পৃথিবীর মতো গ্রহ আবিষ্কারে চাঞ্চল্য
২৪ জুলাই ২০১৫অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানের স্পৃহা এমন একটা সময় থেকে চলে আসছে, যখন এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি শুধু কল্পনা বা কল্পবিজ্ঞানের জগতেই পাওয়া যেত৷ তারপর বিচ্ছিন্নভাবে মহাকাশ থেকে রেডিও সংকেত শোনার উদ্যোগ শুরু হলো৷ তারপর এলো ‘সেটি' বা ‘সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স' নামের এক সার্বিক উদ্যোগ৷ এর মধ্যে পাইওনিয়ার ও ভয়েজার মহাকাশযান পৃথিবীর মানুষের বার্তা নিয়ে রওনা হয়ে আমাদের সৌরজগত ছেড়ে মহাকাশের গভীরে চলে গেছে৷ প্রযুক্তির আরও উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন উদ্যোগও যোগ হয়েছে৷ আমাদের সৌরজগত ও পৃথিবীর মতো গ্রহের সন্ধান এর অন্যতম৷ ‘এক্সোপ্ল্যানেট' পর্যায়ের গ্রহগুলির পরিবেশ প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়৷ কিন্তু শতশত আলোকবর্ষ দূরের এই সব জগত সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা আজও মানুষের হাতে আসেনি৷ তবে বিজ্ঞানীদের কাছে এটা প্রথম পদক্ষেপ৷'
এমনই এক ‘এক্সোপ্ল্যানেট'-এর আবিষ্কার নতুন করে আলোড়ন তুলেছে৷ সিগনাস নক্ষত্রমণ্ডলের এই গ্রহটি প্রায় ১,৪০০ আলোকবর্ষ দূরে৷ নাসা-র কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ এটির সন্ধান পেয়েছে৷ আপাতত তার নাম রাখা হয়েছে কেপলার-৪৫২বি৷ গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বড়৷ সেটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে, সেটি আয়তন ও উত্তাপের নিরিখে আমাদের সূর্যেরই মতো, তবে তার বয়স বেশি৷ বয়সের বিষয়টি প্রাণের সম্ভাবনার জন্য বিশেষ তাৎপর্য রাখে৷ কারণ প্রায় ৬০০ কোটি বছর প্রাচীন এই নক্ষত্রের কাছে গ্রহটি এত সময় কাটিয়েছে৷ ফলে সেখানে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করেন নাসা-র বিজ্ঞানী জোন জেনকিন্স৷ গ্রহটির এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে৷ গ্রহটির সঙ্গে নক্ষত্রের দূরত্ব পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্বের তুলনায় সামান্য বেশি৷ অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, এই গ্রহের পৃষ্ঠ বেশ পাথুরে, বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত ঘন এবং হয়ত সেখানে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিও রয়েছে৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ৷
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে কেপলার টেলিস্কোপ আমাদের সৌরজগতের কাছের নক্ষত্রগুলিতে পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ করে চলেছে৷ এখনো পর্যন্ত মোট ১,০৩০টি গ্রহ নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা গেছে৷ তাছাড়া প্রায় ৪,৭০০ ‘প্রার্থী' গ্রহ রয়েছে৷ ১১টি গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর বিশেষ মিল পাওয়া গেছে, যেগুলির মধ্যে ৯টির নক্ষত্র আমাদের সূর্যের মতো৷
অন্য গ্রহে প্রাণীদের খোঁজার ক্ষেত্রে সম্প্রতি আরও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং গত সোমবারই প্রায় ১০ কোটি ডলার মূল্যের এক ১০ বছর ব্যাপী প্রকল্প চালু করেছেন৷ রুশ শিল্পপতি ইউরি মিলনার ‘ব্রেকথ্রু লিসন' নামের এই উদ্যোগের অর্থায়ন করছেন৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বুদ্ধিমান প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করাই এর উদ্দেশ্য৷ ব্রহ্মাণ্ডের এত গভীরে এর আগে অনুসন্ধান চালানো হয়নি৷ আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আরও ভালোভাবে তাদের পাঠানো সংকেত খোঁজা সম্ভব৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাবে, তা সব মানুষের নাগালে রাখা হবে৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)