1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে কতটা সফল হবে বাম-কংগ্রেস জোট?

৩০ মে ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা কিছু কেন্দ্রে প্রচারে ভালো সাড়া পেয়েছেন৷ অনেক টালবাহানার পর পশ্চিমবঙ্গে এবার বাম-কংগ্রেসের জোট হয়েছে৷ কয়েকটি আসন নিয়ে শেষ সময় পর্যন্ত টানাপোড়েন চলেছে৷ তারপরেও জোট হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4gRxn
গাড়িতে নির্বাচনী প্রচারে সিপিএম সমর্থকেরা
মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিমের নির্বাচনী প্রচারের গাড়িতে সিপিএম-এর পাশাপাশি আছে কংগ্রেসেরও পতাকা ছবি: Goutam Hore/DW

আর সম্ভবত এই প্রথমবার বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা গেছে, নেতা তো বটেই, কংগ্রেস ও সিপিএমের সাধারণ কর্মীরাও একসঙ্গে প্রচার করছেন৷ একযোগে মিছিল করছেন৷ জনসভায় গেছেন৷ ভোটের দিন সিপিএম প্রার্থীর হয়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন৷ আর কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য সিপিএম৷ মুর্শিদাবাদ, মালদহ, কলকাতা, উত্তরবঙ্গ সব জায়গায় এই ছবি দেখা গেছে৷

মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিমের গাড়িতে কংগ্রেসের পতাকা বাঁধা ছিল। বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর গাড়ি ও প্রচারেও ছিল সিপিএমের লাল পতাকা৷ যাদবপুর, দমদম, বসিরহাটসহ কয়েকটি কেন্দ্রে বাম প্রার্থীরা প্রচারে সাড়া পেয়েছেন৷ তারা দাবি করেছেন, মানুষের মন বদল হচ্ছে৷

বসিরহাটে ইছামতী নদীর ধারে সিপিএমের পার্টি অফিসে বসে সেখানকারবাম প্রার্থী ও সাবেক বিধায়ক নিরাপদ সর্দার বলছিলেন, ‘‘এই লোকসভা নির্বাচনে তিনটি মূল বিষয় রয়েছে৷ বিজেপি আবার ক্ষমতায় এলে সংবিধান বদল করতে পারে, তা রুখতে হবে৷ রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ বন্ধ করতে হবে এবং গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হবে৷’’

কথা শোনার মুহূর্তে নিরাপদ সর্দার
বসিরহাটে সিপিএমের প্রার্থী সাবেক বিধায়ক নিরাপদ সর্দারছবি: Goutam Hore/DW

তার দাবি, ‘‘সীতারাম ইয়েচুরি তাই যখন কংগ্রেস নেতৃত্বকে বলেন, দলীয় স্বার্থ, লড়াই পরে দেখা যাবে৷ আগে আমরা এই তিনটি বিষয় নিয়ে একজোট হই, তখন কংগ্রেস তা মেনে নেয়৷ ফলে এবার জোট হয়েছে৷ কর্মীরা রাস্তায় নেমে একসঙ্গে কাজ করছে৷ সেটা পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র হয়েছে৷’’

কিন্তু একটা প্রশ্ন উঠছে৷ বাম আমলে সিপিএমের বিরুদ্ধে বারবার কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, তাদের কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার করা হয়েছে৷ সেরকম দুইটি দল একসঙ্গে এলে কি বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে? 

দমদমে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ বিরাটির পা্টি অফিসে বসে সুজন বলছিলেন, ‘'২০১১ সালে তৃণমূল ও কংগ্রেস মিলে সরকার গঠন করেছিল৷ এক বছরের মধ্যে কংগ্রেস আউট৷ এটা রাজনীতি৷ আজ যা হচ্ছে, কাল বা পরশু তা নাও হতে পারে৷ কংগ্রেস বুঝতে পারছে, তাদের ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে৷ এটা এখন তাদের কাছে স্পষ্ট৷‘' 

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে এই জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তখন দলের নেতারা তার কথাকে আমল দেয়নি৷ মান্নানও ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে পরিবর্তন হয়৷ যদি তৃণমূল ও বিজেপি আমাদের বড় শত্রু হয় এবং যখন আমরা নিজের ক্ষমতায় বিজেপি ও তৃণমূলকে পুরোপুরি হারাতে পারছি না, তখন বামেদের সঙ্গে হাত মেলাতে আপত্তি কোথায়?’’

আমার কথা দলের নেতারা পছন্দ করে না : আব্দুল মান্নান

এই বিষয়টি সম্ভবত সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছেছে৷ মুর্শিদাবাদে সাবির বলছিলেন, ‘‘রাজনীতিতে তো আজ যে বিরোধী, কাল সেই বন্ধু হতে পারে৷ এমন উদাহরণ তো ভারতে অসংখ্য আছে৷’’ কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা প্রণবেশের মতে, ‘‘একটা বিকল্প থাকা দরকার৷ মাত্র দুইটি দল বা জোট থাকলে বেছে নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকে না৷ বাম-কংগ্রেস জোট একটা বিকল্প৷ তাদের যারা পছন্দ করবেন, ভোট দেবেন৷’’ তপসিয়ার রাজু মনে করেন, ‘'ভোটে জোট করে বা একা যে কেউ লড়তে পারেন৷ বাম-কংগ্রেস লড়লেই বা অসুবিধা কীসের? তবো তারা কত ভোট পাবেন বলতে পারব না৷’’

এবার একটা বিষয় দেখা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সিপিএমের যুব প্রার্থীরা যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছেন৷ তাদের ঘিরে সেলফি তোলার হিড়িক দেখা গেছে৷ তাদের দেখতে, কথা শুনতে মানুষ আগ্রহী হয়েছেন৷ তার মানে এই নয় যে, যারা এসেছেন, তাদের সব ভোট সিপিএম প্রার্থী পাবেন৷ কিন্তু এই যে তাদের ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, এটাও এবার নতুন বিষয়৷

বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের সামনে যে অসুবিধাটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, তাদের একেবারে নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে৷ গতবার তাদের সঙ্গে জয়ী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল বিশাল৷ কোথাও দুই লাখ, কোথাও চার লাখ বা তারও বেশি৷ এই ব্যবধান চট করে ঘুচিয়ে ফেলা খুব সহজ কাজ নয়৷

কংগ্রেস বা বাম নেতারা এমন দাবিও করছেন না, তারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচুর আসনে জিতবেন৷ সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘১০ থেকে ১২টি আসনে আমরা তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি-র চোখের জল বের করে দেব৷‘' অর্থাৎ, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন ১০-১২টি আসনে৷

সম্প্রতি কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাম ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন৷ মমতা নিয়মিত করছেন৷ বসিরহাট থেকে কলকাতায় ফিরছিলাম৷ পথে দেগঙ্গা বলে একটা জায়গা পড়ে৷ সন্ধ্যাবেলা৷ বাজার এলাকায় মঞ্চ করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলছেন৷ সামনে ৭০-৮০ জন বসে৷ তৃণমূলের সেই নেতা বলছিলেন, ‘‘৩৪ বছর ধরে বামেরা কংগ্রেস কর্মীদের উপর যে অত্যাচার করছে, সেটা কেউ ভোলেননি৷ ওই দুই দল জোট করলে কি কেউ তাদের বিশ্বাস করতে পারবে?’’

কংগ্রেস-বাম নেতারা বলছেন, মানুষ এখন যেটা সামনে দেখছেন, যার জন্য ভুগছেন, সেটাই মনে রাখেন৷ সেটাই তাদের বিচলিত করে৷ তৃণমূল ও বিজেপি কী করছে তা তাদের সামনে আছে৷ সেজন্যই তারা বাম-বিজেপি-র দিকে আবার কিছুটা হলেও এবার হেলে পড়েছেন৷

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ‘'কোনো সন্দেহ নেই, কিছু কেন্দ্রে বামেদের ভোট বাড়বে৷ কিন্তু সব কেন্দ্রে বাড়বে ও প্রচুর বাড়বে তা মনে করা ভুল৷ কিছু কেন্দ্রে কমতেও পারে৷’’

শুভাশিসের মতে, ‘'সারা দেশেই দুইটি দল বা জোটের মধ্যে লড়াই হচ্ছে৷ ফলে মানুষ সেটা দেখেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন৷ এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে কিছু কেন্দ্রে যদি বাম ও কংগ্রেসের ভোট বাড়ে, তাহলে সেটাই বড় সাফল্য হিসাবে ধরতে হবে৷’’

‘প্রার্থীর চেয়েও বড় বিষয় প্রতীক’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান