1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে কারা হত্যা করছে রোহিঙ্গাদের?

১৪ জুলাই ২০১৭

গত কয়েক সপ্তাহে পাওয়া গেছে তিন জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ৷ নিহতদের পরিবার বলছে, প্রত্যেককেই গভীর রাতে মুখোশধারী কিছু লোক এসে ধরে নিয়ে যায় এবং কয়েকদিন পরই পড়ে থাকে গলাকাটা লাশ৷

https://p.dw.com/p/2gWqX
মোবাইলে নিহত স্বামীর ছবি দেখাচ্ছেন নূর আনকিসছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গাদের এখন দিন কাটছে মুখোশধারীদের আতঙ্কে৷ তারা কোন রাতে এসে কাকে তুলে নিয়ে যায়– এই আতঙ্ক৷ অস্থায়ী শিবিরে আশ্রিতদের অনেকের দাবি, প্রায় রাতেই রাস্তায় রহস্যজনকভাবে ঘুরতে দেখা যায় মুখোশধারীদের৷

গত কিছুদিনে যে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে, তাঁদের একজনের নাম মোহাম্মদ আইয়ুব৷ গত ১৪ জুন রাতে ২০-২৫ জন মুখোশধারী এসে তুলে নিয়ে যায় তাঁকে৷ ২৫ জুন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের কাছেই পাওয়া যায় ৩০ বছর বয়সি আইয়ুবের লাশ৷ তাঁর গলা কাটা ছিল, হাত ছিল বাঁধা৷ রয়টার্সকে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আইয়ুবের স্ত্রী নূর আনকিস বলেছেন, ‘‘ওরা আমাকে আর আমার বোনকে পিটিয়ে ওকে (আইয়ুব) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷’’ আইয়ুব-আনকিসের দুই শিশু সন্তান তখন ঘুমাচ্ছিল৷ রাতের আঁধারে মুখোশধারীরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আইয়ুবের আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না৷ অবশেষে বাংলাদেশের সব মুসলমান যখন রোজা শেষে ঈদের আনন্দের অপেক্ষা করছেন, তখন স্বামীর লাশ পান আনকিস৷ স্বামীকে কবর দেয়ার পর থেকে যোগ হয়েছে নতুন আতঙ্ক৷ আনকিস বলছিলেন, ‘‘অপহরণকারীরা আমাকেও ফোন করে হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ আল-ইয়াকিন-এর নামে হুমকি দেয়া হচ্ছে আমাকে৷’’

Bangladesch Morde in Rohingya-Flüchtlingslagern
১৪ জুন রাতে ২০-২৫ জন মুখোশধারী এসে তুলে নিয়ে যায় মোহাম্মদ আইয়ুবকেছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

আল-ইয়াকিন মানে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন ‘হারাকাহ আল-ইয়াকিন’৷ গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ঘাঁটিতে যে হামলা হয়েছিল, তার জন্য হারাকাহ আল-ইয়াকিনকেই দায়ী করা হয়৷ ওই হামলার পরই সন্ত্রাসী নির্মূলের নামে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাপক অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ জঙ্গি সংগঠনটি এখন ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ নামে তৎপরতা চালাচ্ছে৷

আইয়ুবের স্ত্রী রয়টার্সকে জানান, তাঁর স্বামী কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের মাদকসেবীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন৷ মাদকসেবীদের সঙ্গে আল-ইয়াকিনের যোগাযোগ আছে কিনা, কিংবা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী আল-ইয়াকিনের নাম ব্যবহার করছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি আনকিস৷ আইয়ুবের অপহরণ এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ তবে হত্যাকারী, হত্যার কারণ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশও এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি৷

তাই কুতুপালং অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে সবার রাত কাটছে আতঙ্কে৷ এক রোহিঙ্গা তরুণ রয়টার্সকে প্রতি রাতের আতঙ্ক সম্পর্কে জানালেন এভাবে, ‘‘এক রাতে আমি যখন দুই সন্তান আর স্ত্রী-র সঙ্গে ঘুমাচ্ছি, ওরা এসে আমার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করল৷’’ অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলার কথা জানিয়ে আতঙ্কিত তরুণ আরো বলেন, ‘‘যেই এক ঘণ্টা ওরা আমার ঘরের বাইরে অপেক্ষা করেছিল সেটা আমার জীবনের দীর্ঘতম এক ঘণ্টা৷’’

এসিবি/জেডএইচ (রয়টার্স)