নির্মাণকাজে কংক্রিটের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪এজন্য তারা প্রকৃতির দিকে হাত বাড়াচ্ছেন৷ যেমন ফাঙ্গাস বা ছত্রাক৷
কিছু গাছ একসঙ্গে বেড়ে উঠে কীভাবে অবকাঠামো গড়তে পারে? ২০ বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন স্থপতি ফার্দিনান্দ লুডভিগ৷ তিনি ভবন ও গাছের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে চান৷ সে কারণে শহরের মধ্যে একধরনের ট্রি-হাউস নির্মাণ করছেন তিনি৷
গাছ দিয়ে ভবন তৈরি করলে কেমন হতে পারে তা তুলে ধরতে ১২ বছর আগে জার্মানিতে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করেছিলেন লুডভিগ৷ ‘প্লেন ট্রি কিউব' নামের এই প্রকল্পটি এখন ১০ মিটার উঁচু হয়েছে৷
ভবনের ছয়টি তলার প্রতিটিতে একই সময়ে টবে প্লেন গাছ লাগানো হয়েছিল৷ স্থপতি ইয়াকব রাউশার বলেন, ‘‘প্লেন গাছগুলো বেড়ে ওঠার সময় একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে তাদের একসঙ্গে আরও বাড়তে দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের৷''
গাছগুলো বড় হওয়ার পর টব সরিয়ে নেওয়া হবে৷ এক হাজারের বেশি প্লেন গাছ লাগানো হয়েছে, কারণ, রোগ বা ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে অনেক চারা মারা গেছে৷
কয়েক বছর পর গাছের শীর্ষ অংশগুলো একসঙ্গে জড়ো হয়ে ছাদ তৈরি হবে৷
অল্পসময়ে নির্মাণ করতে চাইলে ফাঙ্গাস ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এই ইগলু বাড়িটি কাঠ ও ফাঙ্গাসের প্যানেল দিয়ে তৈরি৷ উপরের অংশ ধরতে নরম হলেও প্যানেলগুলো শক্ত৷
নরম ফাঙ্গাস থেকে শক্ত উপকরণ কীভাবে পাওয়া সম্ভব? এক্ষেত্রেও প্রকৃতি অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে৷
টিন্ডার ফাঙ্গাস পর্ণমোচী গাছে জন্মাতে পছন্দ করে৷ নিজেকে কাঠের সঙ্গে আটকে রাখে৷
জীববিজ্ঞানী লিজা স্টেলৎসার ফাঙ্গাসের ঘর তৈরিতে সহায়তা করেছেন৷ গবেষণাগারে তিনি টিন্ডার ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করেছেন৷ শক্ত হওয়ায় করাত দিয়ে কাটতে হয়েছে৷ স্টেলৎসার বলেন, ‘‘ভবন তৈরির জন্য এই ফাঙ্গাস দারুণ৷ কারণ ভূগর্ভে জন্মানো ফাঙ্গাসের শিকড়ের অবকাঠামো মাইসেলিয়াম, বিভিন্ন অবশিষ্টাংশকে একত্রিত করে, এবং এই সংযোগের কারণে শক্ত উপকরণ তৈরি হয়৷''
এ কারণে ডেভেলপারদের কাছে বাড়ি তৈরির জন্য আদর্শ উপকরণ হয়ে ওঠে ফাঙ্গাস৷ বিজ্ঞানী, স্থপতি ও শিল্পীরা ফাঙ্গাসের কোষের সঙ্গে নানান উপকরণ মেশান৷ এসব উপকরণের মধ্যে অর্গানিক বর্জ্য, যেমন কাঠের সরু টুকরো রয়েছে৷
এরপর মিশ্রণকে চাপ দিয়ে একটি আকার দেয়া হয়৷ কয়েক সপ্তাহ পর গরম করে ফাঙ্গাস দূর করা হয়৷ এরপর উপকরণটা কঠিন হয়৷ এটি ইতিমধ্যে ইনসুলেশনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তবে নির্মাণকাজে এর ব্যবহার নতুন৷
ইউরোপে কিছু ব্যক্তি মাটি নিয়ে কাজ করছেন৷ যেমন অস্ট্রিয়ার মার্টিন রাউখ মাটি দিয়ে কয়েকটি বড় প্রকল্প করেছেন৷ তবে ইটের ভবন ইউরোপে বিরল৷
‘ক্লোজার টু নেচার' প্রদর্শনীর কো-কিউরেটর নিলস ফিলিপি বলেন, ‘‘এটা পশ্চিমা বিশ্বের একটি খারাপ দিক যে, আমরা নির্মাণকাজে আর মাটি ব্যবহার করি না৷ উনিশ শতকে নির্মাণকাজের শিল্পায়নের সময় মাটির পরিবর্তে মূলত কংক্রিট ব্যবহার শুরু হয়৷ বিশ্বের অন্য অঞ্চলে এখনও মাটি ব্যবহার হচ্ছে৷ বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ মাটির বাড়িতে বাস করেন৷ মাটি দিয়ে কীভাবে ভবন তৈরি করতে হয় আমরা তা ভুলে গেছি৷''
নির্মাণ উপকরণ হিসেবে প্রকৃতিতে আরও কিছু আছে, যেমন সিউইড৷ এটিও নির্মাণকাজের জন্য উপযোগী৷ গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও প্রকল্পগুলো প্রমাণ করছে, কীভাবে স্থাপত্য ও ভবন নির্মাণ পরিবেশ ও মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে৷
ইউলিয়া মিলকে/জেডএইচ