মোদীর ‘মিশন কাশ্মীর’
১৩ আগস্ট ২০১৪লাদাকের রাজধানী লেহ-তে প্রধানমন্ত্রী মোদী সেনা ও বিমান বাহিনীর জওয়ানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে প্রথমেই সমালোচনা করলেন পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের৷ প্রথাগত যুদ্ধের শক্তি হারিয়ে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যচ্ছে৷ সে কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধে নয়, জঙ্গি হামলাতেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ ‘ছায়াযুদ্ধ' বলতে সম্ভবত মোদী বোঝাতে চেয়েছেন ভারতও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত দুই কাশ্মীরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতবাদী জঙ্গি হামলা চালানোর কথা৷
ওদিকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে চারিদিকে সাজ সাজ রব৷ রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে বিজেপির পতাকা এবং হোর্ডিং-এ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই উপত্যকা বিশ্বের অন্যতম সুন্দর জায়গা৷ কিন্তু এখানকার মানুষ নানা সমস্যার সন্মুখীন৷
কাশ্মীরের জনগণের মন জয় করতে এবং রাজ্যের উন্নতিকল্পে এক গুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ বলেন, লাদাখে তাঁর সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে উঠবে তিনটি ‘প'-এর ওপর নির্ভর করে৷ এই তিনটি ‘প' হলো প্রকাশ বা বিদ্যুৎ, পরিবেশ ও পর্যটন৷
রাজ্যের পরিকাঠামোর উন্নয়নে আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি লেহ থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত ৩৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইনের শিলান্যাস করেন৷ উদ্বোধন করেন নিম্মো-বাজগো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের৷ এই সব উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁর সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর স্বপ্নকে সাকার করে তুলবে৷
লেহ থেকে প্রধানমন্ত্রী যান কারগিলে৷ ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ী সরকারের আমলে কারগিল যুদ্ধ জয়ের স্মৃতি এখনো তাজা আছে ভারতবাসীর মনে৷ উল্লেখ্য, ঐ অঘোষিত যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কারগিলে অনুপ্রবেশ করেছিল৷ কিন্তু ঐ সময়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আজকের নওয়াজ শরিফ৷ তৎকালীন সেনা প্রধান পারভেজ মুশারফ তাঁকে কিছুই জানতে দেননি৷ আজও সেনাবাহিনীর আধিপত্য এতটাই যে দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিদেশ নীতিতে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হলেও, সেনাবাহিনীর চাপে নওয়াজ শরিফ বেশি দূর এগুতে পারেননি৷ সে দিনের সেই যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী কারগিল সফরে গেলেন৷ কারগিলের চুটাক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করে মোদী বলেন, কারগিলবাসীর দেশপ্রেম গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে৷ এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং শিল্পোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন মোদী৷
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, মোদীর ‘মিশন কাশ্মীর' যতটা না সরকারি তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক৷ গত সংসদীয় নির্বাচনে রাজ্যের তিনটি আসনই পেয়েছিল বিজেপি৷ এ বছরের শেষ নাগাদ জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচন৷ তার প্রচারের কাজও কিছুটা এগিয়ে রাখলেন মোদী৷ কারণ রাজ্যের ৮৭টি বিধানসভা আসনের সিংহভাগ দখল করে বিজেপি সরকার গঠনকেই এখন পাখির চোখ করেছেন মোদী৷ এইসব উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা হয়ত সেদিকে তাকিয়েই৷