1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে নির্বাচন হবে তো! 

১৯ মে ২০১৮

সেনাবাহিনী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মধ্যে ক্রমশ সৃষ্টি হতে থাকা দূরত্বের কারণে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2xwmq
ছবি: Reuters/F. Mahmood

নওয়াজ শরিফের দলকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন যত কাছে আসছে, ততই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে৷ এরইমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের দ্বন্দ্ব নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে৷

২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা নিয়ে মন্তব্য করায় এই বিতর্ক তৈরি হয়৷ তাছাড়া নওয়াজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে বেসামরিক জনগণের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে৷

অনেক সমালোচনার মুখে পড়েও নওয়াজ শরিফ তার এ উক্তি প্রত্যাহার করেননি বা এর জন্য দুঃখপ্রকাশও করেননি৷

সামরিকবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিক এবং বেশকিছু টেলিভিশন বিশ্লেষক নওয়াজের উক্তির জন্য তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচারের দাবি জানিয়েছে৷

পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা ইমরান খান বলেছেন, ‘‘নওয়াজ শরিফকে সংবিধানের ছয় অনুচ্ছেদের আওতায় এনে বিচার করা উচিত৷''

এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷

নতুন এ ইস্যু পাকিস্তানের গণতন্ত্রপন্থি বেসমারিক সরকার সমর্থক ও সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে গভীর খাদ ও আস্থাহীনতা তৈরি করেছে৷

নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন?

চলতি মে মাসেই পাকিস্তানের বর্তমান সংসদের মেয়াদ ফুরাচ্ছে৷ ধারণা করা হচ্ছিল, আগামী জুলাইতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷  এই সময়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনেক পাকিস্তানিরই শঙ্কা রয়েছে৷

যদিও পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলছে, এসব শঙ্কা ভিত্তিহীন৷ কমিশনের মুখপাত্র আলতাফ আহমেদ বলেছেন, ‘‘সবকিছু সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং নির্বাচন যথাসময়েই হবে৷''  

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি ৩১ মে সংসদ ভেঙে দেন, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে৷

পাকিস্তানের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও যথাসময়ে নির্বাচন আশা করছে৷ ক্ষমতায় থাকা নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান রাজা জাফর উল হক বলেন, ‘‘নির্বাচন বিলম্বিত হবে না৷''

অন্যতম বিরোধীদল তেহরিক-ই-ইনসাফের মুখপাত্র চৌধুরী ফাওয়াত হুসেইনও একই কথা বলেছে ডয়চে ভেলেকে৷

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তাহির মেহেদী বলেন, ‘‘পাকিস্তান কোনোভাবেই নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারবে না, কেননা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহি করতে হবে৷''

পাকিস্তানের সাবেক সাংসদ এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আহমেদ জারদারির তৎকালীন প্রেসসচিব ফারহাতুল্লাহ বাবর মনে করেন, দেশের ভেতরে একটি ‘অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী' নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে৷ ‘‘কিন্তু তারা সফল হবে না'', বলেন তিনি৷

দক্ষিণ এশিয়ার ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানে গণতন্ত্র এখনো ভঙ্গুর পথেই হাঁটছে৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর, দেশটির গণতান্ত্রিকতার ইতিহাসে কয়েক দশক ধরে সামরিক শাসনের নজির রয়েছে৷ কিছুদিন পরপরই সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন ও নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে৷

ছায়ায় থেকে শাসন

পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো ২০১৩ সালে নির্বাচিত একটি সরকার, অপর একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ এ ঘটনায় অনেকে সামরিক অভ্যুত্থানের চক্র থেকে পাকিস্তানের রাজনীতির বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখতে পেয়েছিলেন৷ তাঁরা ভেবেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে৷

কিন্তু নওয়াজ শরিফযেভাবে ক্ষমতাচ্যুত হলেন তাতে অনেকেই মনে করেন, এর পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে৷

পরিবার সদস্যরা দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পরায় পদত্যাগ করতে হয়েছিল নওয়াজকে৷ যদিও অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সেনাবাহিনীর বাইরে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টার কারণেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷

প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো ছাড়াও নেওয়াজ শরীফের নিজের দলের নেতৃত্ব হারাতে হয়েছিল৷ পাশাপাশি সব সময়ের জন্য সব ধরনের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার হারান তিনি৷ 

পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে অনেক বিশ্লেষক দেখছেন আরেক দৃষ্টিতে৷ তাঁরা বলছেন, কোনো ধরনের অভ্যুত্থান ছাড়াই ক্ষমতা চর্চার জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ ছায়ায় থেকে দেশ শাসনে তারা দক্ষ হয়ে উঠেছে৷

নওয়াজ শরিফের এ ঘটনা ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷

পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর মুখপাত্র জাফর উল হক বলেন, ‘‘অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচনগ্রহণযোগ্য হবে না৷''

সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের ভবিতব্য নির্ধারণ করবে৷ কেননা, দেশটি এখন নিরাপত্তাজনিত গভীর সঙ্কটে পড়েছে৷ এমনকি পাকিস্তানের পরম মিত্র অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সন্ত্রাসী এলাকা চিহ্নিত করে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় ইসলামাবাদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷

চীনের দিকে নতুন করে ঝোঁকা

বছরের শুরুতেই পাকিস্তানের নিরাপত্তা সহযোগিতার ব্যাপারে অ্যামেরিকা নিজেদের গুটিয়ে নেয়৷ ফলে পাকিস্তান চীনের দিকে অর্থনৈতিক ও কূটনীতিক সাহায্যের জন্য আরও বেশি ঝুঁকতে শুরু করে৷

পুরনো বন্ধু চীনও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ বর্তমানে চীন ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ইউরো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে বিনিয়োগ করেছে৷ পাকিস্তানের সহায়তায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যেরও অবসান চায় চীন৷ যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সহসা এ পরিকল্পনা কার্যকর হবে না৷

কিন্তু অথর্নৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর৷ আর পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ ধরে সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে৷

দেশটির সাংসদ আকরাম দাশতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামরিক বাহিনী নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে দিতে কোনও চালই বাদ রাখবে না৷ সংক্ষেপে সামরিক বাহিনী কোনোভাবেই পাকিস্তানের দেশ শাসনে বেসামরিক রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য মেনে নেবে না৷ কেননা, তারা নিজেরাই সবকিছু কীভাবে চলবে, তা ঠিক করে দিতে চায়৷''

শাহ মীর বালুচ/এইচআই

আপনার কী মনে হয় বন্ধু? পাকিস্তানে কি ঠিক সময়ে গণতান্ত্রিক একটি নির্বাচন হবে?