পাউরুটির জন্যও কি বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে?
৪ মার্চ ২০১৭বিশ্বের উষ্ণায়নের সঙ্গে পাউরুটির সংযোগ এতদিনে গবেষকদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে৷ ‘নেচার প্ল্যান্টস' নামের পত্রিকাটিতে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষায় গমের বীজ থেকে প্রাতরাশের পাউরুটি অবধি পুরো প্রক্রিয়াটির পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে৷
দেখা গেছে, গমের দানা হিসেবেই পাউরুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে – এবং তার কারণ হলো একটি রাসায়নিক সার, যার নাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট৷ রুটি তৈরির প্রক্রিয়ায় সামগ্রিকভাবে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, তার প্রায় অর্ধেক আসে এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে৷
গবেষকরা বলছেন যে, মানুষজনকে পাউরুটি খাওয়া থেকে বিরত করা এই সমীক্ষার লক্ষ্য নয়৷ বরং গ্রাহকরা যাতে আরো বেশি স্বচ্ছতা ও টেকসই পণ্য দাবি করেন, সেই উৎসাহ দেওয়াই হল সমীক্ষার উদ্দেশ্য৷ স্রেফ মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য রুটির মতো একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেছে নেওয়া হয়েছে – ডয়চে ভেলেকে বলেন লিয়াম গাউচার, যিনি শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও এই সমীক্ষার মুখ্য রচয়িতা৷
রুটি-রোজগার
উত্তর ভারতে রুটি বলতে বোঝায় হাতে গড়া গমের রুটি৷ পশ্চিমে কিন্তু রুটি বলতে বোঝায় পাউরুটি, যা এখানে মানুষজনের প্রাত্যহিক খাদ্য৷ শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন এক কোটি দশ লক্ষ রুটির ‘লোফ' খাওয়া হয়৷ ২০১৬ সালে ইউরোপীয়রা মাথাপিছু গড়ে ৬৩ কিলোগ্রাম করে রুটি খেয়েছেন (‘ব্রেড ইনিশিয়েটিভ' গোষ্ঠীর পরিসংখ্যান)৷
গাউচার ও তাঁর সতীর্থরা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রুটি তৈরির প্রতিটি পর্যায়ের ডাটা সংগ্রহ করেছেন৷ তবে রুটি সংক্রান্ত গ্যাস নির্গমনের ৬০ শতাংশই যে আসে গমের চাষ থেকে, এই তথ্যে কেউই বিশেষ আশ্চর্য হননি৷ আসল চমকটা ছিল এই যে, রুটি সংক্রান্ত গ্যাস নির্গমনের ৪৩ শতাংশ আসে মাত্র একটি রাসায়নিক সার থেকে, যার নাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট৷
অরগ্যানিক বনাম সিন্থেটিক সার
মিনারাল, অর্থাৎ খনিজ সার আর সিন্থেটিক অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তৈরি সার, এই দু'টির উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন পড়ে৷ এছাড়া এই সব সার যখন মাটিতে মিশে যায়, তখন তা থেকে নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়৷
নাইট্রাস অক্সাইড (এন-টু-ও) এমন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, যা পরিবেশের পক্ষে কার্বন ডাই অক্সাইড (সিও-টু) গ্যাসের চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক৷ মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড মিলে বিশ্বের উষ্ণায়নের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী – আর এই দু'টি গ্যাস প্রধানত আধুনিক কৃষিকাজ থেকে নির্গত হয়৷
দায়িত্ব কার?
২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১,০০০ কোটির কাছাকাছি – বলছে জাতিসংঘ৷ কৃত্রিম সারের প্রবক্তাদের যুক্তি হলো এই যে, এই পরিমাণ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে৷
গাউচার ও তাঁর গবেষকরা চান যে, সকলেই খাদ্য উৎপাদনের পরিবেশগত প্রভাব কমানোর দায়িত্ব নিন৷ কৃষিজীবীরা ‘প্রিসিজন এগ্রিকালচার' বা ‘স্যাটেলাইট ফার্মিং'-এর পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন; সার উৎপাদকরা তারা যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করেন, তা কমাতে পারেন; এমনকি গ্রাহকরাও আরো সচেতনভাবে রুটি কিনতে পারেন৷
গাউচারের মতে কৃত্রিম সারের বদলে অরগ্যানিক বা জৈব সার ব্যবহার করার জন্য আর্থিক অনুদান বা ছাড় দিয়েও ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে৷ এছাড়া রুটি তো শুধু একা নয়, সেই সঙ্গে মাংসের মতো আরো অনেক খাদ্যপণ্য আছে, যাদের উৎপাদন রুটির চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক৷
ইরেনে বানোস রুইজ/এসি
দেবারতি গুহ