নেতৃত্বের ব্যর্থতায় খালেদার মুক্তির আন্দোলন
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০দুই বছর ধরে কারগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া৷ ২০১৮ সালের আট ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ সেদিনই তাকে জেলে পাঠানো হয়৷ পরে এই মামলায় দুদকের পুনর্বিবেচনার আবেদনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট৷ একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত৷ সব মিলিয়ে দুই মামলায় খালেদা জিয়া ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে দুই বছর ধরে কারাগারে আছেন৷
মোট ৩৪টি মামলার ৩২টিতেই খালেদা জিয়া জামিনে আছেন৷ কিন্তু এই দুটি মামলায় জামিন মিলছে না৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগেও তার জামিন নাকচ হয়েছে৷ আর অর্ফানেজ ট্রাস্টের মামলায় শাস্তি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে জামিন আবেদনের প্রক্রিয়া এখনো এগোয়নি৷
‘আইনি লড়াইয়ে ত্রুটি নেই’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগে শেষ পর্যন্ত আমরা তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জামিন চেয়েও পাইনি৷ অথচ একই ধরনের মামলায় অন্যদের জামিন দেয়া হয়৷ আর অর্ফানেজ ট্রাস্টের মামলায় অন্যায়ভাবে তার শাস্তি বাড়ানো হয়েছে৷ আমরা আপিল করেছি৷ আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে৷’’
খালেদা জিয়া এখন আর তার মামলার শুনানির সময় আদালতে যান না৷ গত বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে আছেন তিনি৷ উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পছন্দের হাসপাতালে নেয়ার আবেদনও করা হয়েছে৷ প্যারোলে মুক্তি নিয়েও কথা হয়েছে৷ তবে তার পরিবারের সদস্য এবং দলের মধ্যে মুক্তির পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে ৷ খালেদা জিয়ার পরিবার চাইছে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে৷ আর বিএনপি বলছে, তিনি জামিনে মুক্তি নিয়ে বিদেশে যাবেন কিনা সেটা তিনিই সিদ্ধান্ত দেবেন৷
কায়সার কামাল বলেন, ‘‘আমাদের আইনগত লড়াইয়ে কোনো ত্রুটি নাই৷ খালেদা জিয়াকে আসলে কারাগারে রাখা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে৷ যে দুটি মামলায় তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে ওই মামলা দুটিও ভিত্তিহীন৷’’
নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আন্দোলন গড়ে ওঠেনি
খালেদা জিয়াকে কারাগারের পাঠানোর পর বিএনপি তার মুক্তির দাবিতে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি৷ এমনকি ২০১৮ সালে তাকে যেদিন কারাগারে পাঠানো হয় সেদিনও বড় ধরনের কোন প্রতিবাদ হয়নি৷ ২০১৮ এবং ১০১৯ সালের কর্মসূচি বিশ্লেষণে দেখা যায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সীমাবদ্ধ ছিল বিক্ষোভ, প্রতীকী অনশন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে৷ রোগমুক্তির জন্য দোয়া মোনাজাতেরও আয়োজন করেছে দলটি৷ কিন্তু এসব কর্মসূচিতে তারা জনসমাগম ঘটাতে পারেনি৷ এ নিয়ে তৃণমূলে এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে৷
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলেরও সদস্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় দল৷ ম্যাডাম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ম্যাডাম কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে৷ বাংলাদেশে যারা আছেন তাদের মধ্যে সাহসী নেতৃত্বের অভাব আছে৷ এজন্য খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷ সবাই নিজ নিজ অসুবিধার কারণে কোনো সাহসী ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ওয়ান ইলেভেনের সময় দুর্নীতির মামলা আছে৷ মামলাগুলো শেষ পর্যায়ে আছে৷ তাই তারা অশঙ্কা করছেন সরকারকে তারা অখুশি করলে যেকোনো সময় হাজতে চলে যেতে পারেন৷ ফলে যে ধরনের আন্দোলন হওয়ার কথা ছিলো তা গড়ে তুলতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি৷’’
এই ধরনের নেতৃত্বে ভবিষ্যতে বড় কোনো আন্দোলনের সম্ভাবনাও দেখেন না তিনি৷ তিনি তাই খালেদা জিয়ার কারাবাস আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নেতারা সাহসী হয়ে মাঠে নামলে কর্মীরাও নামত৷ কিন্তু নেতৃত্ব দিয়ে আমি ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বড় কোনো আন্দোলনের আশা দেখিনা৷’’
‘সফল আন্দোলন বলতে কি বুঝায়?’
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ মনে করেন আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার জন্য বিএনপির কোনো দায় নেই৷ সরকারের‘দমন-পীড়নের’ কারণেই আন্দোলন করা যায়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘সফল আন্দোলনের মানে কী? এর ব্যাখ্যা কী? যে দেশে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল না হয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হয়, যে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোনো কিছুই নাই, সেই পরিবেশে কী হতে পারে? তাই হচ্ছে বাংলাদেশে৷’’
তার মতে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার সাথে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া সরাসরিভাবে সম্পর্কিত৷