বড় বাধা ‘দুর্নীতি’
২১ মার্চ ২০১৪‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, সুশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক টিআইবি পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল এ সব কথা বলেন৷ প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নবম জাতীয় সংসদের উপর টিআইবি-র পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ সংসদ অধিবেশনের বিভিন্ন নেতিবাচক দিকের সমালোচনার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দশম সংসদে জাতীয় পার্টি আক্ষরিক অর্থে বিরোধী দল৷ তাদের ভূমিকা বাস্তবে অনুধাবন করতে পারি না৷ এই ব্যতিক্রমী সংসদ সাময়িক ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলেও টিআইবি মনে করে৷
টিআইবি-র এই মন্তব্যের একদিন পর বুধবার জাতীয় সংসদের সদস্যরা কড়া ভাষায় টিআইবি-র সমালোচনা করেন৷ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম পয়েন্ট অফ অর্ডারে টিআইবি-র আর্থিক উত্স, সংসদ নিয়ে মন্তব্য করার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাদের রাজনীতিতে আসার পরামর্শ দেন৷
এ বিষয়ে টিআইবি-র অবস্থান জানতে চাইলে ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সরকারের অনুমতি নিয়েই কাজ করি৷ যে পার্লামেন্ট ওয়াচ করেছি, সেখানেও আমাদের সরকারের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়েছে৷ টিআইবি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন৷ কখনোই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট নই৷ যখন সংসদ নিয়ে কথা বলি, তখন আমাদের রাজনীতি নিয়েও কথা বলতে হয়৷’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার ও সংবিধান আমাদের কাজ অনুমোদন করে৷ আমাদের কাজ সংবিধানসম্মত৷’’ তিনি বলেন, টিআইবি সরকারের একটি নিবন্ধিত সংস্থা৷ টিআইবি-র অর্থের উত্স সম্পর্কেও সরকার অবহিত৷ তাই টিআইবি-কে চ্যালেঞ্জ করার এক্তিয়ার কারো নেই৷
টিআইবি-র আর্থিক উৎসের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিআইবি সরকারের অনুমোদিত সংস্থা হওয়ায় সরকারের অনুমতি ছাড়া একটি পয়সাও অ্যাকাউন্টে আসে না৷ সরকারের নির্ধারিত খাতের বাইরে একটি পয়সাও আমরা খরচ করতে পারি না৷ তাই সংসদে দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল লোকজনের টিআইবি-কে নিয়ে কথা বলা যৌক্তিক বলেও মনে করি না৷ রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পরামর্শের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে যোগ দেবো কিনা সেটা আমার ব্যক্তিগত এক্তিয়ার৷ তবে টিআইবি ও আমরা মনে করি, আমাদের এ ধরনের ইচ্ছা কখনোই হবে না৷’’
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বক্তব্যের সঙ্গে তার কোনো পার্থক্য নেই৷ অর্থমন্ত্রীকে বলবো তাদের অর্থের উত্স কোথায় খতিয়ে দেখতে৷’’ মোহাম্মদ নাসিম অভিযোগ করে বলেন, ‘‘নিজেদের অস্তিত্ব জানানোর জন্য তারা এ সব বক্তব্য দিচ্ছেন৷ অনির্বাচিত সরকার ও নৈরাজ্য ফিরিয়ে আনতেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করছে টিআইবি, সুজনসহ কিছু কিছু মহল৷’’
এদিকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও একটি সার্বিক নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগের অভাব রয়েছে৷ নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ পাশ হলেও গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আজও তা কার্যকর করা হয়নি৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বলবৎ না করা, ভোক্তার সরাসরি মামলা করার বিধান না থাকা ও ভোক্তার অভিযোগ নিরসনে প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং ভোক্তা বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ব্যয়ভার বহনের বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন বাধা রয়ে গেছে৷ খাদ্য তদারকি ও পরিবীক্ষণের ক্ষেত্রে জনবলের স্বল্পতাও একটি অন্যতম সীমাবদ্ধতা৷
গবেষণায় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা খাদ্যপ্রস্তুতকারী রেস্তোরাঁ বা বেকারি ও খুচরা বিক্রেতা পরিদর্শনে ঘুস গ্রহণ, বিএসটিআই-র ফিল্ড অফিসার খাদ্য কারখানা পরিদর্শনে খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহে ঘুসের বিনিময়ে শৈথিল্য প্রদর্শন, আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষায় ঘুষের বিনিময়ে পরীক্ষাগার হতে সনদ গ্রহণ ইত্যাদি ঘটনা এখনো ঘটছে৷ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনিক ও তদারকি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৬ দফা সুপারিশ করা হয়েছে৷