পুত্র সন্তানের দিকে নজর রাখতে বললেন মোদী
১৫ আগস্ট ২০১৪পায়ে পায়ে পেরিয়ে গেল ভারতের স্বাধীনতার ৬৭টি বছর৷ ৬৮ তম স্বাধীনতা দিবস চিরাচরিত উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়৷ দিল্লির লালকেল্লা থেকে প্রথাগত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রথম ভাষণ দেন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে না নিয়েই৷ ঘণ্টা খানেকের ভাষণে পাঁচটি নতুন সংস্কারের এক নিজস্ব পথনির্দেশিকা তুলে ধরেন তিনি৷ তাতে ছিল প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক সংস্কার, কর্মসংস্কৃতি ও দক্ষতা বাড়ানোর কথা৷ তুলে ধরেন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত, প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, গাড়ি থেকে সাবমেরিন সবকিছু তৈরির জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা৷ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া' ব্র্যান্ডে তাদের পণ্যসামগ্রী বিদেশের যে-কোনো দেশে রপ্তানি করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী৷
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, জাতপাত ও সামাজিক উত্তেজনা বর্জনে দেশের যুবসমাজের ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালে মাওবাদী জঙ্গিরা হিংসা পথ ত্যাগ করে সাংবিধানিক মূল স্রোতে ফিরে এসেছে৷ দেশে শান্তির পরিবেশ না থাকলে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প সফল হতে পারে না৷ মোদী হয়ত বজরং দল ও সঙ্ঘপরিবারে কট্টর দক্ষিণপন্থিদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক হিংসা বর্জন করে উন্নয়নের পথ সুগম করতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার৷ তবে এই প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মোদীর এই আর্থিক দর্শন তাঁর পথপ্রদর্শক সঙ্ঘপরিবার সমর্থন করে কিনা সেটাই এখন দেখার৷ কারণ ভারত খুচরো ব্যবসা, প্রতিরক্ষা খাতে এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্য উৎপাদনে বিদেশি লগ্নির বিরোধী৷
আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের কথা বলেছেন মোদী তাঁর ভাষণে৷ সেটি হলো পরিকল্পনা কমিশন তুলে তার জায়গায় গঠন করা হবে এক নতুন ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক' প্রতিষ্ঠান যাতে উন্নয়ন পরিকল্পনায় নতুন চিন্তাধারার আগমন ঘটে৷ নেহেরু সরকারের আমল থেকে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে দেশ গঠনের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন৷
মহিলাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ধর্ষণের ঘটনাকে দেশের লজ্জা বলে অভিহিত করেন মোদী৷ তিনি বলেন, এর বিহিত করতে হবে ঘরে বাইরে৷ তারজন্য পরিবারকে পুত্র সন্তানের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে৷ মেয়েদের প্রতি পরিবারের এবং সমাজের দায়বদ্ধতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি৷ কন্যাভ্রুণ হত্যা বন্ধ করতে তিনি চিকিৎসক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান৷
নির্বাচিত বিধায়কদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, তাঁরা যেন তাঁদের নির্বাচিত কেন্দ্রের অন্তত একটি গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলেন৷ প্রতিটি গরিব পরিবারের জন্য এক লাখ টাকার জীবন বিমা এবং তারসঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার৷
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ সম্পর্কে বিরোধী কংগ্রেস দলের প্রতিক্রিয়া, মোদীর ভাষণের বাস্তব প্রভাব শূন্য৷ এতে না আছে কোন দিশা, না আছে কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা, না আছে কোন নতুন উদ্যোগ৷ স্রেফ বিক্ষিপ্ত কিছু কথার ফুলঝুরি৷ গরিবদের ব্যাঙ্ক খোলার ব্যবস্থা তো কংগ্রেস সরকারই করেছে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিমে৷ এতে নতুন কি আছে ?
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গোটা দিল্লি ছিল নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি৷ প্রায় ৩০ হাজার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ লালকেল্লার চারপাশ ছিল ‘নো-ফ্লাই জোন'৷ রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড৷ গোয়েন্দা সূত্রের খবর আল-কায়দার জঙ্গিরা সরকারি ভবন এবং সংসদ ভবনের ওপর হামলা চালাতে পারে৷ সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় নজর রাখে৷
আম নাগরিকদের প্রশ্ন, গত সাত দশক ধরে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীরা যে স্বপ্ন ফেরি করেন, সমাজের নীচুতলার কাছে তার কতটুকু পৌঁছয় ? না পৌঁছয় না৷ যদিও জিডিপির মাপকাঠিতে ভারতের স্থান দশম৷ জনসংখ্যা ১২৫ কোটির বেশি৷ ক্রয়ক্ষমতার বিচারে বিশ্বে তৃতীয়৷ বৈদেশিক বাণিজ্যে বিশ্বের ২০টি দেশের অন্যতম ভারত৷ তবু প্রদীপের নীচে অন্ধকার৷ ৩০শতাংশ মানুষ গরিবি রেখার নীচে৷ জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৭টি দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ১৩৭৷ রাষ্ট্র নেতাদের সার্বিক প্রবৃদ্ধির বাণী তাই প্রহসনের মত শোনায়৷