নূরকাহিনি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
২৭ মে ২০১৯কারণ, তাঁকে মার দেওয়ার প্যাটার্নটা মোটামুটি একরকম৷ প্রথমে পুলিশ অনুমতি দেবে না, তা ইফতার হোক, সংবাদ সম্মেলন বা যে-কোনো জমায়েত৷ তারপর ছাত্রলীগের কর্মী-নেতারা এসে তাঁকে মেরে-ধরে উঠিয়ে দেবে বা শুইয়ে দেবে৷ পরে বলবে, হালকা ধাক্কাধাক্কি বা সাজানো নাটক৷ নূরের মার খাওয়া, অজ্ঞান হওয়া সবই নাটক!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আপনি কোনটা বিশ্বাস করেন? ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা বগুড়ায় তাঁকে মারা হয়নি, নাটক বা হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে, সেটা? নাকি, ডাকসু ভিপি হওয়ার পর আপনি নূরকে ডেকে নেওয়ার পর সে যে, আপনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে আপনার আশীর্বাদ চাইলো, সেটা? আমার কেন জানি মনে হয়, কেউ একজন আপনাকে বুঝিয়েছে যে, সরাসরি সরকারি দলের সমর্থন না করলেই সে আপনার শত্রু; আর কোনো-না-কোনোভাবে শত্রু আপনাকে দমন করতে হবে৷ আর আপনার শত্রু দমনের প্রাথমিক দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ৷
নূর ডাকসুতে জিতে অনেককে চমকে দিয়েছে, এই সময়ে বিরোধীপক্ষের কেউ কোনো নির্বাচনে জিতে যাবে, সেটি কেউ বিশ্বাস করে না৷ কিন্তু সরকারের বাইরের মতও যে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে আছে এবং তাদের কেউ কেউ যে কোথাও কোথাও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো ধৃষ্টতাও দেখিয়ে ফেলেছেন, এটি বোধ হয় আপনার আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণদের বিশ্বাস হচ্ছে না৷ অনেকে আবার অন্য ষড়যন্ত্রের কথাও বলছেন, বলছেন, নূর আপনাদেরই লোক৷ তাঁকে মারতে মারতে ভিপি করা হয়েছে, এরপর হয়তো তাঁকে এমপি বা মন্ত্রীও করা হবে৷
হবে হয়তো, নূরকে হয়তো মন্ত্রীই করা হবে৷ কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি খেয়াল করে দেখুন, আমরা আপনাকে কীরকম দেখি? আর সেটা একটা ‘গণতান্ত্রিক সরকারের' প্রধান হিসেবে আপনার জন্য সন্মানজনক কিনা৷
নূরকে মারধর করা হয়ত খুব ক্ষুদ্র একটা বিষয়, অনেক বড় একটি দেশ আপনি চালাচ্ছেন, কিন্তু কেন জানি ছোট এই ঘটনাটিকেই আমার মনে হচ্ছে, পুরো দেশের এই সময়ের প্রতিচ্ছবি৷
আইন-কানুন বা সংবিধান নয়, আপনি যাকে, যেভাবে রাখবেন, তাকে সেভাবেই থাকতে হবে, যেতে হবে৷