নেপালের ‘সিংগিং নান’ দোলমা
৩১ ডিসেম্বর ২০১১জন্ম তিব্বতি পরিবারে৷ বড় হয়েছেন কাঠমাণ্ডুর এক বৌদ্ধ আশ্রমে৷ ছোটবেলায় বাবা প্রায় প্রতিদিন তাঁকে মারধর করতেন৷ তাই ১৩ বছর বয়সে পালিয়ে চলে যান ঐ আশ্রমে৷ সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান তুলকু উরজ্ঞান রিনপোচে'কে৷ তাঁর কাছে গানের তালিম নেন দোলমা৷ তবে সেই গান হলো ধর্মীয় সংগীত৷ আশ্রমে যারা যান, তাদের জন্য গাওয়া হয় এই গান৷
এভাবেই চলছিল৷ আশ্রমে একদিন দোলমার গান শুনে তাঁকে অ্যালবাম বের করার প্রস্তাব দেন মার্কিন গায়ক স্টিভ টিব্বেটস৷ শুরুতে এই প্রস্তাবে ইতস্তত করলেও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেন শিক্ষক রিনপোচে'র সঙ্গে৷ তাঁর শিক্ষক এই সুযোগটা নেয়ার পরামর্শ দেন দোলমাকে৷ এরপর ১৯৯৮ সালে অ্যামেরিকায় যান গান গাইতে৷ সঙ্গে বের হয় অ্যালবাম৷ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা৷ ডাক পড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও৷
একসময় কনসার্ট করে বেশ ভাল অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন দোলমা৷ সেই টাকা দিয়ে তিনি ২০০৫ সালে একটি স্কুল গড়ে তোলেন৷ প্রায় ১০০ নেপালি মেয়ে সেখানে পড়ালেখা শিখছে৷ এদের বয়স সাত থেকে ২৩ এর মধ্যে৷ এদের বেশিরভাগই এসেছে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে৷ যাদের বাবা-মা মনে করেন মেয়েদের শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই৷
স্কুল প্রতিষ্ঠা ছাড়াও নেপালি মেয়েদের কল্যাণ হয় - এমন সব প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করে থাকেন দোলমা৷ উল্লেখ্য, ১৩ বছর বয়সে বাবা-মা'র কাছ থেকে পালিয়ে আসার পর থেকে আর লেখাপড়া হয়নি দোলমার৷ তবে আশ্রমে বিদেশিদের সঙ্গে নিয়মতি যোগাযোগের কারণে ইংরেজিটা শিখে গেছেন৷
২০০৮ সালে ফ্রেঞ্চ ভাষায় দোলমার আত্মজীবনী বের হয়৷ এরপর নেপালি সহ ১২টি ভাষায় তার অনুবাদ বের হয়৷
তবে পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও নিজের দেশে ততোটা পরিচিতি ছিলনা দোলমার৷ তাই ২০০৫ সালে নেপালে একটি অ্যালবাম বের করেন তিনি৷ সেই অ্যালবামের গান ‘ফুলোকো আঁখমে'৷ বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘ফুলের চোখে'৷ অ্যালবামটা বেশ জনপ্রিয়তা পায়৷ এরপর থেকে নেপালেও তিনি তারকার মর্যাদা পাচ্ছেন৷ দোলমা বলেন, ‘‘এখন রাস্তায় লোকজন আমাকে দেখলে বেশ খুশি হয়৷ এটা আমার জন্য একটা আশীর্বাদ৷ কেননা ক্ষণিকের জন্য হলেও আমি মানুষজনকে আনন্দ দিতে পারছি৷''
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ