রাডার স্যাটেলাইট
৮ মার্চ ২০১৬সারা বিশ্বে বিজ্ঞানীরা এই তথ্য ব্যবহার করেন৷ যেমন বার্লিনের কাছে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানীরা৷ একটি মানচিত্রে হয়তো দেখা যাচ্ছে, তেহরানের কাছে ভূগর্ভস্থ পানি বেশিমাত্রায় নিষ্কাশনের ফলে মাটি কতটা বসে গেছে৷
জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস-এর সার্ভেয়র ড. মাহদি মোতাঘ বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক অথবা মানব গতিবিধির ফলে যে সব বিপত্তির সৃষ্টি হয়, আমরা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া রাডার তথ্য ব্যবহার করে তার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব যাচাই করার চেষ্টা করি – যেমন দক্ষিণ অ্যামেরিকার চিলি অথবা মধ্য এশিয়ার কিরঘিজস্তান বা ইরানে৷''
রাডার সিগনাল দিয়ে যে শুধু শহর-নগর সার্ভে করা য়ায়, এমন নয়৷ ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বনজঙ্গল সার্ভে করার জন্য এই ডাটা ব্যবহার করছেন৷
তারা জানতে চান, জঙ্গলের একটি বিশেষ অংশে কি পরিমাণ গাছপালা, পাতা ইত্যাদি, অর্থাৎ বায়োমাস বা উদ্ভিদ পদার্থ আছে অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গজিয়েছে৷
এ যাবৎ বিজ্ঞানীদের লেজার সার্ভেয়িং ইকুইপমেন্ট নিয়ে জঙ্গলে যেতে হতো৷ শীঘ্রই তার প্রয়োজন ফুরোতে পারে, কেননা মহাকাশ থেকে পাঠানো ডাটাও সঠিক তথ্য দিতে পারে৷ বিশ্বের বনজঙ্গল-বনানীর কতটা কার্বন ডাইঅক্সাইড ধরে রাখার ক্ষমতা আছে, জলবায়ু সংরক্ষণের জন্য তা জানা প্রয়োজন৷ জঙ্গলের মালিকরাও জানতে চান, গাছপালা কত তাড়াতাড়ি বাড়ছে৷ এ সব তথ্য পাওয়া যায় রাডার ডাটা থেকে৷
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও রাডার স্যাটেলাইট খুব কাজে লাগে৷ ডিএলআর সংস্থার যে নিজস্ব সংকট নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র আছে, সেখান থেকে খুব তাড়াতাড়ি একটি ভূমিকম্প বা বন্যাপীড়িত এলাকার রাডার ছবি একত্রিত করা যায়৷
ভূবিজ্ঞানী ড. টোবিয়াস শ্নাইডারহান বলেন, ‘‘বিশেষ করে বড় রকম বন্যা হলে, আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে, অপটিকাল ডাটা পাওয়া যায় না – কেননা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যায় না৷ তখন সত্যিই রাডার ডাটার প্রয়োজন পড়ে, কেননা রাডার তরঙ্গ মেঘ ভেদ করে যেতে পারে৷ কাজেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের রাডার ডাটা ব্যবহার না করে উপায় নেই৷
এই অ্যানিমেশনটায় জার্মানিতে বন্যার ফলশ্রুতি দেখা যাচ্ছে৷ বন্যাপীড়িত এলাকার উপর ডিএলআর-এর যে দু'টি স্যাটেলাইট স্থাপন করা ছিল, সেগুলোর পাঠানো রাডার ডাটার ওপর ভিত্তি করেই এই ছবি তৈরি করা হয়েছে, চলতি মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে৷ ড. শ্নাইডারহান বললেন, ‘‘স্পষ্ট দেখা যায়, কোন শহরগুলো বন্যায় ভেসে গেছে৷ কোন বাড়িতে জল ঢুকেছে, কোনো গাড়ি জলে আটকা পড়েছে কিনা, কোন কোন রাস্তা এখনও ঠিক আছে আর কোনগুলোতে জলে ডুবেছে৷''
এই ডাটা থেকে পুলিশ, ত্রাণকর্মী, রেড ক্রস ইত্যাদিরা জানতে পারেন, কোথায় সাহায্য দরকার, কোথায় মানুষজন বিপদে পড়েছেন, কোথায় বন্যার প্রকোপ বেশি বা কম৷ ডিএলআর এভাবে জাতিসংঘের জন্যও ম্যাপ তৈরি করেছে৷
দু'টি নতুন স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ এই দু'টি স্যাটেলাইট ভূমিকম্প, বৃক্ষশূন্যতা বা মরুকরণের পরিমাপ নিতে পারবে – বিপর্যয় ও সংকটের ক্ষেত্রে যে তথ্য বিশেষভাবে কাজে লাগবে৷