বই কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থের বিরোধীতা
১ নভেম্বর ২০১১বই কেনার জন্য প্রতি মাসে ১৫০ ইউরো – এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বিশেষ করে অনেক জার্মান ছাত্র-ছাত্রীই সমালোচনা করছে জার্মান সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে৷ বার্লিনের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী যারা বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করছে তাদের মতে এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা উচিত অন্য আরেকটি খাতে৷ বিশেষ করে সেসব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের হাতে এই অতিরিক্ত অর্থ তুলে দেয়া উচিত যাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্য নেই৷ সামাজিকভাবে যারা পিছিয়ে রয়েছে৷ তাদের সাহায্য করতে ছাত্র-ছাত্রীরা তৈরি করেছে ‘স্টিপেন্ডিয়ুম স্পেন্ডেন' অর্থাৎ চাঁদা তুলে বৃত্তি দেয়ার একটি সংগঠন৷
এই অর্থ কী সত্যিই অতিরিক্ত?
বেঞ্জামিন পাসেনের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে ৭০ ইউরো বেশি আসছে৷ এই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় বইপত্র সে কিনতে পারবে৷ প্রতি মাসে বেশ দামি একটি বা দুটি বই এই অর্থ দিয়ে কেনা সম্ভব৷এভাবেই বৃত্তিপ্রদানকারী সংস্থা ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুম সাহায্য করছে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ তবে বেঞ্জামিন মনে করছে এই অর্থ মাত্রাতিরিক্ত৷ তার কথায়, ‘‘আমি সত্যি সত্যিই ভাবছিলাম যে শুধুমাত্র বই কেনার জন্য প্রতি মাসে ১৫০ ইউরোর প্রয়োজন নেই৷ এই অর্থ অনায়াসে অ্যাকাউন্টে চলে আসার অর্থ হল এই অর্থের জন্য কিছু করতে হবে না৷ প্রতি মাসে ১৫০ ইউরোর বই কেউই কেনে না৷ এর আরেক অর্থ হল যাদের হাতে টাকা রয়েছে তাদের কাছে প্রতি মাসে আরো কিছু টাকা আসছে৷''
বই কেনার টাকা বাড়ানোর পেছনে রয়েছে বৃত্তিপ্রদানকারী সংস্থা ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুম৷ ২০১০ সালে গোটা জার্মানির মাত্র তিন শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি দিয়েছে সংস্থাটি৷ বাকি বৃত্তি গেছে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে৷ এর পরিবর্তন ঘটাতে ২০১১ সালের গ্রীষ্মকাল থেকে আরেকটি নতুন ধরণের বৃত্তি চালু করা হয়েছে জার্মানিতে৷ ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুমকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান৷ এর ফলে মনে করা হচ্ছে অন্যান্য বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থাগুলোকেও হয়তো বই কেনার অর্থ বাড়াতে হতে পারে৷
সমাজে পিছিয়ে পড়াদের সাহায্য করা হোক এই অর্থ দিয়ে
বেশ কিছু জার্মান ছাত্র-ছাত্রী বই কেনার খাতে এই বৃত্তি বাড়ানোর সমালোচনা করছে৷ তাদের দাবি, অতিরিক্ত এই ৭০ ইউরো অন্য কাজে ব্যয় করা হোক৷ তারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে দাবি জানাচ্ছে, সমাজে পিছিয়ে পড়া পরিবারদের সাহায্য করতে অথবা অভিবাসী পরিবারের কোন সন্তান যার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে অথচ সামর্থ্য নেই– তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে৷ তাদের তৈরি সংগঠন ‘স্টিপেন্ডিয়ুম স্পেন্ডেন' এই অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে অন্যান্যদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক৷ বেঞ্জামিন পাসেন এই সংগঠনের আদর্শে মুগ্ধ৷ বেঞ্জামিন জানায়, ‘‘আমি এই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ আমি অনেক ধরণের প্রশ্ন করেছি৷ কারণ সেখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা অর্থনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে৷ এরা কী নিজেদের ঢাক-ঢোল পেটানোর জন্যই তা করছে, নিজেদের বায়োডাটায় এসব সমাজকর্ম লেখার জন্য? নাকি অন্য কিছু! পরে আমার মনে হয়েছে যদি এরা এসব বলেই থাকে তাহলে তদনুযায়ী কাজ কিছুটা হলেও এরা করবে৷''
এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন ২৫ বছরের ইনেস বুর্কহার্ডট৷ তিনিই শুরু করেছেন ‘স্টিপেন্ডিয়ুম স্পেন্ডেন' সংগঠন৷ ওয়াশিংটনে তিনি অর্থনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ বই কেনার জন্য অর্থ বাড়ানোর আগেই ইনেস অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কথা বলেছেন৷ তিনি জানান, ‘‘অন্য কোন কারণে যদি বই কেনার অর্থ বাড়ানো হত তাহলে আমরা তা সাদরে গ্রহণ করতাম৷ জার্মানিতে এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে বাবা বা মা কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়নি৷ তাদের ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুক আমরা সেটা চাই৷ এরকম অভিবাসী অনেক পরিবারও রয়েছে৷ ডয়েচলান্ড স্টিপেন্ডিয়ুমের আওতায় ১১ হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে৷ তারা সবাই ১৫০ ইউরো মাসে বেশি পাচ্ছে৷ এই অর্থের পরিমাণ সত্যিই অনেক বেশি৷''
তবে সবাই যে এর বিরোধিতা করছে তা নয়৷ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সাদরে গ্রহণ করছে ১৫০ ইউরো৷ তাদের মতে এখন আর লাইব্রেরিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না৷ বইটি কিনে ফেলা যাবে৷ দু সপ্তাহের মধ্যে বই ফেরত দিতে হবে সেই চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যাবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক