পাকিস্তানে মেয়েদের ভোটে তালেবানি বাধা
২৫ এপ্রিল ২০১৩স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে অর্ধেকেরও বেশি সময় সামরিক শাসনে থেকেছে পাকিস্তান৷ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়েছে, যাত্রা থমকেও গেছে বারবার৷ আসন্ন সংসদ নির্বাচন গণতন্ত্রের পথে নতুন করে যাত্রা শুরুরই আরেকটি সুযোগ৷ কিন্তু এখানে বড় বাধা হয়ে দেখা দেবে গোঁড়ামি, কুসংস্কার এবং তালেবানের হুমকি৷
এসব যে সমস্যা হয়ে দেখা দেবে তা নিয়ে সন্দেহের সুযোগ নেই৷ বিশেষ করে পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বের খাইবার পাখতুনখোয়া, এর আশপাশের কিছু এলাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের বালুচিস্তানে তো হবেই৷ রক্ষণশীল এ এলাকাগুলোতে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও দেখা গেছে ভয়ঙ্কর অবস্থা৷ কোথাও কোথাও বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি৷ বলা বাহুল্য, কেন্দ্রগুলোতে শুধু নারীদেরই ভোট দেয়ার কথা৷ কিন্তু তালেবানের হুমকি, স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়ার কারণে কোথাও কোথাও একজন নারীও ভোট দিতে যাননি৷
তালেবানের হুমকির কথা সবাই জানেন৷ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েই তারা বিরোধীপক্ষ এবং নারীদের নিষ্ক্রিয় রাখার চেষ্টা করে৷ ধর্মীয় নেতাদের অনেকে আবার ভোট দিলে আপনাআপনি তালাক হয়ে যাবে, সুতরাং অজানা-অচেনা পুরুষকে ভোট দিতে গেলে সংসার ভাঙবে নারীদের – এমন কথাও বলে দেন নির্দ্বিধায়৷ এতে কাজও হয়৷ ২০০৮ সালে মার্দান জেলার একটি কেন্দ্রে দিন শেষে অব্যবহৃত ব্যালট এবং খালি বাক্সই নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা৷ সেবার পাকিস্তানে মহিলাদের এমন ভোটকেন্দ্র ছিল ৫৬৪ টি!
আসন্ন নির্বাচনেও অনেক এলাকায় একই চিত্র দেখা যাবে বলে আশাঙ্কা করা হচ্ছে৷ ১৮ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানে এবার পুরুষ ভোটার ৪ কোটি লক্ষ আর নারী ভোটার ৩ কোটি ৭০ লক্ষ৷ যেসব এলাকায় শিক্ষার হার কম, সেগুলোতে অনেক নারী ভোট কিভাবে দিতে হয় তা-ই জানেন না৷ এর সঙ্গে যেসব এলাকায় রক্ষণশীলতা এবং তালেবানের দাপটও আছে, সেখানে নারী ভোটারের গণতন্ত্র চর্চা করার স্বাভাবিক অধিকার প্রয়োগের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে৷
অথচ পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে নারীরা প্রার্থী হয়ে আসছেন অনেক আগে থেকেই৷ সাম্প্রতিক কালে নারী প্রার্থী আরো বেড়েছে৷ নারী ভোটার বাড়ানোর ব্যাপারেও বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা হয়েছে৷ নারীদের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র, সেখানে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন তাঁদের সবাই নারী৷ তারপরও অনেক কেন্দ্রে ভোটই না পড়ায় প্রাপ্ত ভোটের অন্তত দশ ভাগ নারীর না হলে, কোনো প্রার্থীর ভোটের ফলাফলকে বিবেচনাতেই নেয়া হবেনা – এমন একটি আইন করারও চেষ্টা হয়েছিল৷ কিন্তু জাতীয় সংসদের অনুমোদন না পাওয়ায় তা আর কার্যকর হয়নি৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি)