1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানের সংগীতে শান্তির আহ্বান

৩১ ডিসেম্বর ২০১১

পাকিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক গুলজার আলমের গানও শুরুর দিকে শুধু প্রেমের কথাই বলতো৷ তবে ইদানিং গানের কথায় পরিবর্তন এসেছে৷ আত্মঘাতী হামলা, সন্ত্রাসীদের হামলা, শান্তি প্রতিষ্ঠা – এগুলোই উঠে এসেছে তার গানের কলিতে৷

https://p.dw.com/p/13c0P
পাকিস্তানের নতুন ব্যান্ড নাম পাংক ইসলামছবি: Omar Majeed

গুলজার আলম শান্তি এবং আশার বাণী নিয়ে গান শোনালেও তিনি সারাক্ষণই ভয়ে থাকেন৷ কারণ এ পর্যন্ত তাঁর ওপর তিনবার হামলা চালিয়েছে তালেবান৷ প্রতিবারই তাঁকে মেরে ফেলাই ছিল উদ্দেশ্য এবং প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন৷ গুলজার আলম কখনোই এক জায়গায় বেশিদিন থাকেন না৷

অথচ একসময় তিনি ভালবাসার গান লিখতেন, গাইতেনও৷ কিন্তু পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থা পাল্টেছে৷ দশ বছর আগে যে পাকিস্তানকে তিনি চিনতেন, জানতেন আজ সেই পাকিস্তান নেই৷ পাকিস্তানের চরম পরিবর্তনগুলো উঠে এসেছে তার গানে৷ আত্মঘাতী হামলা, সন্ত্রাসবাদ, তালেবান জঙ্গিদের হামলা – এসবই তিনি তুলে ধরেন গানের মাধ্যমে৷ তাঁর একটি গানে তিনি বলছেন,‘‘ও পেশাওয়ার, আমি অসহায়ভাবে দেখি তোমার ভালবাসার মানুষের রক্ত বৃষ্টির মত ঝড়ছে৷ কাঁদতে, কাঁদতে আমি তোমার জানাজা পড়ি৷'' এই গানগুলো গুলজার আফগান সীমান্তের কাছে গেয়েছেন৷

তালেবান জঙ্গিদের কাছে নাচ-গান অনৈসলামিক৷ তাই গানের ক্যাসেট যেসব দোকানে বিক্রি হয় সেই দোকানগুলোয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা৷ নৃত্যশিল্পী এবং অনেক গায়ক-গায়িকাদের মেরে ফেলা হয়েছে৷ অনেককে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে৷

Pakistan Musik Youtube Beygairat Brigade
পাকিস্তানি ব্যান্ডগুলো দেখা যায় ইউটিউবেওছবি: YouTube

২০০৪ সালে গুলজার আলম কোয়েটা প্রদেশে চলে যান৷ সে সময় কোয়েটা ছিল শান্ত একটি প্রদেশ৷ সেখানে তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েন৷ একটি চলন্ত গাড়ি এসে ধাক্কা দেয় গুলজার আলমকে৷ তার ডান পায়ে স্টিল বসানো এবং তিনি সবসময়ই ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটেন৷ এই দুর্ঘটনার জন্য তিনি সন্ত্রাসীদেরই দায়ী করেন৷ পেশাওয়ারে তিনি ২০০৮ সালে ফিরে যান৷ সে বছররের অক্টোবর মাসে বন্দুকধারীরা তার গাড়িতে গুলি করে৷ তিনি বেঁচে যান দ্বিতীয়বারের মত৷

গুলজার জানান,‘‘আমি যখন গান গাই তখন আমি দেখি শ্রোতারা কাঁদছে৷ আমি আমার গানের মাধ্যে দিয়ে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি৷'' বর্তমানে তিনি বাস করেন একটি বাড়ির বেসমেন্টে৷ তাঁর স্ত্রী এবং ছয়টি সন্তান নিয়ে৷ বাড়ির গেটে কোন নাম লেখা নেই৷ আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন আর কোন কনসার্ট করি না৷ আমি প্রায় প্রতিদিনই কয়েক ডজন হুমকি পাই এসএমএস-এ৷ আমাকে গান গাওয়া ছাড়তে হবে– এরকম লেখা থাকে৷''

আরেকজন গায়িকা সিতারা ইউনুস৷ এ বছর ইউটিউবে তিনি তাঁর গাওয়া একটি গান ছেড়েছেন৷ তালেবানি হুমকিতে বীতশ্রদ্ধ এই গায়িকা তাঁর গানে বলছেন,‘‘আমি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী৷ আমি সবকিছুই জোর করে করি৷ আমার বিচরণ সর্বত্র৷'' এই গানটি পস্তু ভাষার ছবি ‘শাবার মে তামাম শো' থেকে নেয়া৷ এর অর্থ হল ‘আমি আমার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি৷'

Nusrat Fateh Ali Khan
বিখ্যাত পাকিস্তানি গায়ক নুসরাত ফতেহ আলী খানছবি: AP

সিতারা ইউনুস আরো বেশ কিছু গান গেয়েছেন৷ এর মধ্যে আরেকটি হল,‘‘আমকে অনুসরণ করো না, আমি বিশ্বাসঘাতক, আমি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী৷ আমি মানুষের হৃদয় এবং স্বপ্ন ভেঙে বেড়াই৷'' এই গানটিও একটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে৷

অনেক গায়ক-গায়িকাই জীবন বাঁচাতে গানের ভুবন থেকে সরে এসেছেন৷ তারা যে একসময় গান গাইতেন সেকথাও এখন আর উচ্চারণ করেননা৷ অনেক দোকানেই লুকিয়ে গানের ক্যাসেট এবং সিডি বিক্রি করা হয়৷ তারাও জানে, যদি তালেবান জানতে পারে তাহলে তারাও বেঁচে থাকবে না৷

পেশাওয়ারে সেপ্টেম্বর মাসে একটি সিডির দোকান মোটারসাইকেল বোমায় উড়িয়ে দেয়া হয়৷ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং আরো ২৮ জন গুরুতর আহত হয়৷ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে গানের ক্যসেট এবং সিডি বিক্রির হাজার হাজার দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷

পাকিস্তানের আরেক জনপ্রিয় গায়ক আলি আজমত একটি গান গেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ গানটির টাইটেল ‘বোম ফাটা' অর্থাৎ বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে৷ এসব গান শুধু পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যাকেই তুলে ধরছে না৷ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমস্যার কথাও বলছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য