পর্যটনকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বান্দা আচে
২৪ জানুয়ারি ২০১২ঝড়ে তাদের পাল ছিঁড়েছে, দিক হয়েছে ভুল৷ ভয়ে তারা নীল হয়েছে, স্বজন হারিয়ে বেদনায় মন হয়েছে ভার৷ তবু তারা হাল ছাড়ে নি৷ ভাঙা তরী জোড়া দিয়ে আবার তারা উঠে দাঁড়িয়েছে, গাইছে জীবন জয়ের গান৷
বলছি ইন্দোনেশিয়ার কথা৷ ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে ভারত মহাসাগরীয় এলাকায়৷ এই ভূমিকম্পের প্রভাবে সৃষ্টি ইতিহাসের ভয়াবহ এক সুনামি৷ সুনামির তাণ্ডবে মারা যায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ৷ প্রলয়ংকরী এ সুনামির আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতবিক্ষত হয় ইন্দোনেশিয়া৷
ইন্দোনেশিয়ারই একটি শহর বান্দা আচে৷ সুনামির জল নিষ্ঠুরের মতো নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে সে শহরের মাটি, প্রসাদ, বন ও জন জীবন৷ সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া অজস্র মানুষ ভিখিরির মতো নেমেছে পথে৷ কিন্তু সেই পথের জীবনই শেষ নয়৷ তারা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ অর্থনৈতিক স্থিতি আনতেও কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে তারা৷
বান্দা আচে শহরের এই দুর্দিনে ‘শাপে বর' হয়ে দেখা দিয়েছে সুনামির ধ্বংস ও বিনাশের স্মৃতিগুলো৷ সুনামির আঘাতে প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া এ শহরটিকে দেখতে প্রতিদিনই আসছে অসংখ্য পর্যটক৷ দেশি বিদেশি পর্যটকদের ধ্বংসস্তূপগুলো দেখানোর জন্য গাইড হিসেবে কাজ করছে অনেকেই৷ এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ট্যুরিজম কোম্পানিও ৷ আর পর্যটকদের কাছে সুভেনির, খাদ্য, পানীয় ও হাতে বানানো ছোটো ছোটো উপহার বিক্রি করার পেশাও বেছে নিয়েছে অনেকে মানুষ৷ অর্থাৎ পর্যটকদের এই আগমনকে ঘিরে বান্দা আচে শহরে নতুন কিছু কাজ তৈরি হয়েছে, বাণিজ্যিক একটা আবহ তৈরি হয়েছে এবং সুযোগ তৈরি হয়েছে মানুষের হাতে কিছু অর্থ পাবার৷
সুনামির ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি ধরে রাখতে বান্দা আচে শহরে তৈরি হয়েছে জাদুঘর৷ ধ্বংসের আগের, পরের এবং ধ্বংসলীলার অজস্র ছবি রাখা আছে সে জাদুঘরে৷ এছাড়া ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের সহায়তায় সুনামির একটি কৃত্রিম পরিস্থিতি সৃষ্টি করেও দেখানো হয় সেখানে৷ এই সব অভিনব বিষয়গুলোও পযর্টকদের নজর কাড়ছে৷
ধ্বংসের কিছু চিহ্ন এখনো অবিকল রয়ে গেছে বান্দা আচে শহরে৷ ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি নৌকাকে সুনামির জল ভাসিয়ে নিয়ে ফেলেছিলো এক বাড়ির ছাদে৷ সেটি আজো সেভাবেই আছে৷
ধ্বংসের এই চিহ্নগুলো পর্যটকরা বিস্ময়ের সাথে দেখেন৷ পর্যটকদেরই কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন যে, এ বিধাতারই লীলা৷ তিনি ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে এমন বিনাশ সম্ভব নয়৷ আর স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, এই ধ্বংসও তাঁর একধরণের পরীক্ষা৷
এই যে পর্যটকরা আসছে বান্দা আচে শহরে এটিকে স্থানীয়রা বলছেন আধ্যাত্মিক ভ্রমণ বা স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজম৷ তারা বলছেন, বিধাতাকে ধন্যবাদ কারণ আমরা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই নি, বরং আমরা আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছি৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক