ন্যাটোর সৈন্য সরছে না আফগানিস্তান থেকে
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১আফগানিস্তান থেকে এখনই সরছে না সৈন্য। জানিয়ে দিলেন ন্যাটোর প্রধান। ন্যাটোর মিলিটারি অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যৌথ বাহিনী কবে আফগানিস্তান থেকে সরবে, তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০২০ সালে অ্যামেরিকা এবং তালেবানের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা মেনে চললে ১ মে-র মধ্যে ন্যাটোর সৈন্য আফগানিস্তানের মাটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু ন্যাটোর বক্তব্য, তালেবান ওই চুক্তির সমস্ত বিষয় মেনে চলেনি। ফলে সৈন্য সরানোর মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
প্রেসিডেন্ট কালের একেবারে শেষ পর্বে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই অ্যামেরিকা তাদের সৈন্য আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেবে। যদিও ট্রাম্পের ওই ঘোষণার সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি ন্যাটো। ন্যাটো জানিয়েছিল, যৌথ বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সৈন্য অ্যামেরিকার। তারা সৈন্য সরিয়ে নিলে এতদিনের মিশন বিফল হবে। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে অবশ্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। তারই মধ্যে ইউরোপের একাধিক দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যাটো প্রধান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন স্টোলটেনবার্গ। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ন্যাটো অনেকগুলি বিষয় নিয়ে চিন্তিত। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপনের জন্য এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেছে ন্যাটো। সে কারমেই সেখানে যৌথ বাহিনীর সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। গত দুই দশকে লাখ লাখ অর্থ খরচ হয়েছে। এখন যদি দ্রুত সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে মিশন সফল হবে না। এতদিনের পরিশ্রম বিফলে যাবে। সে কারণেই সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ন্যাটো প্রধানের বক্তব্য, ২০২০ সালে অ্যামেরিকার সঙ্গে আফগানিস্তানের শান্তি চুক্তি সই হয়েছিল। সেখানে ২০২০১ সালের ১ মে-র মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল। তালেবান জানিয়েছিল, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। দেশে যাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়েও তারা আগ্রহ দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। গত ডিসেম্বরে কাবুলে শেষ বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটায় তালেবান। যেখানে মৃত্যু হয় ডেপুটি গভর্নরের। তারপরেই মার্কিন ফোর্স প্রত্যাহারের বিষয়টিও সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়। ন্যাটোর বক্তব্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি এখনো আসেনি আফগানিস্তানে। শান্তিও সুরক্ষিত হয়নি। ফলে আপাতত ফোর্স সরানো হবে না।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ন্যাটোর প্রধানকে সমর্থন করেছেন। ডিডাব্লিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এখন সেনা সরিয়ে নিলে ইউরোপে জঙ্গি আক্রমণের সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। ফলে আপাতত সেনা সরানোর প্রশ্নই ওঠে না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশই জানিয়েছে, আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সে জন্য যৌথ বাহিনী কাজ চালিয়ে যাবে। রাজনৈতিক সমাধানসূত্রও খোঁজা হবে।
তবে ১ মে-র মধ্যে ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরে না গেলে তালেবান ফের আক্রমণাত্মক হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ন্যাটো প্রধান জানিয়েছেন, সেই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করা হবে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)