1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রসঙ্গ বাকস্বাধীনতা

গোলাম মোর্তোজা১৩ অক্টোবর ২০১৫

‘স্বাধীনতা’ শব্দটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের ছবি, যা আমরা অর্জন করেছিলাম ১৯৭১ সালে৷ একটি স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক৷ এই স্বাধীনতা নিয়ে আলাদা কোনো আলোচনাই হওয়ার কথা নয়৷

https://p.dw.com/p/1GnMm
বাংলাদেশের সংবাদপত্র
ছবি: DW

কিন্তু দুর্ভাগ্য জন্মের পর থেকেই বাংলাদেশ সেই আলোচনা নিয়েই আছে৷ স্বাধীনতা অর্জন করেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে কখনো বাংলাদেশের মানুষ অর্জন করতে পারেনি৷ সংক্ষিপ্ত পরিসরের এই লেখায় ইতিহাসের দিকে যাব না৷ সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতার দিকে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করব৷

১. কী লেখা যাবে, কী লেখা যাবে না – সামরিক সরকারগুলোর সময় তা নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া হতো৷ সে অনুযায়ী চলতে হতো৷ কৌশলেও ব্যতিক্রম কিছু করা হলে, বিপদে পড়তে হতো৷ তখন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা অনলাইনের বিস্তার হয়নি, শুধু সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ করলেই চলত৷ নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন ছিল না৷

২. এখন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এত বিস্তৃত যে, নিয়ন্ত্রণ করা শুধু কষ্টকর নয়, অসম্ভব৷ তৃতীয় বিশ্বের ক্ষমতাবান সরকারগুলো সব সময়ই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চায়৷ তারা নতুন আইন বানায়, দমন-নিপীড়ন করে৷ আশ্রয় নেয় নানা কূট-কৌশলের৷

৩. বহুল আলোচিত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা এখন আমাদের সামনে আছে৷ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ একেবারে সাধারণ বেশ কয়েকজনকে তিন বছর থেকে সাত বছর জেলও দেয়া হয়েছে এই ধারায়৷ ৫৭ ধারা অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি যদি পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে যে, অমুক ব্যক্তি লিখে বা বলে আমার ‘মানহানি' করেছে, অভিযোগ আমলে নিয়েই একজন এসআই সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ কোনো তদন্ত ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ এবং তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল হতে পারে৷

৪. এই ভয়ংকর আইনটি এখন বাংলাদেশে কার্যকর৷ এমন একটি আইন যে দেশে কার্যকর থাকে, সেই দেশে বাকস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা কেমন হতে পারে, সেটা বলাও বিপজ্জনক৷ ‘বাকস্বাধীনতা নেই' এই বাক্যটি বলার কারণেও ৫৭ ধারার খপ্পরে পড়তে হতে পারে৷

৫. তারপরও সরকার এবং সরকার সংশ্লিষ্টরা বলেন যে, দেশে সম্পূর্ণরূপে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে৷ পত্রিকায় এবং টকশোতে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে৷ সরকার কাউকে বাধা দিচ্ছে না৷ কথাটা মিথ্যে নয়, সমালোচনা হচ্ছে৷ সরকার বেশ ভালো একটি কৌশল নিয়েছে৷ ৫৭ ধারা কার্যকর থাকায় সত্য-তথ্যভিত্তিক সমালোচনা যারা করেন, তারাও নিজেরা ভয়ে ‘সেন্সর' করে কথা বলছেন৷ সরকার সংশ্লিষ্টরা বলতেই পারেন, কেউ নিজে যদি ‘সেন্সর' করেন, এখানে সরকারের কী করার আছে! মোক্ষম যুক্তি৷ নিজে কেন ‘সেন্সর' করে কথা বলছেন, তা তো আর বলা যাচ্ছে না৷

৬. বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় টেলিভিশনের টকশোতে কারা আলোচক থাকবেন, তার তালিকা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সরবরাহ করা হতো৷ আমি সব সময়ই সেই তালিকার বাইরে থেকেছি৷ টকশো থেকে বাদ এবং নানা রকমের বিপদের মুখোমুখি হয়েছি বারবার৷

এখন লিখিত কোনো নির্দেশনা নেই টকশোতে কাউকে আনা বা না আনার ক্ষেত্রে৷ অনেক জনপ্রিয় টকশো ব্যক্তিত্বকে টকশোতে দেখা যায় না৷ কেন দেখা যায় না? কেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাদের আমন্ত্রণ জানান না, দর্শক চাহিদা থাকার পরও? নিজেরও এই অভিজ্ঞতা আছে৷ কোনো কোনো চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানার বা বোঝার চেষ্টা করেছি৷ তারা শুধু বলেছেন, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন...৷'' আসলে আমি কিছু বুঝতে পারিনি!

৭. বাংলাদেশের প্রভাবশালী-জনপ্রিয় দু'টি পত্রিকা ‘প্রথম আলো' এবং ‘ডেইলি স্টার'৷ হঠাত্‍ করে বহুজাতিক এবং দেশীয় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছি, তবে বিস্তারিত নয়৷ বিস্তারিত রিপোর্ট করেছে ‘আল জাজিরা'৷ যাই হোক, সে বিষয়ে কিছু বলছি না৷ বিজ্ঞাপন এজেন্সি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তারা পত্রিকা দু'টিতে বিজ্ঞাপন দিতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না৷ কেন পারছেন না, ‘‘বুঝতেই তো পারছেন...৷''

সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে পত্রিকাকে চাপ দেয়ার নজির আমরা আগে দেখেছি প্রথম আলো-ডেইলি স্টার-এর ক্ষেত্রে এখন যা ঘটছে, তা আগে কখনো ঘটেনি৷

Bangladesh Journalist Golam Mortoza
গোলাম মোর্তজা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং টিভি টকশো’র মডারেটরছবি: Golam Mortoza

৮. বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অনলাইন লেখক বা ব্লগারদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিতর্কটি তৈরি হয়েছে৷ হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত-বিএনপি ব্লগে যারা লেখেন তাদেরকে নাস্তিক এবং ধর্ম বিরোধী হিসেবে একটি পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে৷ যদিও এদের সবাই নাস্তিক বা ধর্মবিরোধী নন৷ অনলাইন লেখকদের তালিকা করে হত্যা করা হচ্ছে, সরকার মোটামুটি নির্বিকার৷ সরকার হেফাজত তুষ্টির নীতি নিয়েছে৷ খুনিদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে, ব্লগাররা যা লেখেন তার বিরুদ্ধে সরকারকে বেশি সোচ্চার হতে দেখা যায়৷ ব্লগার হত্যাকারীদের খুঁজে বের করলে, হত্যার হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিলে – সরকার নাস্তিকদের পক্ষে, সব সময় এই আতঙ্কে ভোগে সরকার৷ ফলে অনলাইন লেখকদের জীবন বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে অনিরাপদ৷ তাই তাঁরা নিয়মিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন, দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷

৯. ঘোষিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ অঘোষিতভাবে কী আছে আমি জানি না৷ লেখায় খুব সাধারণভাবে কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করেছি৷ তা দিয়ে পরিস্থিতি কেমন, কী বোঝায়, আশা করি পাঠক তাঁর মতো করে বুঝে নিতে পারবেন৷

প্রিয় পাঠক, গোলাম মোর্তোজার কাছে কি আপনার কোনো প্রশ্ন আছে? থাকলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য