নব্য নাৎসি হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো জার্মান সংসদ
২৩ নভেম্বর ২০১১জার্মানিতে বহুকাল ধরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে নব্য নাৎসিদের হাত ছিল এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তা টেরও পায় নি – এমন বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে গোটা দেশ স্তব্ধ৷ দলমত নির্বিশেষে জার্মানির রাজনীতিকরাও নানা ভাবে উগ্রবাদী হিংসার বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ, দুঃখ ও আবেগ প্রকাশ করেছেন৷ মঙ্গলবার সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ'এ তাঁদের হয়ে বক্তব্য রাখলেন স্পিকার নর্বার্ট লামার্ট৷ তিনি বলেন, রাজ্য ও ফেডারেল স্তরে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এমন ভয়ংকর অপরাধের ষড়যন্ত্র ঠিক সময় টের পায় নি এবং তা প্রতিরোধও করতে পারে নি৷ এর ফলে আমরা সবাই অত্যন্ত লজ্জিত৷
মঙ্গলবার বুন্ডেসটাগ'এর পাঁচ সংসদীয় দলই সম্মিলিতভাবে এক প্রস্তাব অনুমোদন করে, যাতে নব্য নাৎসি হিংসার শিকার ১০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই অপরাধের নিন্দা করা হয়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স পেটার ফ্রিডরিশ বলেন, শুধু নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিই এই হত্যালীলার শিকার হন নি৷ সেইসঙ্গে আমাদের সমাজ, আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যবোধ, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতিও হামলা চালানো হয়েছে৷ এবার অপরাধী ও তাদের মদতদাতাদের উচিত শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের জঘন্য আদর্শের মূলে আঘাত হানতে হবে৷
শুধু কথা নয়, কাজের মাধ্যমে দ্রুত উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কাঠামোর খোলনলচে বদলে দিতে চায় জার্মান সরকার৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রিডরিশ ইতিমধ্যেই ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু বাড়তি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন৷ এর আওতায় ২০০৪ সালে ইসলামী উগ্রবাদ দমন করতে যেভাবে এক কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল, ঠিক সেই আদর্শেই উগ্র দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যেও এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে৷ তাছাড়া এক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে উগ্র দক্ষিণপন্থী ও নব্য নাৎসিদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা করা হবে, যাতে যে কোনো কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে তা কাজে লাগাতে পারে৷ এতকাল রাজ্য ও ফেডারেল স্তরে একাধিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে সহজে এই মূল্যবান তথ্যের নাগাল পাওয়া যেত না৷
জার্মানিতে নব্য নাৎসি সন্ত্রাস সম্পর্কে সম্প্রতি যা জানা গেছে, তার ফলে বিদেশেও যে সেদেশের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তা মনে করিয়ে দিলেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিরোধী সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ ফলে চরম দক্ষিণপন্থীদের রাজনৈতিক দল এনপিডি'কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার উদ্যোগ আবার নতুন করে শুরু করা উচিত বলে মনে করেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ের ফলে এই উদ্যোগ বিফল হয়েছিল৷ সেসময়ে এনপিডি দলের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার এত চর লুকিয়ে ছিল যে, দলের প্রকৃত রূপ বোঝাই কঠিন হয়ে পড়েছিল৷ ফলে সেযাত্রা বেঁচে যায় এনপিডি৷ আজ যারা আবার সেই উদ্যোগ শুরু করার পক্ষে, তারা সরকারের উদ্দেশ্যে এনপিডি থেকে সব চর আগে সরিয়ে নেওয়ার ডাক দিয়েছেন৷ সরকার অবশ্য এই সব চরদের ফিরিয়ে আনতে চায় না৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে ভিতরের খবর না পেলে প্রশাসনের পক্ষে ১৯৯০ সাল থেকে প্রায় ৩০টি উগ্র দক্ষিণপন্থী সংগঠন নিষিদ্ধ করা সম্ভব হতো না৷
উগ্র দক্ষিণপন্থী দল বা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে চর পাঠিয়ে সরকার কী সাফল্য পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বামপন্থী ‘জি লিংকে' দলের নেতা গ্রেগর গিজি৷ তাঁর মতে, এত লোকবল সত্ত্বেও হত্যালীলা বন্ধ করা সম্ভব হয় নি৷ সরকার উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আর্থিক অনুদান কমিয়ে আনতে সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বিরোধী দলগুলির বিস্তারিত সমালোচনা মুখে তা আবার প্রত্যাহার করে নেবে বলে জানিয়েছে৷ যারা চরম দক্ষিণপন্থীদের হামলার শিকার, তাদের জন্যও সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ