নির্বাচনকে সামনে রেখে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা
২৭ ডিসেম্বর ২০১৮গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত যে নতুন বেতন কাঠামোর ঘোষণা দিয়েছে সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে এই ডিসেম্বর থেকে৷ সেই কাঠামোকে প্রত্যাখান করে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছিল বেশ কয়েকটি শীর্ষ স্থানীয় গার্মেন্টসের শ্রমিকরা৷ এটিকে বিরোধী দলীয় চক্রান্ত বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক৷
রয়টার্স প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গার্মেন্টস মালিকরা মনে করছেন ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কটকারী রাজনৈতিক দলই এই অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ সেসময় তাদের সৃষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেওয়া বন্ধ করে দেয়৷
তিন পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, গত এক সপ্তাহে ময়মনসিংহসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসে কর্মবিরতিতে যায় শ্রমিকরা৷
সেপ্টেম্বরে সুপারিশকৃত নতুন বেতন কাঠামো চলতি ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে৷ গার্মেন্টস শ্রমিকরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ডিসেম্বর মাসের যে বেতন পাবেন তা নতুন কাঠামো অনুসারে৷ ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার৷ দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি আগের তুলনায় দুই হাজার ৭০০ টাকা বাড়িয়ে নতুন ন্যূনতম মজুরি করা হয়েছে আট হাজার টাকা৷ যা গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে৷ আগে এই মজুরি ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ ২০১৩ সালে প্রথম পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃ্দ্ধি করা হয়৷
তবে শ্রমিকদের দাবি, এটি যথেষ্ট নয়৷ ঢাকার একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক মীম বলেন, ‘‘এই মজুরি ন্যূনতম ১২ হাজার হওয়া উচিত৷ প্রতিনিয়ত আমাদের কাজের চাপ বাড়ছে কিন্তু সে অনুযায়ী বেতন বাড়ছে না৷''
এদিকে গার্মেন্টস সেক্টরের অস্থিরতাকে ঘিরে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে৷ পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা প্রতিবেদন রয়েছে যে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা চলছে৷ তবে এটিকে দমন করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করেছি৷''
বাংলাদেশ পোশাক শিল্প ও রফতানিকারক সংগঠন বিজিএমই-এর প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘পরিস্থিতি শান্ত রাখতেই শ্রমিকদের অনুরোধ করা হয়েছে৷ তাদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে নির্বাচনের পরপরই পুনরায় সরকারকে বেতন কাঠামোতে পরিবর্তনের অনুরোধ জানানো হবে৷''
অ্যাডাম অ্যাপারেলসের মালিক মুকুল জানান, ‘‘বিরোধী দল ইচ্ছা করে এই সময় তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ডিসেম্বর মাস সব সময় পোশাক খাতের ব্যস্ত সময়৷ এই সময় তার প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স, জাপান ও পর্তুগালের বড় বড় অর্ডার নিয়ে কাজ করছে৷ এই মুহূর্তে বিরোধী দল চক্রান্ত করে কাজ ব্যহত করছে৷'' তিনি এও বলেন আমরা শুরু থেকেই সরকারকে বেতন বাড়ানোর চাপ দিয়ে আসছি৷ তারপরেও গত সোমবার আন্দোলনরত শ্রমিকরা তার গার্মেন্টসে হামলা চালায়৷
মুকুল গার্মেন্টসের মেশিন অপারেটর মোহাম্মদ মুরাদ জানান, ‘‘নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার ভয় আগে থেকেই ছিল৷ তবে পরিস্থিতি এখনও খারাপ হয়নি৷''
এদিকে এ অস্থিরতা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান খানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান৷
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘‘দাবি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর পরও অস্থিরতার কোনও কারণ দেখছি না৷ পোশাক খাতকে ঘিরে বরাবরই অস্থিরতার চেষ্টা করে আসছে বিরোধী দল৷ এবারও সেরকম কিছু করতে চেষ্টা করছে৷''
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্জিত হয় এই পোশাক খাত থেকে৷
এফএ/এপিবি (রয়টার্স)