আনোয়ার হোসেন ওরফে বাতেন (৩৩), রবিউল ইসলাম (৩৫) ও নজরুল ইসলামকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে৷ এদের মধ্যে কবির বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-এর প্রধান সমন্বয়ক, বাকি তিনজন তার সহকারী৷ এই কবিরের সঙ্গে আমিনুল ও সাকিব-বিন-কামালের যোগাযোগ ছিল৷ প্রসঙ্গত, যারা আইএস-এ যুক্ত হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই স্বচ্ছল পরিবার থেকে এসেছে, জানান উপ-কমিশনার৷