পাখির ঝাঁকের অভিনব ছবি
১৮ এপ্রিল ২০১৯স্পেনের কাটালুনিয়া অঞ্চলে লা টেরেটা উপত্যকায় ঘূর্ণিঝড়ের আকৃতি দেখা যাচ্ছে৷ পিরেনিজ পর্বতের দক্ষিণে একঝাঁক শকুনি উড়ে বেড়াচ্ছে৷ স্পেনের ফটোগ্রাফার চাভি বো সেই ঘটনা দৃশ্যমান করে তুলছেন৷
আকাশে পাখিদের চক্রাকারে ওড়ার দৃশ্য ধরে রাখতে চাবি-কে সেকেন্ডে কয়েক ডজন ছবি তুলতে হয়৷ চাভি বো তাঁর উদ্যোগের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘একটি শকুনির আরও ছবি তোলা আমার উদ্দেশ্য নয়৷ এমন অনেক ছবি রয়েছে৷ বরং প্রকৃতির নতুন ধরনের সৌন্দর্য দেখাতে চাই৷ পাখিদের ওড়ার ছন্দ সেই সৌন্দর্য সৃষ্টি করে৷''
তাঁর কাজ অনেকটা ক্যালিগ্রাফি-ভিত্তিক শিল্পকর্মের মতো৷ পাখিরাই আকাশে সেই রেখা সৃষ্টি করে৷ যেমন পানকৌড়িদের সুন্দর প্যাটার্ন বা নক্সা, হেরিং গাল পাখিদের যাত্রাপথ অথবা আইসল্যান্ডের আকাশে ফালমার ও পাফিন পাখির চলাচল৷
চাভি বো বার্সেলোনা শহরে থাকেন৷ ৮ বছর ধরে তিনি ‘অর্নিটোগ্রাফিস' নামের ছবির প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন৷ গ্রিক ভাষায় পাখি ও লেখার সমন্বয়ে শব্দটি গঠন করা হয়েছে৷ এককালের ফ্যাশন ফটোগ্রাফার এখন গোটা বিশ্বে নিজের তোলা পাখিদের পরাবাস্তব ছবি বিক্রি করেন৷ চাভি বলেন, ‘‘এমন প্যাটার্ন চিরকাল আমাদের কাছে অদৃশ্য ছিল৷ কারণ আমরা কোনো একটি মুহূর্তে তা দেখতে পাই৷ আর এখানে একটি ছবির মধ্যে বেশ কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা স্থান পেয়েছে৷ এ যেন কয়েক সেকেন্ডকে একটি মুহূর্ত হিসেবে দেখার মতো অভিজ্ঞতা৷ সেটা অসম্ভব হলেও আমরা তা করতে পারি৷''
একটি ছবি সৃষ্টি করতে চাভি বো কয়েক'শ ছবি নিখুঁতভাবে পর পর সাজান৷ সামান্য ব্যবধানে তোলা ফটোগুলি ‘ক্রোনোফোটাগ্রাফি' প্রক্রিয়ায় একত্র করা হয়৷ ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই কৌশল সৃষ্টি হয়েছিল৷ ১৮৭৮ সালে এডওয়ের্ড মাইব্রিজ এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, যে ঘোড়া দৌড়ানোর সময়ে কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্য শূন্যে ভাসে৷
চাভি বো-র ছবিগুলিতে অবশ্য এককভাবে কোনো পাখি চেনা যায় না বলা চলে৷ তিনি বলেন, ‘‘পাখিদের নড়াচড়ার প্যাটার্নই আসল বিষয়৷ অনেকে তার মধ্যে ডিএনএ শৃঙ্খল, তার অথবা কম্পিউটার গ্রাফিক দেখতে পান৷ সেটাই আমার আগ্রহের কারণ৷ প্রথমবার দেখলে ঠিক কী চোখে পড়ে?''
ছোটবেলায় চাভি বো তাঁর পিতামহের সঙ্গে অসংখ্য পাখি পর্যবেক্ষণ করতেন৷ তখন থেকেই পাখি তাঁর বিস্ময়ের কারণ৷ মোটিফ খুঁজতে তাঁকে বেশিদূর যেতে হয় না৷ কারণ তাঁর মতে, সব জায়গায় পাখি মানুষের চারিপাশেই রয়েছে৷ যেমন বার্সেলোনা শহরের পার্ক দে লা সিইউতাদেলা-য়৷ চাভি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের চারপাশে কত পাখি, নানা রকম শব্দ ও ধ্বনি রয়েছে৷ কিন্তু আমরা সবসময়ে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি বলে সে সব টের পাই না৷ আমরা মানুষের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে চাই৷ তারা উপরে তাকিয়ে যেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে৷''
হাইস্পিড ফটোগ্রাফির সাহায্যে ব্যস্ত জীবনের মাঝে একটু বিরতি৷ চাভি বো সময়কে সন্নিবিষ্ট করে অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করে তুলছেন৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি