নারীর চোখে বিশ্ব দেখা
২৪ এপ্রিল ২০১৪তাঁর মতে, উঁচু পদে পৌঁছানো নারীরা তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে সব সময় উচ্চকণ্ঠ হন না, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ না বাড়ার পেছনে একটি অন্যতম কারণ৷
নারী সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুকে উৎসাহ যোগাতে এবং অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে আন্দোলনের রূপ দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে গত বছর জুন মাসে যাত্রা শুরু করে অনলাইন পোর্টাল – উইমেন চ্যাপ্টার৷
সুপ্রীতি ধর বলেন, উইমেন চ্যাপ্টার প্রতিদিনের নিউজ পোর্টাল নয়৷ ‘সোশ্যাল অ্যাকটিভিজম'-এর জায়গা থেকে এর শুরু৷ নারীর অধিকার, নারীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যে আন্দোলন – সেসব বিষয় তুলে ধরতেই এ পোর্টাল৷
‘‘আসলে আমি নিজেও তো একজন অ্যাকটিভিস্ট, সাংবাদিক অ্যাকটিভিস্টও বলা যায়৷ সেই জায়গা থেকে আমার লক্ষ্য ছিল একটা কিছু করবো৷ এখনো যে সেটা করতে পেরেছি, তা নয়৷ তবে মাত্র তো আট মাস হলো৷ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি লেখার মাধ্যমে, সংবাদের মাধ্যমে নারীদের ইস্যুগুলো তুলে ধরার জন্য৷''
‘পরিবর্তনে নারী, সিদ্ধান্তে সমান অংশীদার' – এই স্লোগান নিয়ে কাজ করছে উইমেন চ্যাপ্টার৷ অবশ্য অল্প সময়ে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন না সুপ্রীতি৷
তিনি বলেন, ‘‘এক দিনে তো হবে না৷ নারী আন্দোলন আমাদের দেশে অনেক আগে থেকে চলে আসছে৷ খুব যে পরিবর্তন হয়েছে তা নয়৷ তবে এখন নারীদের কণ্ঠ আমরা শুনতে পাই৷ আমরাও চেষ্টা করছি৷ আমি অবশ্য একেবারেই ‘নভিস' এই ক্ষেত্রে৷''
কীভাবে আসবে সেই পরিবর্তন?
সুপ্রীতির কথায়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নারী অধিকার নিয়ে স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ খুব বেশি নেই৷ তাই ইন্টারনেটের এই যুগে সেই সংকীর্ণ পথ ভেঙে উইমেন চ্যাপ্টার নারীদের জন্য আরো জায়গা তৈরি করতে চায়৷
‘‘দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখিতে একটা জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব – আমার দীর্ঘদিনের আন্দোলনেও আমি এটা দেখেছি৷ লেগে থাকলে ওই জায়গাটায় পৌঁছানো যায়৷''
উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক মনে করেন, আগে বাংলাদেশে নারী আন্দোলন অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল৷ কিন্তু গত দুই দশকের রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো সব জায়গাতেই প্রভাব ফেলেছে৷
‘‘১৯৭৬ সালের পর থেকে নারী আন্দোলনেরও এনজিওকরণ হয়েছে৷ এটা বললে কিন্তু নারী নেত্রীরা ক্ষেপে যান৷ তাঁরা এনজিওর বাইরে গিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারেন না৷ একটা কিছু ঘটলে তাঁরা মানববন্ধন করেন৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে মানববন্ধনে বিশ্বাসী নই৷....আমাকে লিখতে হবে, লেখার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে হবে৷''
সুপ্রীতি বলেন, যাঁরা লেখালেখি করছেন, বা চেষ্টা করছেন, তাঁদের পেছনে আরো দশজন করে আছেন, যাঁরা তাঁদের কথা শোনেন৷ দশটা না হোক, দুটো মানুষকেও যদি এই লেখনীর মাধ্যমে সচেতন করা যায়, তাহলেও যে সমাজে অনেক বেশি প্রভাব রাখা সম্ভব৷
সুপ্রীতি ধর নিজে সাংবাদিকতায় আছেন অনেক দিন ধরে৷ তাঁর মতে, বাংলাদেশে মূলধারার গণমাধ্যমে নারীরা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি ‘দৃশ্যমান'৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কতটা বেড়েছে – সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
‘‘তারা বলে যে, তেমন নারী নাকি তারা পায় না৷ উঠে আসার যে ‘স্ট্রাগল', সব মেয়েরা সেটা নিতে পারে না, সবাই সেটা করতে পারে না – এটা ঠিক৷ আবার উঠে যে আসছে না, তাও নয়৷ কিন্তু এই পথটা খুবই কষ্টকর৷ যখন সে উপরে ওঠে, যতটুকু উপরে ওঠে, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করে৷ কারণ যে কোনো সময় পিছলে পড়তে পারে৷ এ কারণে হয়কি, তারা তাদের ‘ভয়েস রেইজ' করে না৷ এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি৷''
যে নারীরা ইতিমধ্যে একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, তাঁরা পরিস্থিতি বদলনোর চেষ্টা করছেন – এমন খবরও খুব বেশি পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন সুপ্রীতি৷
অনৈতিক ব্যবহার বা সহিংসতার শিকার নারীদের, বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের সহায়তায় একটি ‘সাপোর্ট সেন্টার' চালু করার পরিকল্পনাও উইমেন চ্যাপ্টারের রয়েছে৷
যে নারীরা গণমাধ্যমের কাজ থেকে ছিটকে পড়ছেন, প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখী হতে হতে এক সময় কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের পরামর্শ দিয়ে প্রাথমিকভাবে মানসিক শক্তি যোগানোর কাজটি উইমেন চ্যাপ্টার করবে৷ তারপরও যদি কাউকে বেআইনিভাবে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তাঁকে আইনি সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনাও তাদের আছে বলে সুপ্রীতি জানান৷
অবশ্য সেজন্য উইমেন চ্যাপ্টারের আর্থিক ভিত্তিও মজবুত হতে হবে৷ আপাতত সুপ্রীতি ও তাঁর দুই বন্ধু মিলে নিজেদের টাকায় এই পোর্টাল চালাচ্ছেন৷ পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া পাচ্ছেন৷ উৎসাহের পাশাপাশি লেখা দিয়ে সহযোগিতা করছেন অনেকে৷ তবে শুরুর দিকের বিরূপ অভিজ্ঞতার কারণে এখনই তাঁরা বিজ্ঞাপন নিচ্ছেন না৷
‘‘আমরা প্রথমে যখন বিজ্ঞাপনের জন্য কথা বলতে গেলাম, তখন অনেকেই আমাদের স্যানিটারি প্যাড দেখিয়ে দিল৷ উইমেন চ্যাপ্টার মানে নাকি স্যানিটারি প্যাডের বিজ্ঞাপন৷ এ কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি৷ দরকার নেই এ রকম বিজ্ঞাপনের৷''
সুপ্রীতি বলেন, জাতিসংঘের একটি স্লোগান ছিল – ‘নারীর চোখে বিশ্ব দেখুন'৷ সেখান থেকেই তিনি উইমেন চ্যাপ্টার শুরু করার ধারণাটি পেয়েছেন৷ এর মানে এই নয় যে, নারীদের আলাদা করে দেয়া হচ্ছে৷ বরং নারী কীভাবে বিভিন্ন ইস্যু দেখছে, সেগুলোই তুলে আনতে চায় উইমেন চ্যাপ্টার৷
‘‘আমার উইমেন চ্যাপ্টারে কিন্তু সেলাই-ফোঁড়াইয়ের কথা নেই, রান্নাঘরের কথাও নেই৷ রান্নাঘর মানেই যে নারীর ঘর, তা তো নয়৷ রান্না পুরুষরাও করতে পারবে, করা উচিত৷ সেজন্য আমি কিন্তু উইমেন চ্যাপ্টারে ওই জিনিসগুলো রাখিনি৷''
ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড'-এ এবার গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম পুরস্কারের জন্য লড়ছে উইমেন চ্যাপ্টার৷ চলতি বছর এই বিভাগের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘তথ্য থেকে অংশগ্রহণ পর্যন্ত – গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ'৷
এ বিষয়ে সুপ্রীতি বলেন, ‘‘আজ যদি একটা মেয়ে হয়রানির শিকার হয়, যেটা সমাজকে নাড়া দিয়ে যায়, আমরা, অর্থাৎ উইমেন চ্যাপ্টার কিন্তু সেই মেয়েটির পাশে দাঁড়াতে পারি – সেটা সংবাদের আকারে হোক, আর লেখালেখির মাধ্যমেই হোক৷....আমরা হয়ত সমাজে একটা ‘ইমপ্যাক্ট' তৈরি করতে পারি৷ এটা খুব জরুরি৷''
১৪টি ভাষার প্রতিযোগীদের এ লড়াইয়ে উইমেন চ্যাপ্টার বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছে৷ সেরা হওয়ার দৌঁড়ে উইমেন চ্যাপ্টারকে এগিয়ে নিতে চাইলে বিচারকদের সম্মতির পাশাপাশি প্রয়োজন বেশি বেশি ভোট৷
ভোট দিতে চাইলে ভিজিট করুন thebobs.com ওয়েবসাইট৷ সেখানে লগ-ইন করুন ফেসবুক, টুইটার, ভিকন্টাক্টে কিংবা ডয়চে ভেলের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে৷ এরপর গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড বিভাগ বাছাই করে উইমেন চ্যাপ্টার-এর ঘরে বোতাম চেপে আপনার ভোট দিন৷
একটি লগ-ইন আইডি ব্যবহার করে একটি ক্যাটেগরিতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একটি করে ভোট দেয়া যাবে আগামী ৭ই মে র্পযন্ত৷