বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তারা বৈষম্যের শিকার!
২৫ আগস্ট ২০১৬বিশ্ব উদ্যোক্তা দিবসকে সামনে রেখে একটি দেশে নারী উদ্যোক্তাদের বাস্তব অবস্থা কেমন – তার ভিত্তিতেই এই সূচক বা ইনডেক্স তৈরি করে মাস্টারকার্ড৷ এতে সমাজে নারীর অগ্রগতি, কর্মক্ষেত্র-সরকার-ব্যবসায়িক উদ্যোগের প্রতি নারীর দৃষ্টিভঙ্গী এবং শিক্ষা-অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়৷
বিভিন্ন সূচকে পাওয়া পয়েন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ১০০-তে মাত্র ২৭ পয়েন্ট পেয়েছে, যেখানে ভারত পেয়েছে ৩৩.৩ এবং শ্রীলঙ্কা ৩২.৭ পয়েন্ট৷ তবে তালিকার শুরুতে রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷ এছাড়া অস্ট্রেলিয়া রয়েছে দ্বিতীয় এবং থাইল্যান্ডের তৃতীয় স্থানে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো তাদের নারী উদ্যোক্তাদের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অপেক্ষাকৃত ভালো কাজের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে৷ চেষ্টা করছে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তাঁদের জ্ঞান এবং যোগ্যতাকে মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার পরিবেশ তৈরির৷
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের এই ধারাক্রমে তারাই ভালো করেছে, যারা নারীদের উদ্যোগ নেওয়ার ‘সুযোগ' করে দিয়েছে৷ নারী উদ্যোক্তারা যেখানে অপরিহার্য, শুধু সেইসব খাতকে যারা প্রণোদনা দিয়েছে, তারা এই ধারাক্রমে পিছিয়ে পড়েছে৷
মালয়েশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ সব দেশে নারী উদ্যোক্তা থাকলেও তাঁদের কাজের পরিবেশ অনুকূল নয়৷ ‘অপরিহার্যতার' বিবেচনাতেই তাঁরা উদ্যোক্তা৷ অর্থাৎ যেসব উদ্যোগ নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া সফল হয় না, একমাত্র সেসব খাতেই তাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন৷ এ কারণে এই দেশগুলো ধারাক্রমে পিছিয়ে পড়েছে৷ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট ১০০-তে মাত্র ১১.৮৷ আর নারীর অগ্রগতি ও উদ্যোগ নেওয়ার প্রবণতায় বাংলাদেশের অর্জন ১০০-তে ১৫.৩ পয়েন্ট৷
বাংলাদেশ উইমেন চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসরিন আউয়াল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলেই নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার৷ তাঁদের ছাড়া যে শিল্প উদ্যোগ সম্ভব নয়, একমাত্র সেখানেই তাঁদের প্রণোদনা দেয়া হয়৷ অথচ সাধারণ উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁরা সহযোগিতা বা প্রণোদনা পান না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এসএমই খাতে নারীরা নিজ উদ্যোগে অনেক এগিয়েছেন৷ তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিচ্ছে না৷ তাই তাঁরা যে তাঁদের পণ্য বাজারে দেখাবেন, তার জন্য শো রুমের ব্যবস্থা করতে পারছেন না তাঁরা৷ আবার দেশের বাইরে পণ্যের রাজার সৃষ্টি করতে বিদেশে গিয়ে ক্রেতা খোঁজার সামর্থও তাঁদের নেই৷ আসলে এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহয়তা৷ সেটা পেলে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এত নীচে থাকত না৷''
নাসরিন আউয়াল আরো বলেন, ‘‘যতই বলা হোক না কেন, আমাদের কিন্তু প্রথমে ‘মাইন্ড সেট' পরিবর্তন করতে হবে৷ ব্যাংকগুলো এখনো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না৷ আর প্রচলিত কোনো ভারী শিল্প স্থাপন করতে চাইলে তো কথাই নেই৷ সেক্ষেত্রে ঋণ পাওয়া নারীদের জন্য প্রায় অসম্ভব৷''
তাঁর কথায়, ‘‘এর বাইরে আইন-শৃঙ্খরা পরিস্থিতির অবনতিও নারী উদ্যোক্তাদের বাধাগ্রস্ত করছে প্রতিনিয়তই৷''