বাংলাদেশের অপরাধীদের সুখের প্রবাস জীবন
১২ নভেম্বর ২০১৪ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণ ঘটনার মূল হোতা সাজিদকে শনিবার দমদম থেকে গ্রেপ্তারের পর রবিবার ভারতের আদালতে হাজির করা হয়৷ সেই আদালতে সাজিদ ভারতের নাগরিক হওয়ার ইচ্ছার কথা জানান৷
এদিকে সাজিদ ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে তাঁর ভাই মনোয়ার হোসেন ওরফে মনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মঙ্গলবার৷ নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ফরাজিকান্দা লাহোরবাড়ি এলাকায় তাঁদের বাড়ি৷
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি মাসুমই ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির কমান্ডার শেখ সাজিদ৷ তাঁর বাবা মৃত সিদ্দিক ওরফে পঁচা মিয়া৷ ২০০৭ সালে পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জিহাদি বইসহ চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ তাঁকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, পাঁচ বছর জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে দুই বছর আগে দুবাই যাওয়ার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান৷ এরপর তাঁর সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি৷ সাজিদ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন৷ সেখান থেকে তিনি দাখিল পাস করেন৷ তাঁর বাবা সিদ্দিক ছিলেন একজন পাটকল শ্রমিক৷ ৫ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে সাজিদ সবার ছোট৷ জুম্মন নামে তাঁর এক ভাগ্নে আফগানিস্তানে রয়েছে৷
ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী সেদেশে বাংলাদেশের ১৮০ জন জঙ্গি আশ্রয় নিয়েছেন৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তা স্বীকার করলেও সংখ্যাটা কত হবে তা তাঁদের জানা নেই৷
ভারতে কে, কোথায়?
নতুন দিল্লিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-র সঙ্গে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর মহাপরিচালক পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে ৪৩ জন বাংলাদেশি সন্ত্রাসীর একটি তালিকা দেয়া হয়েছে, যাঁরা ভারতে আত্মগোপন করে আছেন৷ ওই তালিকা অনুযায়ী, ১৬ হত্যা মামলার আসামি মিরপুরের শাহাদত হোসেনের বর্তমান অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ৷ নয়াটোলার জিসান ওরফে মন্টু আছেন কলকাতায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ৮টি হত্যা মামলা৷ কিছুদিন আগে তিনি দুবাই ছিলেন৷ আগরতলায় আছেন হত্যাসহ ১৩ মামলার আসামি শাহীন সিকদার৷ তিনটি হত্যাসহ সাত মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন আনু আছেন ভারতের গোবিন্দপুরে নিজ ফ্লাটে৷ ছদ্মনাম দিয়ে নাগরিকত্ব নেয়ার চেষ্টাও করছেন তিনি৷
পুরস্কার ঘোষিত অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয় স্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছেন কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়৷ নিজে বাড়ি কিনে সেখানেই ৫-৬ বছর ধরে অবস্থান করছেন এই সন্ত্রাসী৷ ঝালকাঠির মোল্লা মাসুদ আছেন মুর্শিদাবাদ৷ নদীয়ার করিমপুর থানার বকসীপুরে থাকেন চরমপন্থি নেতা এনামুল হক এনা৷ তাঁরও নিজের বাড়ি রয়েছে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ৫টি হত্যাসহ ৯টি মামলা রয়েছে৷ পুরস্কার ঘোষিত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস থাকেন কলকাতায়৷
র্যাবের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এরা ভারতে বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে সৌখিন জীবনযাপন করছেন৷ সহযোগীরা ঢাকা থেকে যে চাঁদাবাজির টাকা পাঠায় তা দিয়েই চলছে তাঁদের জীবন৷ অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে সরাসরি ভারতে নির্দিষ্ট সন্ত্রাসীকে টাকা পাঠাচ্ছেন এমন খবরও পাওয়া গেছে৷ সবকিছু নিয়ে তদন্ত করছে র্যাব৷
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরা বিদেশে
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরাও বিদেশের মাটিতে শক্ত শিকড় গেড়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী ও ক্যানাডায় অবস্থান করছেন নূর চৌধুরী৷ রাশেদ চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থান করে ক্যানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন৷ ক্যাপ্টেন মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আত্মগোপন করে আছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷
লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ অবস্থান করেন মূলত লিবিয়ার বেনগাজি শহর ও পাকিস্তানে৷ লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমের ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড কেনিয়াকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হলেও তিনি মাঝেমধ্যে লিবিয়া ও পাকিস্তানে আসা যাওয়া করেন বলে ধারণা করা হয়৷
যুদ্ধপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তরাও বিদেশে
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মাঈনুদ্দীন লন্ডনে জামায়াতের সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক দাওয়াতের বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন৷ আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান থাকেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকায়৷ ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ অ্যামেরিকার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বপ্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার রায় ঘোষণার আগেই পালিয়ে গেছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে তিনি আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন৷ আর বৃহস্পতিবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজাকার খোকনের মামলার রায় দেবে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যাল৷ বিচার শুরুর পর থেকেই তিনি পলাতক৷ তিনিও দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন৷
সরকারের বক্তব্য
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল জানান, বাংলাদেশের অপরাধীরা যাঁরা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন তাঁদের দেশে ফিরয়ে আনতে সবসময়ই তৎপরতা চালানো হয়, ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়৷ কিন্তু আইনি জটিলতাসহ নানাকারণে তা সবসময় সফল হয় না৷ আর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই বন্দি-বিনিময় চুক্তি না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ আইন এক্ষেত্রে অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷