1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের মতো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করেছে৷ রাষ্ট্রীয় খাতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি জানিয়েছে তারা৷

https://p.dw.com/p/34sc2
আন্দোলনের ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com

বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়৷ ঘোষণা অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ২০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷

এর আগে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছিল৷  বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ মজুরি বোর্ড বলছে, এবার মোটের ওপর ৫১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হয়েছে৷

কিন্তু ন্যূনতম এই মজুরি ঘোষণার পরই বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করে৷ বৃহস্পতিবার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার সময়ই বিক্ষোভ করে তারা৷ সংগঠনগুলো আগে থেকেই সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা দাবি করে আসছিল৷

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আট হাজার টাকা কেন, ১৬ হাজার টাকায়ও এখন চার জনের একটি পরিবার চালানো সম্ভব নয়৷ পোশাক খাত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় করে৷ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি প্রধান খাতের একটি এই সেক্টর৷ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা৷ জাহাজ ভাঙা শিল্পে ১৬ হাজার৷ সেখানে প্রধান রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের এত কম কেন?’’

সামনে নির্বাচন সেকারণে সরকার মালিকদের একটা উপঢৌকন দিয়েছে: জলি তালুকদার

তিনি বলেন, ‘‘আমরা চার সদস্যের একটি পরিবারের হিসাব করে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছিলাম দুই বছর আগে৷ আর দুই বছরে জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়েছে৷ অন্যান্য খরচও বেড়েছে৷ দুই জনের পরিবারের জন্যও এই আট হাজার টাকা এখন কিছুই না৷’’

জলি তালুকদার আরো বলেন, ‘‘সরকার এবার মালিকদের সঙ্গে একটা আঁতাত করেছে৷ সামনে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের কারণে মালিকদের একটা উপঢৌকন দিয়েছে৷ মালিকদের খুশি করেছে আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে৷ আজ (শুক্রবার) সকালে আমরা ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশ করেছি৷ বিকেলে সমাবেশ হয়েছে নারায়ণগঞ্জে৷ সারাদেশে আমাদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত থাকবে৷ আমরা আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি মানি না৷ এটা কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা করতে হবে৷’’

ন্যূনতম মজুরি যা ঘোষণা করা হয়েছে তা বাসা ভাড়া দিতেই চলে যাবে: সিরাজুল ইসলাম রনি

বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস এপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ন্যূনতম মজুরি নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও তার দাবি একইভাবে অন্যান্য গ্রেডের বেতনও যেন বাড়ানো হয়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে সপ্তম গ্রেড হেলপারদের৷ এটা সর্বনিম্ন৷ শিক্ষানবিশ গ্রেড৷ পরবর্তী গ্রেডগুলোর বেতন কী হবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি৷ আমাদের দাবি পরবর্তী গ্রেডগুলো যেন সামঞ্জস্য রেখে খুব দ্রুতই ঘোষণা করা হয়৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ন্যূনতম মজুরি যা ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাসা ভাড়া দিতেই চলে যাবে৷ তবে এই পোশাক কারখানায় এখন অপারেটরের সংখ্যা খুবই কম৷ অটোমেটিক মেশিন আসায় অপারেটর তেমন লাগে না৷ সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ষষ্ঠ গ্রেডে৷’’

তৈরি পোশাক কারখানা মালিকেদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার মজুরি বেশি বাড়ানো হয়েছে৷ প্রথমবার ১৩শ' ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি করেছিলাম ৩ হাজার টাকা৷ এরপর ২২শ' বাড়িয়ে করেছিলাম  ৫ হাজার ৩শ'৷ আর এবার ২৭শ' টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা৷ গত কয়েক বছর ধরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি নেই৷ রপ্তানি বাড়ছে না৷ বেতন বাড়ালেই তো হবে না, বেতন তো দিতে হবে৷’’

যারা এই ন্যূনতম মজুরি মানেনা তারা দেশের কল্যাণ চায়না: সিদ্দিকুর রহমান

তিনি বলেন, ‘‘এই ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা মজুরি একদম শিক্ষানবিশ পর্যায়ে৷ তারা আমার মেশিন নষ্ট করে কাজ শিখবে৷ বাংলাদেশে একজন মাষ্টার্স পাশ তরুণও প্রথমে ১২ হাজার টাকার বেশি বেতনের চাকরি পায় না৷ বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘যারা এই ন্যূনতম মজুরি মানে না, তারা দেশের কল্যাণ চায় না৷ তারা হততালি নিয়ে, বাহবা নিয়ে নেতা হতে চায়৷ কিছু বাম নেতা এটা মানে না৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ন্যূনতম মজুরির সাথে সমন্বয় রেখে অন্যান্য গ্রেডের বেতনও বাড়ানো হবে৷ এটা নিয়ে নতুন করে দাবি করার কিছু নেই৷

প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ:

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নূন্যতম মজুরি ৮ হাজার টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন৷ দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট এবং গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন৷

গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকার ঘোষণা অন্যায্য উল্লেখ  করে মজুরি পুনর্বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের  মজুরির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নূন্যতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে৷

নূন্যতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন বলেছে, বর্তমান বাজারে ৮ হাজার টাকা দিয়ে কারো পক্ষে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়৷

৮ হাজার টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন৷ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানান৷ তাঁরা বলেন, সরকার মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে প্রহসনমূলক মজুরি ঘোষণা করেছে৷

প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, সরকার ৮ হাজার টাকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে মূল মজুরি ৪১০০ টাকা৷ ২০১৩ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মূল মজুরি ছিল ৩০০০ টাকা৷ ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ৫ বছর পরে বিদ্যমান মূল মজুরি ৩৮২৮ টাকা, অর্থাৎ শ্রমিকদের মূল মজুরি মাত্র ২৭২ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ মজুরি বোর্ড শ্রম আইন কিংবা আইএলও কনভেনশনে মজুরির মাপকাঠিকে কোনো মূল্য দেয়নি বলেও মনে করেন তাঁরা৷