প্রিন্টারে তৈরি হচ্ছে আস্ত বাড়ি
২৩ আগস্ট ২০১৪এমনকি চাঁদে মানুষের ঘাঁটি গড়ার ক্ষেত্রেও থ্রিডি প্রিন্টার হয়ে উঠতে পারে সাফল্যের চাবিকাঠি৷
বিশাল একটি থাম তৈরি হয়েছে এক প্রিন্টারের সাহায্যে৷ ১৬ বর্গ মিটার বড়, আড়াই মিটার উঁচু এবং ১১ টন ভারি একটি ঘরের অংশ এটি৷ এই প্রথম একটা গোটা ঘর ‘প্রিন্ট' করা হলো৷ কৃত্রিম স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি কারুকার্য করা এই কাঠামো অনেকটা গথিক ক্যাথিড্র্যালের মতো দেখতে৷ স্থপতি মিশায়েল হানসেমায়ার বলেন, ‘‘অতীতে, প্রাক-আধুনিক যুগে আমরা দেখেছি স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একেবারে খুঁটিনাটি স্তর পর্যন্ত ভাবা হতো৷ বারক বা রকোকো গির্জায় আজও তা দেখা যায়৷ কিন্তু অনেক সময় লাগতো৷ বছরের পর বছর ধরে শিল্পীরা কাজ করতেন৷''
স্থপতিরা কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁদের পরিকল্পনা প্রস্তুত করে ফেলেছেন৷ একটি অ্যালগোরিদম দিয়ে তাঁরা প্রতিটি কোণ মাপেন৷ তারপর এমন সব আকার-আকৃতি সৃষ্টি হয়, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে হাত দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়৷ একমাত্র থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়ায় এটা করা সম্ভব৷ স্থপতি বেনইয়ামিন ডিলেনবুর্গার বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রচেষ্টার সীমা হলো তার স্কেল, তার সূক্ষ্মতা৷ এই প্রযুক্তি আসায় এই প্রথম জ্যামিতির ক্ষেত্রে আর কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না৷''
মাত্র দু'দিনেই থ্রিডি প্রিন্টার পাতলা বালু দিয়ে স্তর তৈরি করে ফেলে৷ বিশেষ আঠা দিয়ে কৃত্রিম স্যান্ডস্টোনের সঙ্গে তা জোড়া হয়৷ শক্ত হয়ে যাওয়ার পর কাঠামো থেকে বাকি বালু দূর করা হয় এবং আবার কাজে লাগানো হয়৷ তারপর এক একটি অংশ জুড়ে বিশাল কাঠামো গড়ে তোলা হয়৷ মিশায়েল হানসেমায়ার বলেন, ‘‘বাড়তি খরচ ছাড়াই প্রতিটি অংশে আলাদা বৈশিষ্ট্য যোগ করা যায়৷ অর্থাৎ স্থানীয় প্রয়োজন, রুচি, চাহিদা অনুযায়ী তা বদলানো যায়৷ অতীতে এমনটা করা গেলেও এর জন্য অনেক খরচ হতো৷''
নেদারল্যান্ডস-এ আমস্টারডাম শহরের স্থপতিরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন৷ খালের ধারে একটা গোটা বাড়ি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ নির্মাণের জায়গায়ই বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তার অংশগুলি তৈরি হয়৷ তারপর খেলনার বাড়ির মতোই সেগুলি জুড়ে বাড়ি তৈরি হয়৷ স্থপতি হান্স ফ্যারময়লেন বলেন, ‘‘থ্রিডি প্রিন্টিং-এর ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো দ্রুততা ও উপকরণ৷ বেড়ে চলা মেগাসিটির যুগে প্রচলিত নির্মাণ প্রক্রিয়া আর পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছে না৷ তাই আগামী ৫, ১০ বা ২০ বছরে থ্রিডি-প্রিন্টার ভিত্তিক স্থাপত্যের গুরুত্ব বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস৷''
ইউরোপের আরও কিছু স্থপতি প্রিন্টার দিয়ে বাড়ি তৈরির ‘কনসেপ্ট' তৈরি করছেন৷ যেমন আমস্টারডাম শহরের ‘ইউনিভার্স আর্কিটেকচার' কৃত্রিম স্যান্ডস্টোন দিয়ে ‘ল্যান্ডস্কেপ হাউস' তৈরির পরিকল্পনা করছেন৷
ফস্টার অ্যান্ড পার্টনার্স ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে মিলে চাঁদে মানুষের ঘাঁটি গড়ার বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ চাঁদের বালি ব্যবহার করেই প্রিন্টার তার ইঁট-কাঠ তৈরি করবে৷ এছাড়া লন্ডনের ‘সফটকিল ডিজাইন' ভবিষ্যতে অরগ্যানিক বাড়িও ‘ছাপা'-র পরিকল্পনা করছে৷
ডিজিটাল গ্রটেস্ক-ও পিছিয়ে নেই৷ ঘরের ডিজাইন আরও নিখুঁত করে তুলছে তারা৷ বেশি খরচ না করেও যে বাড়ির বাইরের বা ভিতরের দেওয়াল অনবদ্য শিল্প-কীর্তি হয়ে উঠতে পারে, সেটা সম্ভব করাই তাদের লক্ষ্য৷ মিশায়েল হানসেমায়ার বলেন, ‘‘বহুদিন ধরে এটা ছিল বিলাসিতা৷ একশো বছর ফিরে তাকালে দেখবেন, থ্রিডি শুধু রাজা-রানির জন্যই সীমিত ছিল৷ বহু বছর ধরে অনেক মানুষের নিরলস শ্রম তা সম্ভব করে তুলতো৷ এখনও এমন স্বপ্ন দেখার সাধ্য সবার নেই বটে, তবে প্রযুক্তি মানুষের নাগালে এসে গেছে৷''
কৃত্রিম স্যান্ডস্টোন এখনো ঝড়-ঝাপটা সামলানোর মতো মজবুত হয়নি৷ তবে স্থপতিরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, পরিস্থিতি শীঘ্রই বদলাতে চলেছে৷ তখন বিদঘুটে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আর কোনো বাধাই থাকবে না৷