মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত
৬ ডিসেম্বর ২০১৭আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত মনে হলেও ইসরায়েলের স্বীকৃত রাজধানী তেল আভিভ থেকে বিতর্কিত জেরুসালেম শহরে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের গভীর প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে৷ কারণ, ভবিষ্যতে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে পূর্ব জেরুসালেম তার রাজধানী হবে – এমনটাই ফিলিস্তিনিদের স্বপ্ন৷ এর আগে কোনো মার্কিন প্রশাসন জেরুসালেমের প্রশ্নে ইসরায়েলের প্রতি এতটা পক্ষপাতিত্ব দেখায়নি, যেমনটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করে দেখালেন৷
নীতিগতভাবে জেরুসালেমেই মার্কিন দূতাবাস থাকার কথা৷ তবে ‘জেরুসালেম এমব্যাসি অ্যাক্ট' নামের আইন অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তেল আভিভ শহরে দূতাবাস চালু রাখতে প্রতি ৬ মাস অন্তর এক ‘ওয়েভার' বা ব্যতিক্রমি সিদ্ধান্তে সাক্ষর করতে হয়৷ শেষ ওয়েভারের মেয়াদ শেষ হবার আগে ট্রাম্পকেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে হতো৷ কিন্তু নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি জেরুসালেমকেই ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন৷ তাঁর মতে, বাস্তবে জেরুসালেম শহরই ইসরায়েলের সরকারের প্রাণকেন্দ্র৷ সেই বাস্তব মেনে নিয়েছেন তিনি৷ তবে আপাতত তাঁকে ওয়েভার সাক্ষর করতেই হবে৷ কারণ, দূতাবাস ভবন নির্মাণ ও কর্মী স্থানান্তর করতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে৷
মঙ্গলবারই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন৷ প্রায় সবাই তাঁকে এই সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, এর ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে হিংসা দেখা দিতে পারে এবং স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে৷ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ ও সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান টেলিফোনে ট্রাম্পকে তাঁদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ কট্টরপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ‘ইন্তিফাদা' বা বিদ্রোহের হুমকি দিয়েছে৷
ট্রাম্পের যুক্তি, এতকাল শুধু তেল আভিভে দূতাবাস রেখে অ্যামেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ব্যর্থ হয়েছে৷ তিনি নিজে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ সেই প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি হবে না৷ রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সীমানা সম্পর্কেও কোনো আগাম বার্তা পাঠানো হচ্ছে না৷
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বের অন্য প্রান্তেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্কসহ অ্যামেরিকার সহযোগী দেশগুলি এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে৷ জার্মানি ও ফ্রান্স এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে৷