পর্তুগালের সেরা ফুটবলার কে?
১০ অক্টোবর ২০১৩রোনাল্ডো বনাম ইউসেবিও বিতর্কটা সবচেয়ে বেশি যার গায়ে লেগেছে, তিনি হলেন ইউসেবিও স্বয়ং৷ ষাটের দশকে বেনফিকা লিসাবনের এই প্লেয়ারটিকে বিশ্বের ফুটবলমোদীরা একডাকে চিনতেন৷ ইউসেবিও বলেছেন, তিনি রোনাল্ডোর চাইতে অনেক কম ম্যাচ খেলে তাঁর গোলগুলো করেছিলেন৷ কাজেই তুলনাটা তাঁর কাছে অন্যায় মনে হয়েছে৷
ইউসেবিও মাত্র ৬০টি ম্যাচ খেলে ৪১টি গোল করেছিলেন৷ সে ক্ষেত্রে ৪৩টি গোল করতে রোনাল্ডো-কে ১০৬টি আন্তর্জাতিক খেলায় নামতে হয়েছে৷ গতমাসে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে পর্তুগাল জেতে ৪-২ গোলে, যার মধ্যে ছিল রোনাল্ডোর হ্যাট্রিক৷ সেই হ্যাট্রিকের কল্যাণেই রোনাল্ডো গোলের হিসেবে ইউসেবিও-কে ছাড়িয়ে যেতে পারেন৷
‘স্বাভাবিক' না ‘ঐতিহাসিক'?
সেই কৃতিত্বের পর রোনাল্ডো বলেছেন: ‘‘স্কোরারদের তালিকায় ইউসেবিও-কে ছাড়িয়ে যাওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার এবং কালে ঘটতো ঠিকই৷ তবুও আমি এ ব্যাপারে গর্বিত৷'' এমনকি পর্তুগালের হয়ে নিজের হ্যাট্রিক সম্পর্কেও রোনাল্ডোর উক্তি: ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার৷'' এই শুক্রবারে আবার রোনাল্ডো স্বদেশেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোয়ালিফায়ারে তাঁর গোলের ট্যালি আরো বাড়ানোর সুযোগ পাবেন৷
বলতে কি, পর্তুগালের হয়ে গোল-করিয়েদের তালিকায় যিনি সর্বোচ্চ স্থানে, সেই পাউলেতা-কে ধরে ফেলতে রোনাল্ডোর আর মাত্র চারটি গোল বাকি৷ ওদিকে পর্তুগালের জার্সি গায়ে চাপিয়ে আর ২১টি ম্যাচ খেললেই রোনাল্ডো বর্তমান রেকর্ডধারী লুইস ফিগো-কে ধরে ফেলবেন৷ পাউলেতা বিনয়ী লোক: আগে থেকেই বলে বসে আছেন যে, তিনি নিজেকে ইউসেবিও, রোনাল্ডো কিংবা ফিগো-র সমকক্ষ বলে মনে করেন না৷ অবশ্য একটু অঙ্ক করলেই বোঝা যাবে যে, গোল রেট অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি গোলের হিসেবে তালিকাটা দাঁড়ায়: ইউসেবিও (শূন্য দশমিক ছয়), পাউলেতা (শূন্য দশমিক পাঁচ) এবং রোনাল্ডো (শূন্য দশমিক চার)৷
ব্ল্যাক প্যান্থার
পেলে-র ব্ল্যাক পার্ল-এর মতো ইউসেবিও পরিচিত ছিলেন ‘ব্ল্যাক প্যান্থার' নামে৷ ৭১ বছর বয়সি ইউসেবিও বলেছেন, ২৮ বছর বয়সি রোনাল্ডোকে তাঁর চেয়ে কম কষ্ট করতে হয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস: ‘‘আমি কোনোদিন লিশটেনস্টাইন বা আজারবাইজানের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাইনি৷'' বলতে কি, রোনাল্ডোর আমলে পর্তুগাল অনেক বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলেছে৷ রোনাল্ডো একাই এ ধরনের পাঁচটি বড় টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, যেখানে ইউসেবিও শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান – এবং টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হন৷ সেই বিশ্বকাপে পর্তুগাল হয় তৃতীয়, যা কিনা পর্তুগালের পক্ষে সর্বোচ্চ৷
সাবেক মহারথী আর হালের মহারথীর মধ্যে তুলনাটা নানাভাবে করা যেতে পারে৷ রোনাল্ডো স্বয়ং স্পোর্টিং লিসবন ক্লাবের ইয়ুথ অ্যাকাডেমি থেকে বেরিয়েছেন৷ ইউসেবিও-র আমলে আজ যাকে বলা হয় ‘ফুটবল বিজ্ঞান', তার অতটা অগ্রগতি ঘটেনি৷ ইউসেবিও বৈজ্ঞানিক মতে প্রস্তুতি, জিম কিংবা অ্যাকাডেমির মুখ দেখেননি৷ তাঁর যা ছিল, তা হল কাঁচা প্রতিভা – বলেন ব্ল্যাক প্যান্থারের ভক্তরা৷ এমনকি আজকের হাই-টেক, ভাল্কানাইজ্ড বল পায়ে পেলে ইউসেবিও আগের চেয়ে দ্বিগুণ গোল করতেন, এই হল ভক্তদের অভিমত৷
আবার এই বিতর্কে একদল মধ্যমপন্থি আছেন, যারা বলেন: ইউসেবিও আর রোনাল্ডো বস্তুত একই ধরনের প্লেয়ার৷ দু'জনেরই খেলা গতি, শক্তি এবং লক্ষ্যভেদের ক্ষমতার উপর নির্ভর৷ টেকনিকের দিক দিয়েও দু'জনের অনেক সাদৃশ্য আছে৷ দু'জনেই সুযোগসন্ধানী এবং প্রয়োজন পড়লে হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো দৌড় শুরু করতে পারেন৷
এসি / এসবি (রয়টার্স)