1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বরগুনায় দুই প্রেসক্লাবের দ্বন্দ্বে সাংবাদিক মাসউদের মৃত্যু

সমীর কুমার দে
৬ মার্চ ২০২৪

বরগুনায় দু'টি প্রেসক্লাস। একটি বরগুনা প্রেসক্লাব, আরেকটি বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মাসউদকে মারধর করা হয়। তার জেরে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই হয় তার৷

https://p.dw.com/p/4dEWj
বরগুনা প্রেস ক্লাব
বরগুনা প্রেস ক্লাবে আটকে রেখে মারধর করা হয় নিহত তালুকদার মাসউদকে৷ছবি: Mushfiq Arif

মারধরেরে আহত হওয়ার পর হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মাসউদ৷ কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না৷ সে অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক হলে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ শনিবার সেখানেই মারা যান তিনি৷ মাসউদের স্ত্রী সাজেদা এই ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন৷

১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বরগুনা প্রেসক্লাবে সদস্যপদ না পেয়ে ২০১৫ সালে বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তালুকদার মাসউদ৷ সেই থেকে দুই প্রেসক্লাবের মধ্যে চলছিল ‌দ্বন্দ্ব৷

সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ ছিলেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি৷ তিনি একটি আইপি টিভিতেও কাজ করতেন৷ পাশাপাশি বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি৷ দ্বিতীয়বারের মতো তিনি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন গোরাপদ্মা এলাকার আবদুল ওয়াহাব মাস্টারের ছেলে তালুকদার মাসউদ৷ তার স্ত্রী সাজেদা দক্ষিণ চরকগাছি বহুমুখি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা৷ এছাড়া তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বরগুনা পলিটেকনিক্যালের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী আর ছেলে তানহা তালুকদার বরগুনা জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণী ছাত্র৷

সেদিন যা ঘটেছিল  

ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বরগুনা জেলা প্রতিনিধি মুশফিক আরিফ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমিসহ তালুকদার মাসউদ ক্যারাম খেলছিলাম৷ এ সময় ক্লাবে আসেন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ (আ স ম হাফিজ আল আসাদ)৷ তিনি আমাদের দেখেই বলেন, মাসউদকে ক্লাবে কে এনেছে? আরিফ, আপনি এনেছেন? জবাবে আমি বললাম, আমি তো দেখলাম মাসউদ আপনার সঙ্গে এসেছে৷ এ সময় তিনি মোবাইল বের করে ভিডিও শুরু করেন৷ এরপর সদস্য লাউঞ্জে চলে যান৷ কিছুক্ষণ পর আমার মনে হলো, হাফিজ কেন ভিডিও করল? তখন আমি সদস্য লাউঞ্জে গিয়ে মোবাইল বের করে ফাজলামির মতো করে তার দিকে মোবাইল ধরে বলি, ‘এখন আপনি আমাকে ইন্টারভিউ দেন৷ বলেন, কেন ভিডিও করলেন?' আমাদের এই আলাপচারিতার মধ্যে মাসউদও সেখানে হাজির হন৷ এক পর্যায়ে কোনো কথা ছাড়াই হাফিজ উত্তেজিত হয়ে মাসউদের কলার চেপে মারধর শুরু করে৷ তখনও আমি ভিডিও করছি৷ এক পর্যায়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরাপার্সনসহ কয়েকজন মিলে মাসউদকে মারধর করতে থাকে৷ এক পর্যায়ে হাফিজ তার লোকজনকে গেইট বন্ধ করতে বলেন৷ আমি বারবার চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারিনি৷ এক পর্যায়ে একটা রুমে মাউদকে নিয়ে আমি সামনে দাঁড়াই৷ তখনও ওরা গালিগালাজ করছিল৷ আমি মাসউদকে নিয়ে যে রুমে ছিলাম, ওই রুমের লাইট আর ফ্যান তারা বন্ধ করে দেয়৷ এ সময় মাসউদ ঘামছিল, আর পানি চাচ্ছিল৷ কিন্তু হাফিজের নির্দেশে কেউ পানিও দেয়নি৷ এক পর্যায়ে মাসউদ আমার কোলের উপর শুয়ে পড়ে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে৷ তখনও তাকে পানি দেয়নি ওরা৷ পরে পুলিশ আসার পর আমি পানির একটা বোতল কিনে তার মুখে পানি দেই৷ পুলিশ আসলেও ওরা গেট খুলছিল না৷”

হাফিজ উত্তেজিত হয়ে মাসউদের কলার চেপে মারধর শুরু করে: মুশফিক

ঘটনার পরপর সেখানে হাজির হন বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান৷ তালা খোলার পর ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি৷ সেদিনের ঘটনা জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন ভেতরে যাই, তখন ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন মাসউদ৷ আমরা তাকে তুলে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে সোহেল হাফিজ তখনও অশ্লীল ভাষায় মাসউদকে গালিগালাজ করতে থাকে৷ তিনি বলছিলেন, তার (মাসউদ) কিছুই হয়নি, ভান ধরেছে, যেটা আমাদেরও ভালো লাগেনি৷ পরে আমরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি৷’’

তবে প্রেস ক্লাবের সভাপতি, জনকন্ঠ ও এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই দিন সেখানে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে৷ গ্রেপ্তার এড়াতে মাসউদ অভিনয় করেছিল৷ পরে চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন৷ এরপর হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন৷ এই ঘটনার সঙ্গে প্রেসক্লাবের ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই৷ প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য যারা সদস্য হতে পারে না, তারা অপপ্রচার করে৷ মাসউদের মৃত্যু যে হার্টঅ্যাটাকে হয়েছে সেটা হাসপাতালের চিকিৎসক পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন৷’’

গ্রেপ্তার এড়াতে মাসউদ অভিনয় করেছিল: প্রেস ক্লাবের সভাপতি

বরগুনা প্রেসক্লাব সদস্যদের সঙ্গে মাসউদের অতীত

বরগুনা প্রেসক্লাবে সদস্য হওয়ার কিছু শর্ত আছে৷ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের একটি কেউ সদস্য হতে হলে তাকে ডিগ্রি পাশ হতে হবে৷ কিন্তু শর্ত পূরণ করলেও অনেককে সেখানে সদস্য করা হতো না৷ যারা এই ক্লাবের সিনিয়র, তাদের এক ধরনের ‘মনোপলি' সেখান আছে৷ সোহেল হাফিজ সেখানে প্রভাবশালী সদস্য৷ আগে কালের কন্ঠের জেলা প্রতিনিধি ছিলেন সোহেল হাফিজ৷ সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়৷ সেখানে চাকরি হয় মিজানুর রহমানের৷ হাফিজের ধারণা, মিজানুর রহমানের কারণে তার চাকরি গেছে৷ এই কারণে তিনি প্রভাব খাটিয়ে মিজানুর রহমানের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করেন৷ এছাড়া মাসউদও অনেকদিন চেষ্টা করে সদস্য হতে পারছিলেন না৷ পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলই মাসউদ বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন৷ তার সঙ্গে যোগ দেন যারা এতদিন প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারিনি তারা এবং বহিস্কৃতরা৷

বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তালুকদার মাসউদ
মারধরের জেরে নিহত সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ৷ছবি: Sadiya Talukder Tanni

মাসউদ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে রেজিষ্ট্রেশনও করিয়ে নেন৷ এই রেজিষ্ট্রেশন বরগুনা প্রেসক্লাবের নীতিনির্ধারকদের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে৷ প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা কয়েকবার মাসউদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেন৷ তাকে সদস্যপদ দেওয়া হবে- এই শর্তে জেলা প্রেসক্লাব বিলুপ্ত করতে বলা হয়৷ এই আলোচনা চললেও শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়নি৷ তাই মাঝে মধ্যেই মাসউদ প্রেসক্লাবে গিয়ে চা চক্রে যোগ দিতেন, কথাবার্তা বলতেন৷

প্রেসক্লাবের ১০ জন সদস্য (কেউ কেউ পরিবার নিয়ে) ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সফরে কলকাতা যান৷ এর মধ্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদারও ছিলেন৷ কলকাতায় তারা কলকাতা প্রেসক্লাব ও উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ উপকূলীয় এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সময় ভারতের সীমানায় চলে যান, সেখান থেকে তাদের ধরে কারাগারে রাখা হয়- এগুলো নিয়ে মূলত কলকাতার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি দল৷ তারা যাওয়ার পরেরদিন, অর্থাৎ, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে এই ঘটনা ঘটে৷ ক্লাব সদস্যদের দাবি, মাসউদ প্রেসক্লাব দখল করার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিলেন৷ সোহেল হাফিজ তাদের প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছেন৷

প্রেসক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আলোচনা করে সমাধানে যেতে বলেছিলেন৷ ২ মার্চ আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়৷ এর আগেই ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে মাসউদকে প্রধান আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলার আবেদন করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফর হাওলাদার৷ আদালত থানাকে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়৷ ১ মার্চ মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়৷ ২ মার্চ ক্লাবের সদস্যরা মাসউদের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করে তার বিচার দাবি করেন৷ 

হত্যা মামলায় যা বলা হয়েছে

মাসউদকে প্রেসক্লাবে আটকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মাসউদের স্ত্রী সাজেদা। মামলায় এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ (৪৭), আরিফুল ইসলাম মুরাদ (২৮), মো. কাসেম হাওলাদার (৩০), যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন (৪০), মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ (৩০), মো. ছগির হোসেন টিটু (২৮), ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুল মালেক মিঠু (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম মেহেদী (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ এস এম সিফাত (২৭), শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫) এবং মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মো. জাফর হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷  আসামিদের মধ্যে পাঁচ জন প্রেসক্লাবের সদস্য৷ চারজন বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং তিন জন বিভিন্ন টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন৷ বাকি একজন ইউপি সদস্য নির্বাচনে মাসউদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন৷

মামলায় বলা হয়েছে, ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত থাকায় তালুকদার মাসউদ বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব' নামে একটি সংগঠন করেন৷ এ কারণে বরগুনা প্রেসক্লাবের কিছু সদস্য তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন৷ ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলছিলেন তালুকদার মাসউদ৷ তাকে ক্যারাম খেলতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহেল হাফিজ গালিগালাজ শুরু করেন৷ এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে৷ পরে সোহেলসহ অন্যরা প্রেস ক্লাবের গেইট বন্ধ করে হামলা চালায়৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গেইট তালাবদ্ধ রাখা হয়৷

প্রায় এক ঘণ্টা পর ওসি মিজানুর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশিরুল আলম প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করে তালুকদার মাসউদকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়৷ সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়৷ ঘটনার ১১ দিন পর ২ মার্চ রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তালুকদার মাসউদ মারা যান।

মাসউদের স্ত্রী ও মেয়ের বক্তব্য

মাসউদের স্ত্রী সাজেদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকে সাংবাদিক সোহেল হাফিজ ও তার অনুসারীরা আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার তিনি আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছেন। ওইদিন সকালে ক্লাবে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছেন। বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব নামে আমার স্বামীর কাছে সরকারের রেজিষ্ট্রেশন ছিল। এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না তারা। এই কারণে তারা আমার স্বামীকে টার্গেট করেছিলেন। আমার একমাত্র মেয়ে পড়াশোনা করে, ছেলের বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

২০ লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে: মাসউদের স্ত্রী

মাসউদের মৃত্যুর পর কেউ হুমকি দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ওরা আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি না করে দিয়েছি। আর কেউ হুমকি দেয়নি। তবে আমার বোনকে ফোন করে হাফিজের এক আত্মীয় সাবধানে থাকতে বলেছেন।”

মাসউদের মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওদের মারধরে বাবা ওইদিন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বরিশাল থেকে বাবাকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছিল৷ সেখানে শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এনজিওগ্রাম না করতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা৷ বাড়িতে রেখে চিকিৎসার কথা বলেছিলেন। এর মধ্যেই বাবা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বরিশাল নেওয়া হলে ওইদিন রাতেই তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুতে আমরা এখন এতিম হয়ে গেলাম৷ আমার বাবাকে মারধর করে ফেলে রেখেছিল৷ আহতাবস্থায় একটু পানি খেতে চেয়েছিল৷ এতটাই নির্মম তারা, বাবাকে একটু পানি পর্যন্ত দেয়নি। কী এমন অপরাধ করেছিল আমার বাবা? আমার বাবা কেন প্রেসক্লাবে গিয়েছিল- এই অপরাধে তাকে মেরে ফেলতে হবে? বাবা হারানোর কী বেদনা, যাদের বাবা নেই, শুধু তারাই বুঝতে পারে৷ ঘটনার সময় বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আমাকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে৷ আমি ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু আমাকে প্রেসক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ আহতাবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। আমার বাবাকে কারা, কীভাবে মেরেছে, সব ভিডিওতে বলেছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই৷’’

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বরগুনা শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনের সড়কে হত্যাকান্ডের বিচার ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়৷মানববন্ধনে নিহত সাংবাদিকের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী অংশ নেন।এতে নিহতের স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে বক্তব্য দেন।

পুলিশের ভাষ্য

বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু তারা গা ঢাকা দিয়েছেন৷ ফলে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ মামলাটির তদন্ত চলছে৷ প্রাথমিক তদন্তে ওইদিন প্রেসক্লাবে মাসউদকে মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে৷ আমরা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি৷ সেখানে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি৷ এগুলো গুছিয়ে মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে৷’’

গতকাল মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি৷ তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল৷ একজন আসামির স্বজন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন৷ জামিন পেলে বরগুনা ফিরে যাবেন৷’’

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে ২০২৩ সালের করা একটি ছবিঘর: