মৃত্যুতে উল্লাস: মনোবৈকল্য, নাকি অপরাধ
১৫ জুন ২০২০আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত এই নেতাকে নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করার দায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজাম মুনিরাকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়৷
একই অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে৷
বাংলাদেশে বরাবরই স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা বড্ড নড়বড়ে৷ বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সেই নড়বড়ে স্বাস্থ্যখাতকে এমন ঝাঁকুনি দিয়েছে যে তা এখন প্রায় ভেঙে পড়েছে৷ সাধারণ মানুষতো বটেই, অনেক ক্ষমতাবান এবং নামীদামী মানুষও এ সময় বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন৷
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময় মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ওই সময় ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা কারণে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশার জন্য অনেকেই নাসিমকে দায়ী করেন৷
একজন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে৷ হতে পারে বা ধরে নিলাম, জনমনে এই ক্ষোভ তৈরির দায়ও অনেকটা তারই৷ কিন্তু একজন মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তখন তার মৃত্যু কামনা বা তার মৃত্যুর খবর শুনে বিকৃত উল্লাস বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কতটা মানসিক সুস্থতার লক্ষণ হতে পারে?
যদিও বেরোবি-র বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা এবং শাবিপ্রবি-র শিক্ষার্থী মাহির উভয়ই নাসিমকে নিয়ে লেখা নিজেদের স্ট্যাটাস কিছুক্ষণের মধ্যে সরিয়ে নেন এবং নিজেদের মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷
ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস মুছে দিয়ে পরপর দুইবার দুঃখ প্রকাশও করেন মুনিরা, কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি৷ কারণ, ততক্ষণে তার স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়৷
শনিবার রাতেই রংপুর শহরের সরদারপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়িন্টিফোর ডটকম৷
নাসিমের পরিবারের সদস্যদের প্রতিবাদের কারণেও আরো একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী নাসিমকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক স্ট্যাটাস সরিয়ে নেন৷
মুনিরা এবং মাহির দুইজনের বিরুদ্ধেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে৷ বাংলাদেশে এ আইনের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ বল হয়, সরকার স্বাধীন মত প্রকাশের গলা টিপে ধরতেই এই আইন করেছে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বা সরকার যন্ত্রের সমালোচনা করে অনেকই এ আইনে গ্রেপ্তার, মামলার শিকার, হুমকি ও হনেস্তার শিকার হয়েছেন৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম৷ নিজের অ্যাকাউন্টে স্বাধীনভাবে কিছু পোস্ট করার অধিকার সবাই থাকা উচিত৷ কাউকে উদ্দেশ্য করে বিদ্রুপাত্মক বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ব্যক্তির মানসিক বৈকল্যের চিহ্ন হতে পারে৷ কিন্তু সে কারণে একজনকে অপরাধী বলে অভিযুক্ত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তি একটি গণতান্ত্রিক দেশে কতটা যুক্তিযুক্ত সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে রয়ে যাচ্ছে৷
শামীমা নাসরিন