1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পাহাড় এখন বারুদের স্তূপ

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ জুন ২০১৭

ক্রমশই বিস্ফোরক হচ্ছে দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি৷ রাজ্য প্রশাসন যত কড়া হচ্ছে, ততই জেদ চাপছে গোর্খাল্যান্ড কর্মী-সমর্থকদের৷ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কেন্দ্র সরকার৷

https://p.dw.com/p/2ewdF
সাম্প্রতিক ছবিছবি: UNI

পর্যটক মওসুম শেষ হওয়ার আগেই পাহাড় ফাঁকা৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে জঙ্গিপনার জেরে পর্যটকরা দার্জিলিং ছেড়ে সমতলে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ এবং সেটাও আদৌ সহজ হয়নি৷ কারণ, যদিও বলা হয়েছিল, পাহাড়ে যান যাতায়াতগোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকালের বনধের আওতায় থাকবে, কিন্তু কার্যত সেটা ঘটেনি৷ হাঙ্গামা-অশান্তির ভয়ে কোনও বেসরকারি গাড়িই পাহাড়ে উঠছে না, বা পাহাড় থেকে নামছে না৷ ফলে সরকারি বাসই ভরসা৷ কিন্তু তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না৷ ফলে ভোররাত থেকে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি কোনও৷ ওদিকে সমতল থেকে গাড়ি পাহাড়ে না আসায় আস্তে আস্তে খাবারের জোগানে টান পড়েছে৷ ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে৷ গত কয়েকদিনে বহু বিদেশি পর্যটক দার্জিলিংয়ে আটকে পড়েছেন, যাঁদের শেষ পর্যন্ত সরকারি বাসে, পুলিশ পাহারায় পাহাড় থেকে নামিয়ে আনতে হয়েছে৷

AmarSinghRai - MP3-Stereo

দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন আবাসিক স্কুলে যেসব ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে, দুর্ভোগ হচ্ছে তাদেরও৷ এদের এক বড় অংশ অন্য রাজ্য থেকে আসা৷ বাংলাদেশেরও প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী পড়ে এসব স্কুলে৷ যদিও তারা স্কুলের সুরক্ষিত সীমানার মধ্যে নিরাপদেই আছে, তবু তাদের জন্যে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে৷ একইভাবে চিন্তিত ভিনরাজ্য থেকে আসা হোটেল কর্মচারীরা৷ এঁরা অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন৷ ফলে কর্মীদের অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে অনেক হোটেল৷

এরই মাঝে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের পাতলেবাসের বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি অভিযান এবং মোর্চার কয়েকটি দপ্তরে তল্লাশির পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ একের পর এক সরকারি দপ্তরে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে, আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ, যে হামলায় আগুয়ান ভূমিকা নিয়েছেন মোর্চার মহিলা সদস্যরা এবং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক শক্তি এখন একজোট হয়েছে৷ রবিবার পুলিশের গুলিতে নিহত দুই মোর্চা সদস্যের দেহ নিয়ে বিশাল মিছিল হয়েছে পাহাড়ে, যা একদিকে যেমন মোর্চা নেতৃত্বকে চাঙ্গা করেছে, তেমনই অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে৷

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কিছুটা রাজনৈতিক কারণেই৷ আগে থেকেই অভিযোগ ছিল যে, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এবং পাহাড়ের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আসার পর থেকেই গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে জঙ্গি আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়েছে৷ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে কেন্দ্র যদিও তিন কোম্পানি আধা-সেনা দার্জিলিংয়ে মোতায়েন করেছে, কিন্তু বাড়তি সৈন্য চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আর্জি কেন্দ্র খারিজ করে দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য পরিস্কার, যে দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্য সরকার যতক্ষণ না বিস্তারিত রিপোর্ট দিচ্ছে, কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না৷

এর মধ্যেই রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ফোন করেছেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকে এবং অশান্তি এড়িয়ে থাকতে অনুরোধ করেছেন৷ দার্জিলিংয়ের নির্বাচিত মোর্চা বিধায়ক অমর সিং রাই সোমবার ডয়চে ভেলেকে বললেন, তাঁরাও শান্তি চাইছেন পাহাড়ে৷ কিন্তু কেন্দ্র সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছু হবে না৷ পাহাড়ের সমস্ত মানুষের এখন একটাই দাবি— গোর্খাল্যান্ড৷ কাজেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকেই৷ দার্জিলিংয়ের বিধায়ক মনে করেন, আরও আগেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ দরকার ছিল৷ রাজ্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করার দরকার ছিল৷ তবে এখনও সময় আছে এবং দার্জিলিংয়ের মানুষও অশান্তি চায় না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য