প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার চীনের
২ মে ২০১৩ভারত-চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সরকারিভাবে চিহ্নিত না হওয়ার সুযোগে ১৫ই এপ্রিল থেকে লাদাখ সেক্টরের ১৯ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পর পর মোট পাঁচটি সামরিক তাঁবু বসিয়েছে চীন৷ ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, সেখানে মোতায়েন চীনের জনা ৩০ সেনাকর্মী, কিছু সামরিক যান এবং নজরদারির সরঞ্জাম৷ হালচাল দেখে এসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভাকে একথা জানিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছে চীনের এটা সুপরিকল্পিত এবং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল৷''
পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে প্রশ্ন করায় তিনি বিষয়টিকে এক স্থানীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেন, যা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে৷ উত্তেজনা বাড়তে দেয়া হবে না৷ এই ব্যাখ্যায় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা যে-কোনো জায়গায় লঙ্ঘন করলে সেটাও তো স্থানীয় ঘটনাই হবে৷ এইভাবে চীন অনুপ্রবেশ করে যাবে আর ভারত শুধু প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাবে৷ এমনটা চলতে থাকলে ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারে চীন৷
কোনো কোনো সমর বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই অবস্থায় চলতি মাসের ৯ তারিখ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশীদের বেজিং সফরে এবং চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশের মাথা হেঁট হবে৷ একটি চীনা প্রবাদ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁরা বলেন, চীন শক্তের ভক্ত, নরমের যম৷ তাই এরইমধ্যে তিনটি ফ্ল্যাগ মিটিং হয়ে গেছে বটে, কিন্তু বরফ গলেনি৷ দখল করা এলাকা চীন না ছাড়লে ভারত কীভাবে তার জবাব দেয়, আদতে সেটাই দেখতে চায় চীন৷ তারওপর ভারত যে শুধু নিজের শক্তিতে চীনের মোকাবিলা করতে পারবে না, এমন একটা ধারণা পোষণ করে বেজিং৷
সব থেকে লক্ষণীয় বিষয়, এই নিয়ে সংসদে সরকারের তরফে না কোনো বক্তব্য রাখা হয়েছে, না কোনো বিবৃতি দেয়া হয়েছে৷ তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, সরকার বিষয়টিকে খুব হাল্কাভাবে নিয়েছে৷ বিরোধী দলগুলি অবশ্য সংসদে এই ইস্যু তুলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বেজিং সফর বাতিল করার দাবি তুলেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা জানতে চেয়েছে, কেন সরকার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে? কেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং) কড়া মনোভাব নিচ্ছেন না?
এর কারণ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে মতপার্থক্য আজকের নয়৷ কিন্তু আলোচনাই যে এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ, চীনের আচরণ সেকথা বলছে না৷
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৩ সাল থেকে চীনের অনুপ্রবেশের ধরণ হলো, এলএসি পেরিয়ে বসতিহীন এলাকায় পশুচারকদের ভয় দেখিয়ে, তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা৷ তাঁদের মতে, তবে কী চীনের চূড়ান্ত লক্ষ্য সিয়াচেন?