‘বাংলাদেশ মধ্যযুগে চলে যাবে’
৭ এপ্রিল ২০১৩হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে ব্ল্যাসফেমী আইন এবং কথিত ‘ব্লগার নাস্তিকদের' ফাঁসির দাবি ছাড়াও আরো কিছু দাবি আছে যা বিস্ময়কর এবং প্রগতি বিরোধী৷ তারা নারী নীতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে, দেশের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা ও নতুন ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ, নারী-পুরষের সহবস্থান নিষিদ্ধ এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ তাদের ভাষায় বিজাতীয় সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বলেছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘‘হেফাজতে ইসলাম মূলত দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চাইছে৷ তারা দেশে প্রগতি এবং আধুনিকতার চাকা থামিয়ে দিতে চাইছে৷ কিন্তু দেশের মানুষ তা মেনে নেবেনা৷
‘‘তাদের লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশে স্পষ্ট হয়েছে যে তারা জামায়াতকে রক্ষায় মাঠে নেমেছে৷ কারণ তারা কথিত ‘ব্লগার নাস্তিকদের' গ্রেফতারের দাবির নামে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কারী ডা. ইমরান এইচ সরকারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে৷ তাদের অপরাধ তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদের সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে৷''
অধ্যাপক কামাল বলেন, ‘‘এই হেফাজতে ইসলাম জামায়াতকে হেফাজতের পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস এবং মুক্তিযোদ্ধার চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ একুশে টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম প্রমাণ করেছে তারা কতটা নারী ও প্রগতি বিরোধী৷ তারা নারীদের খাঁচায় বন্দি করতে চায়৷ কিন্তু তাদের সে আশা পুরণ হবেনা৷''
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়, বলেন কামাল৷ তাঁর কথায়, ‘‘তারা (হেফাজতে ইসলাম) ধর্মকে ব্যহার করে হয়তো সাময়িক উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারবে কিন্তু সফল হবেনা৷ কারণ এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের এদেশের মানুষ ভালভাবেই চেনে৷''
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নারীরা আজ বাংলাদেশে নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের প্রগতির পথে কোন অন্তরায় বা বাধা এলে তা মেনে নেয়া হবেনা৷ নারী সমাজ সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে৷
‘‘হেফাজতে ইসলাম যে দাবি করেছে তা যে বাস্তবায়ন হবে ভাবার কোন কারণ নেই৷ তাদের যদি কোন বাস্তব সম্মত দাবি থাকে তা বিবেচনা করা যেতে পারে৷ কিন্তু গণবিরোধী কোন দাবি মানলে সরকারকে তার মাশুল দিতে হবে৷ মনে রাখতে হবে, হেফাজতের দাবি অনুযায়ী দেশ চলতে পারেনা৷''
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারকে হেফাজতের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে৷ জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে৷ আর বিএনপিকে তাদের কাছ থেকে সরে আসতে হবে৷ নয়তো মৌলবাদের ফনা থেকে তাদের কেউ বাঁচাতে পারবেনা৷ তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷