1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিযোগিতার ফল যেন মিষ্ট হয়

২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের খবর সংগ্রহ ও ফল প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেখা যায় গণমাধ্যমগুলোতে৷ সেই প্রতিযোগিতার কারণে ভুলও হয়৷ সংখ্যায় ওপরে না থেকে মানে ওপরে থাকার প্রতিযোগিতা বেশি জরুরি৷

https://p.dw.com/p/3AZIO
ছবি: picture-alliance/ZB

২০০৮ সালের কথা৷ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন৷ আমি তখন বাংলাভিশনের হয়ে নির্বাচন কাভার করতে খুলনায়৷ ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ছিলাম ছাত্র৷ তাই প্রথমবার জাতীয় নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে যারপরনাই ছিলাম উচ্ছ্বসিত৷

এ এক বিরাট যজ্ঞ৷ তখন কোনো টিভি চ্যানেলের স্থায়ী কোনো স্টুডিও ছিল না খুলনায়৷ তাই প্রথমে স্টুডিও'র জন্য রুম খোঁজা, তারপর সেটিকে সাউন্ডপ্রুফ করা, সেট বানানোসহ বিরাট দায়িত্ব নিয়ে ভোটের দু'সপ্তাহের বেশি সময় আগে গেলাম সেখানে৷ প্রথম দু-তিন দিন তো গেল এসব করতেই৷ এরপর শুরু হলো স্টুডিও লাইভ, নিউজ প্রেজেন্টেশন এসব৷

প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে রিপোর্ট করা এবং পরে সন্ধ্যা ৭টা ও ১০ টার নিউজে লাইভ দিয়ে পরে রাতের টকশো-তে আলোচনায় যোগ দিয়ে বের হতে হতে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১২টা৷ এরপর রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে যেতে যেতে দেড়টা-দু'টা৷ অন্য চ্যানেলগুলোতে চোখ বুলিয়ে পরের দিনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ৩-৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়া৷ এরপর সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ আবার বেরিয়ে পড়া৷ বলাই বাহুল্য, শুধু আমি নই, সে সময় আমার সঙ্গে খুলনায় ছিল একটা বড় টিম৷ সেই টিমে প্রডিউসার, ক্যামেরাপার্সন, ভিডিও এডিটরসহ অনেকেই ছিলেন৷ সবাই এমন পরিশ্রম করেছেন৷

২৮ তারিখ নির্বাচন হলো৷ ৩০ তারিখ পর্যন্ত এভাবেই কেটেছে৷ নির্বাচনের রাতে মহাকাণ্ড৷ খুলনা ২ আসনে বিএনপি থেকে মঞ্জু ও আওয়ামী লীগ থেকে মিজান দাঁড়িয়েছেন৷ খুব অল্প ব্যবধানে বিএনপি'র মঞ্জু জিতলেও ফলাফল মিলেছে ২৯ তারিখ ভোরে৷ ভোর ৫টা বা ৬ টার দিকে ঢাকায় সকালে নিউজ এডিটর ছিলেন বায়েজিদ মিল্কি ভাই৷ তিনি নিজেই স্টুডিওতে ঢুকে নিউজ পড়ে লাইভে যোগ দিলেন আমার সঙ্গে৷

তারুণ্যের উচ্ছ্বলতা আর আগ্রহ গায়ে লাগতে দেয়নি এতটা পরিশ্রমকে৷ আমার ধারণা, যাঁরা নিয়মিত বা অনিয়মিত রাজনৈতিক খবর সংগ্রহের কাজটি করেন, তাঁদের জন্য নির্বাচন একটা উৎসব৷ বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন৷ প্রতি পাঁচ বছরে জাতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি৷

তাই একে নিয়ে ভোটার, প্রার্থী, রাজনৈতিক কর্মীদের মতো সাংবাদিকদের মাঝেও তীব্র উত্তেজনা কাজ করে৷ সেই সঙ্গে কাজ করে প্রতিযোগিতার মানসিকতা৷ এখন অনেক পত্রিকা, অনলাইন ও টিভি চ্যানেল৷ আগে ব্রেকিং নিউজ দেবার প্রতিযোগিতা টিভি আর দু-একটি অনলাইন মাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ সে সময়েই দেখেছি, খবর সবার দেবার প্রতিযোগিতা কখনো কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ এখন তো বলাই বাহুল্য৷ সব পত্রিকার অনলাইন ভার্সনও আছে৷  আর টিভি ও অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা বেড়ে চলেছে অবিরাম৷ বিশেষ করে নির্বাচনের ফলাফল দেবার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতার কাতারে থাকে না৷

বিকেলের পর থেকেই একেকটি নির্বাচনি এলাকার কেন্দ্রগুলোর ফল আসতে শুরু করে স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে৷ কাছাকাছি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল আগেই চলে আসে খামবন্দি হয়ে, যা খোলা হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে৷ সেখানে এই ফলাফল পড়তে শুরু করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা৷ তিনি যতক্ষণ না পড়বেন, ততক্ষণ এই ফলাফলকে ‘অফিসিয়াল' বলা যাবে না৷

কোনো আসনের সবগুলো কেন্দ্রের ফলাফল আসার পর তিনি বেসরকারিভাবে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে থাকেন৷ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ৷ কিন্তু বিষয় হলো, এর আগেই হয়তো পুলিশ বা অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে অথবা স্থানীয় প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনেক সাংবাদিক ফলাফল সংগ্রহ করে থাকেন৷

সেই খবরটিই দিয়ে দেন৷ তাতে দেখা যায়, অনেক আসনে অনেক প্রার্থীকে তাঁরা বেসরকারিভাবে নির্বাচিতই ঘোষণা করে দেন, অথচ রিটার্নিং কর্মকর্তা হয়তো ততক্ষণে ১০ ভাগ রেজাল্ট পড়েছেন সেই আসনের৷

এভাবে দেখা যায়, অনেক চ্যানেল বা অনলাইনে কে কার চেয়ে বেশি ফল দিয়ে এগিয়ে থাকতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা চলে৷ এতে ভুলও হয়৷ দেখা যায়, ভোটের সংখ্যা শেষদিকে ঠিক মিলছে না৷ আরো বড় ও কঠিন ভুলও হয়৷

HA Asien | Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

এমন উদাহরণ অনেক পাওয়া যাবে৷ একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় চোখের সামনেই অনেক বড় ভুল করতে দেখেছি৷ কিন্তু প্রতিযোগিতায় সবাই যে নামে তা-ও নয়৷ অনেকেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না গিয়ে ধীরস্থিরভাবে কিন্তু সঠিক ফলাফল দেয়ার চেষ্টা করেন৷

ভোট একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ এখানে অনিচ্ছাকৃত দু-একটি ভুল হতে পারে৷ তবে প্রতিযোগিতায় ভেসে গিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে ভুল করাটা কাম্য নয়৷ প্রতিযোগিতা বিষয়টি সমর্থনযোগ্য, তাতে যদি পেশাদারিত্বের উন্নতি হয়৷ তাই ভুল এড়িয়ে কীভাবে বিষয়টি করা যায় তা দেখা উচিত৷  কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করবার আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা আইনগতভাবেই সিদ্ধ৷ যদি কারো কাছে কোনো প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয়ের তথ্যও থাকে, তাহলেও তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করার দায়িত্ব গণমাধ্যমের নয়৷ অন্যভাবে প্রচার করা যেতে পারে৷

এবারের নির্বাচনেও হয়তো অনেকেই এমন প্রতিযোগিতায় নামবেন৷ আবার কেউ কেউ দায়িত্বশীলতার চমৎকার উদাহরণ তৈরি করবেন৷ প্রত্যাশা থাকল, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়াদের দল এবার ভারী হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান