প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে লেজার প্রযুক্তি
২২ আগস্ট ২০১৬অতীতের রহস্য সমাধানের লক্ষ্যে গবেষকরা আকাশে পাড়ি দিচ্ছেন৷ আধুনিক লেজার প্রযুক্তির কল্যাণে সেখান থেকে অচেনা নির্মাণ কাঠামো চিহ্নিত করা সম্ভব৷ লেজার স্ক্যানার গাছপালা, ঝোপঝাড়, ঘাসের আড়ালে জমি দেখতে পায়৷ সেটাই হলো কৌশল৷
এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ইউরোপের একদা সবচেয়ে বড় নির্মাণের নিদর্শন নতুন করে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাইমেস-এ রোমান আমলের সেই সীমান্ত প্রাচীর অনেক জায়গায় অদৃশ্য হয়ে পড়েছিল৷ প্রত্নতাত্ত্বিক মার্টিন শাইখ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না, এমন ফ্ল্যাট চিহ্নও ফুটে ওঠে৷ লেজার স্ক্যানের মাধ্যমে অবশ্য তা অত্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়৷ অবশিষ্ট অংশ চোখে পড়ে৷ হয়তো মাটির ১০ সেন্টিমিটার উপরে থাকা সত্ত্বেও তা জঙ্গলে ঢেকে যায়৷ তার উপর দাঁড়ালে এমনকি বিশেষজ্ঞও সেটি চিনতে পারেন না৷''
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় এলাকা স্ক্যান করা যায়৷ আলোর গতিতে যন্ত্র মাটি থেকে দূরত্ব পরিমাপ করে৷ সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়, সাধারণ গাছপালার নীচে বড় আকারের কোনো কাঠামো আছে কিনা৷ মার্টিন বলেন, ‘‘লাইমিস নিয়ে গবেষণার ১০০ বছরেরও বেশি পুরানো দীর্ঘ ইতিহাস আছে৷ কেউ ভাবে নি, যে নতুন কিছু পাওয়া যাবে৷ তা সত্ত্বেও নতুন টাওয়ার, রক্ষীদের টাওয়ার, কাঠের বাড়িঘরের চিহ্ন উদ্ধার হয়েছে৷ ছোট কিছু দুর্গও আবিষ্কার করা গেছে৷ অর্থাৎ এই তথ্য ঘেঁটে নতুন কিছু পাবার সম্ভাবনা রয়েছে৷''
২,০০০ বছর আগে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিশাল কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছিলো৷ প্রায় ৯০০ রক্ষীর চৌকি ছাড়াও সেখানে ছিল ১২০টি ছোট-বড় চত্বর৷ এই কাঠামো বহিরাগতদের হামলা মোকাবিলার জন্য নির্দিষ্ট ছিল৷ প্রকৃতি তার প্রায় পুরোটাই গ্রাস করে নিয়েছে৷
লেজার স্ক্যানারের তথ্য না থাকলে তা জানা যেত না৷ তার ভিত্তিতে অচেনা রক্ষীদের টাওয়ার আবার ভার্চুয়াল উপায়ে নির্মাণ করা সম্ভব৷ ধ্বংস হয়ে যাওয়া টাওয়ার অবিকল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে৷ গবেষকদের জন্য এ একেবারে নতুন এক অভিজ্ঞতা৷ যেমন এভাবে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা বলয়ের উপর নতুন করে আলোকপাত করা সম্ভব৷ মার্টিন শাইখ বলেন, ‘‘টাওয়ারগুলির মধ্যে যোগাযোগ, কে কোন এলাকার দায়িত্ব পেয়েছিল – আমাদের কাছে যে থ্রিডি তথ্য রয়েছে, তা থেকে এ সব স্পষ্ট হয় যায়৷ সেই তথ্য দিয়ে প্রত্নতত্ত্বের কাজ আরও গভীরভাবে করার রোমাঞ্চই আলাদা৷
লেজার-ভিত্তিক বিশ্লেষণ লাইমেস-এর দীর্ঘদিনের রহস্য উন্মোচন করেছে৷