1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গেও 'জয় শ্রীরাম' না বলায় মারধর

২০ এপ্রিল ২০২১

'জয় শ্রীরাম' না বলার জন্য মারধরের ঘটনা আগে উত্তর ভারতে ঘটতো। ভোটের সময় এখন তা পশ্চিমবঙ্গেও ঘটতে শুরু করেছে।

https://p.dw.com/p/3sGV9
প্রতীকী ছবি। ছবি: DW/M. Kumar

সোমবারের ঘটনা। নদিয়া জেলার ফুলিয়ায় 'জয় শ্রীরাম' না বলায় দশ বছরের একটি বাচ্চাকে মেরে অজ্ঞান করে দেয়া হয়। বাচ্চাটি একটি চায়ের দোকানের সামনে ছিল। সেখানে বিক্রেতা মহাদেব প্রামাণিক বলেন, ''বল, জয় শ্রীরাম''। তার জবাবে বাচ্চাটি বলে 'খেলা হবে'।  এটা শুনেই ভয়ংকর রেগে গিয়ে মহাদেব বাচ্চাটিকে ধরে মারতে থাকে। লাথি, ঘুষি, চড় খেয়ে বাচ্চাটি অজ্ঞান হয়ে যায়। স্থানীয় মানুষ তাকে প্রথমে শান্তিপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

মহাদেব প্রামাণিকের স্ত্রী মিঠু প্রামাণিক আবার বিজেপি-র মহিলা মোর্চার নেত্রী। তিনি বলেছেন, তার স্বামীর ভুল হয়ে গেছে। মহাদেব এখন পলাতক। এরপর ঘটনাটি নিয়ে যথারীতি তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে। তৃণমূল রাস্তা অবরোধও করেছিল।

ঘটনা হলো, ভোটের পশ্চিমবঙ্গে 'জয় শ্রীরাম' না বলায় মারধরের ঘটনা বাড়ছে। এটা একমাত্র ঘটনা নয়। কিছুদিন আগে চুঁচুড়ায় একজন বয়স্ক মানুষ 'জয় শ্রীরাম' না বলায় কয়েকজন যুবক তাকে মারধর করেছে। চিৎকার করার পর যুবকরা পালায়। তার আগে বয়স্ক মানুষের ব্যাগ ধরে তারা টানাটানি করেছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

দিন দুয়েক আগে ডায়মন্ড হারবারে হরিনাম সংকীর্তনের আসরে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেয়ায় ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা সত্যজিৎ দাস এই কাজ করেছেন। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, এটা পারিবারিক বিরোধের জের।

ঘটনা হলো, পশ্চিমবঙ্গে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেয়া নিয়ে গোলমাল বাড়ছে। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উসকে দিতে বিজেপি কর্মীরা তাকে দেখে 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিত। মমতা একবার রেগে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রচুর চেঁচামিচি করেছিলেন। এবারও নেতাজির জন্মদিবসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মমতা ভাষণ দিতে ওঠার পর 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দেয়া হয়। ক্ষুব্ধ মমতা প্রতিবাদে খুবই সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে বসে পড়েন।

কিন্তু এখন বিষয়টি অন্য মাত্রা নিচ্ছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে এখন আইডেনটিটি পলিটিক্স খুব বড় আকারে ঢুকে পড়েছে। ২০১৪ সালের আগে রাজনীতি ইস্যুভিত্তিক ছিল, তার আগে মতাদর্শভিত্তিক ছিল। এখন তা আইডেনটিটি-ভিত্তিক হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর জেতার জন্য মুসলিম আইডেনটিটির তাস খেলতে শুরু করেন। বিজেপি তার পাল্টা হিসাবে হিন্দু আইডেনটিটির রাজনীতি নিয়ে এলো।''

তার মতে, ''শাসক ও বিরোধী প্রতিদিনের জীবনে এবং নির্বাচনে এই রাজনীতির ঢালাও ব্যবহার করেছে। 'জয় শ্রীরাম'-এর পাল্টা হিসাবে মমতা নিয়ে এসেছেন 'জয় বাংলা' স্লোগান। এখন এই যে মারধর হচ্ছে তাও ওই আইডেনটিটি রাজনীতির ফলেই।''

আবার প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রের ব্যাখ্যা, ''এটা স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ। বিজেপি একটা গণ-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। রামমন্দির আন্দোলন দিয়ে যার শুরু। এর ফলে গণ-মানসিকতায় একটা বদল এসেছে। যা এই ধরনের ঘটনায় প্রকাশ পাচ্ছে।'' তার মতে, ''উত্তর ভারতে সচরাচর সংখ্যালঘুরা 'জয় শ্রীরাম' না বলায় মারধর করা হয়। আর নদিয়ায় বাচ্চাটি হিন্দু।'' 

জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার)