প্রাণীর মাথার খুলির আয়তনের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক
১ নভেম্বর ২০২২কোন কোন বিষয় স্তন্যপায়ী প্রাণীরমস্তিষ্কের মাপ ও বুদ্ধিমত্তা নির্ণয় করে? জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী সান্ড্রা হেল্ডস্টাব সে বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তিনি বিভিন্ন প্রজাতির মাথার খুলি পরীক্ষা করছেন৷
মস্তিষ্কের আয়তন পরিমাপ করতে তিনি খুলির মধ্যে সীসার পেলেট ভরে দেন৷ এমনই একটি নমুনা তুলে ধরে সান্ড্রা হেল্ডস্টাব বলেন, ‘‘এটি ম্যাকাক অর্থাৎ আদি বানর প্রজাতির খুলি৷ তাতে প্রায় ১০০ মিলিমিটার ভরা যায়৷ অর্থাৎ গ্রাউন্ডহগের তুলনায় অনেক বেশি জায়গা রয়েছে৷ সেটিতে মাত্র ১৫ মিলিমিটার জায়গা রয়েছে৷ অর্থাৎ সেই মস্তিষ্কের আকার আট গুণ কম৷ এবার ডেটাবেসে সেই তথ্য যোগ করতে হবে৷''
গবেষকরা নানা স্তন্যপায়ী প্রজাতির এক হাজার ২০০ মস্তিষ্ক তথ্যভাণ্ডারে সংগ্রহ করেছেন৷ সান্ড্রা হেল্ডস্টাব ও তার এক সহকর্মী সিংহভাগ কাজ করেছেন৷ মাসের পর মাস ধরে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিউজিয়াম ঘুরে খুলির মধ্যে সীসার পেলেট ভরে পরিমাপ করেছেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সান্ড্রা বলেন, ‘‘তিমির মাথার খুলি পরিমাপের কাজ আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনা ছিল৷ সেটি ছিল স্পার্ম হোয়েল৷ ১০ লিটারের বালতি দিয়ে আমরা তার মধ্যে পেলেট ভরেছিলাম৷ সেটা দিয়ে খুলির অর্ধেক অংশ ভরা সম্ভব হয়েছিল৷ সত্যি অসাধারণ অভিজ্ঞতা৷ স্পার্ম হোয়েলের কঙ্কাল বিশাল৷ খুলিটির আয়তনই আমাদের থেকে অনেক বেশি৷ ছোট ছোট পেলেট দিয়ে আমরা সেটি ভরিয়ে দিয়েছিলাম৷''
বিবর্তনের নিরিখে মস্তিষ্ক ঠিক কোন পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠে, সান্ড্রা তা জানতে চান৷ মস্তিষ্কের যে অনেক শক্তি লাগে, তা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ অর্থাৎ বেড়ে ওঠার জন্য মস্তিষ্কের সব সময়ে ‘খোরাক'-এর প্রয়োজন৷
বিবর্তন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী হিসেবে সান্ড্রা নানা বই ঘেঁটে কোনো প্রজাতির মস্তিষ্কের আয়তনের উপর প্রভাব রাখে, এমন বিষয়গুলি যাচাই করেন৷ যেমন সেই প্রজাতি কী খায়? কীভাবে বসবাস করে?
গোষ্ঠীগত আচরণের মতো সামাজিক বিষয় এবং শাবকদের মানুষ করার পদ্ধতিও বিবেচনা করা হয়৷ যেমন দেখা গেছে, যে সব প্রাণী হাইবারনেশন বা শীতঘুমে অভ্যস্ত, সেগুলির মস্তিষ্ক সাধারণত ছোট হয়৷ তাছাড়া মাংসাশী প্রাণীর মস্তিষ্ক তৃণভোজী প্রাণীর তুলনায় বড় হয়৷
একাধিক গবেষণা অনুযায়ী যে কোনো প্রাণীর মস্তিষ্কের আয়তনের সঙ্গে সেটির বুদ্ধিমত্তার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে৷ যেমন একটি গবেষণায় ৩৯টি মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে তুলনা করে জানা গেছে, যে শরীরের ওজনের সঙ্গে মস্তিষ্কের আয়তনের অনুপাত সেই প্রাণীর দক্ষতা বা পারদর্শিতার মাত্রার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত৷
প্রাণীর খোরাক, কম বয়সে কতটা নির্ভরযোগ্যভাবে সেই খাদ্য জোগাড় করা যায়, এমন বিষয়ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য জরুরি বলে এখন জানা গেছে৷ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সান্ড্রা হেল্ডস্টাব বলেন, ‘‘আমরা সদ্য জানতে পেরেছি, যে খাদ্যের জোগান নির্ভরযোগ্য হতে হবে৷ যেমন শাবকরা কখনো গর্তে খাবার নিয়ে এসে কাউকে না পেয়ে নিজেরাই সেই খাবার খেয়ে নেয়৷ বাবা-মা সেটা করে না৷ পরিবেশগত পরিস্থিতি খারাপ হলে বরং বাবা নিজের ক্ষুধা চেপে রেখে শিশুদের জন্য আরও বেশি খোরাক নিয়ে আসে৷''
নিরাপদে উচ্চ ক্যালেরিসম্পন্ন খাদ্য, ধীর গতিতে বৃদ্ধি এবং সামাজিক স্তরে শিক্ষাই বড় মস্তিষ্কের বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব নিশ্চিত করে৷
সান্ড্রা ওডারমাট/এসবি