মুসলিমদের চোখে মোদী
১২ মার্চ ২০১৪ভারতে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী মাসে৷ প্রচার অভিযান চলেছে জোরেসোরে৷ বিতর্ক শুরু হয়েছে মুসলিম ভোট নিয়ে৷ বিজেপির প্রচার অভিযানে একটা শব্দবন্ধ এখন ঘুরে ফিরে আসছে৷ সেটা হলো ‘মুসলিম বনাম মোদী' ফ্যাক্টর৷ অর্থাৎ ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণে মুসলিম ভোট কি নির্ধারক ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে? সন্দেহ নেই, আসন্ন নির্বাচনে মুসলিম ভোট অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর৷ কিন্তু এটা নতুন কিছু নয়৷ গত ৬০ বছর সব ক'টি নির্বাচনেই তা ছিল৷ কাজেই ভারতের ১৭ কোটি মুসলিম ভোট নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে আটকাতে পারবে কিনা, এই প্রশ্ন অর্থহীনও অযৌক্তিক৷
বাস্তব সত্য হলো, মুসলিম সম্প্রদায় মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে না চাইলেও কিছু এসে যায় না৷ যদি যেত, তাহলে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পরে মোদী উপর্যুপরি তিনবার নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে হ্যাট্রিক করতে পারতেন না৷ সেটা মোদী স্বয়ং এবং তাঁর দল বিজেপি বিলক্ষণ জানেন৷ তা না হলে বর্তমান নির্বাচনে মোদী নতজানু হয়ে মুসলিমদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করতেন৷ মোদী বা বিজেপি জানে তাঁর নির্বাচনি ভাগ্য নির্ধারণ করবে যতটা না মুসলিম ভোট, তার চেয়ে অনেক বেশি উদারপন্থি হিন্দু ভোট৷
মোদী বনাম মুসলিম ভোট বিতর্কে ‘মোদী-ভীতির' একটা ভ্রান্ত ধারণা মুসলিম মানসিকতায় গেঁথে দিয়েছে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলি৷ ভীতির ছবিটা এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বে মুসলিমরা নিরাপদবোধ করবে না৷ মুসলিম ভোট নিজেদের দিকে টানতেই যে এটা করা হচ্ছে সেটা বোঝা কঠিন নয়৷ তবে মোদীর প্রধানমন্ত্রী হবার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে একটা অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছে মুসলিম সমাজ৷ এটাকে ঠিক আতঙ্ক নয়, একটা উদ্বেগ বলা যায়৷
ভারতীয় মুসলিমদের এতটা নির্বোধ ভাবার কারণ নেই যে, ১৬ই মে ভোট গণনার দিন তাঁরা নিদ্রাহীন রাত কাটাবে৷ পাশাপাশি সব মুসলিমই মোদী বিরোধী নয়৷ মুসলিমদের একাংশ মোদীকে ভোট দিতে পারে এমনটাই অনেকের ধারণা৷ কথায় আছে ‘শত্রু নিধন সম্ভব না হলে, তার সঙ্গে হাত মেলানোই শ্রেয়'৷ আসলে মোদীকে তাঁরা যতটা না ভয় পায়, তার চেয়ে ঘৃণা করে বেশি৷ নীরব দর্শক হয়ে গুজরাট দাঙ্গাকে বাড়তে দিয়েছিলেন মোদী – এই ধারণাটা বদ্ধমূল মুসলিম জনমানসে৷ গুজরাট দাঙ্গার নৃশংসতায় মোদীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়৷
অতি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জনৈক মৌলবির কাছ থেকে ‘স্কাল ক্যাপ' বা টুপি নিতে অসম্মতি প্রকাশ করে মোদী মন্তব্য করেছিলেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে' তিনি বিশ্বাসী নন৷ কোনো কোনো মহলে এটার ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, এতে নাকি প্রমাণ হচ্ছে মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারেন৷ আসলে হবে তার বিপরীত৷ অখণ্ড, ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী ভারতের জাতীয় জীবনের মূলস্রোতের বাইরে আছে – এমন মনে করা মুসলিম সম্প্রদায়কে তাতে সামিল করার চেষ্টা হবে৷
বিজেপির অনেক নেতাই দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে মুসলিম সমাজের আস্থা ফেরাতে প্রয়াসী হবেন৷ স্মরণ করা যেতে পারে, ৯০-এর দশকে বাবরি মসজিদ ভাঙায় বিজেপির শীর্ষ নেতা এল কে আডভানির ভূমিকা ছিল৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন মুসলিমদের বিষনজরে৷ কিন্তু তিনি যখন বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তখন তিনি তাঁর হিন্দুত্ববাদী তকমা ঝেড়ে ফেলে উদারপন্থি হিন্দু নেতা বলে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেছিলেন৷