‘বারবার বলেছি আমি সালেক না জাহালম’
২৮ জুন ২০১৯ডয়চে ভেলে : আপনি তো দুর্ভাগ্যবশত একটি মামলায় জড়িয়েছেন৷ আপনি কত সালে এই মামলা জড়িয়ে পড়েন?
জাহালম : ২০১৪ সালের দিকে আমাদের চেয়ারম্যান হঠাৎ করে আমাকে ডাকেন৷ আমি তো ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলে চাকরি করি৷ আমি বাড়িতে গেলে তিনি আমাকে আমার ছবি দেখান আর আবু সালেকের ছবি দেখান৷ আমি তাকে বলি, এটা আমার ছবি, আর অন্যটা আমি চিনি না৷ আমার জীবনে আমি কোট টাই পরিনি৷ তখন তিনি বলেন, একরকমই তো দেখা যায়? আমি বলি কত পার্থক্য! এরপর আমি ঘোড়াশাল চলে আসি৷ হঠাৎ করে একদিন দুদকের লোক আমার মিলে আসে৷ তারা আমার ছবি তোলে৷ এর কয়দিন পর আমার কাছে চিঠি আসে৷
এই চিঠি কি দুদক থেকে আসে না আদালত থেকে?
এটা দুদক থেকে আসে৷ আমি ভাইকে জানাই৷ পরে আমি গুলিস্তান যাই, ভাইও আসে৷ আমরা তিনভাই তখন একসঙ্গে দুদকে যাই৷
এটা কত সালের ঘটনা?
এটা ২০১৪ সালের ঘটনা৷ পরে সেখানে গেলে তারা সালেকের ছবি দেখায় আর আমার ছবি দেখাই৷ আমি তাদেরও বলি, এটা আমার ছবি, আর অন্যটা আমি চিনি না৷ কোন ব্যাংকে আমার একাউন্ট নেই৷ তারা বারবার বলে ওটা আমার ছবি, আমি তাদের বারবার না করেছি৷
দুদকের কোন কর্মকর্তা এটা করেছেন?
দুই তিন জন কর্মকর্তা ছিলেন৷ এভাবে কয়েকবার সেখানে যাই৷ তারা আমারে প্রশ্ন করে আপনি ঢাকা ভার্সিতে পড়েছেন? আমি বলি কোন স্কুলেই আমি যাইনি৷ তারা আমারে জুট মিল থেকে কাগজ আর মার আইডি কার্ড আনতে বলে৷ সেগুলোও তাদের দেখাই৷ সালেক যে স্বাক্ষর দিয়েছে আমারে ইংরেজিতে সেই স্বাক্ষর দিতে বলে৷ কিন্তু আমি তো জীবনেও ইংরেজিতে স্বাক্ষর দেইনি৷ কেমনে দেব? আমারে কয় গুলশানে বাড়ি আছে, চারটি কোম্পানীর মালিক আমি, সবই অস্বীকার করি৷ এরপর হঠাৎ করে একদিন ঘোড়াশাল থেকে আমারে এ্যারেস্ট করে পুলিশ৷
এটা কত সালের ঘটনা?
২০১৬ সালের দুই মাসের ৫ তারিখে৷ তারা কোন কথাই শোনে না৷ সালেক বলে ধরে নিয়ে যায়৷ সেখান থেকে টাঙ্গাইল নিয়ে যায়৷ সেখানে আট দিন রাখে৷ সেখান থেকে ডান্ডা বেড়ি পরায়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়৷ সেখানে ৪ মাস খুব কষ্টে ছিলাম৷ আমি তো গরীব মানুষ, সপ্তাহে ৩৬০০ টাকা তাদের কোথা থেকে দেব?
কারাগারে কতদিন ছিলেন?
তিন বছরের তিন দিন কম ছিলাম৷
মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয়েছে কেমন?
আমরা তো একবেলা ভাত খাই, অন্য বেলা না খেয়ে থাকি৷ এখন তো মানুষের জ্বলায় বাড়িতে থাকতেই পারি না৷ সবাই টাকা পবে? কেমনে দিমু?
কেমন ধারের মধ্যে পড়েছে আপনার পরিবার?
কত টাকা ভাই বলতে পারবে৷ তবে বাড়ি গেলে খালি দেখি, লোকজন আসছে, আর টাকা চাচ্ছে৷
আপনি কি চাকরি ফিরে পেয়েছেন?
ঘোড়াশালে জুটমিলে চাকরি ফিরে পেয়েছি৷
এখনও কি কোর্টে হাজিরা দিতে হয়?
হাইকোর্টে বিচারক আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম৷ এছাড়া ৪/৫ বার কোর্টে গেছি৷
দুদক থেকে কি কেউ যোগাযোগ করেছে?
একজন কমিশনার হয়তো তদন্ত করতে আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন৷
আপনি কোন আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন?
একজন গার্মেন্ট মালিক ২০ হাজার টাকা চেক, আর ৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন৷ আরো কয়েকজন ২/৫ হাজার টাকা দিছেন৷
আপনি বিয়ে করেছেন?
হ্যাঁ, ৬ বছরের একটা মেয়ে আছে৷
আপনি যখন জেলে ছিলেন, পরিবার কিভাবে চলেছে?
আমার বউ চাকরি করেছে৷ আমারে দু'এক মাস পর ৫০০ টাকা দিত তাই দিয়ে চলতাম৷
হাইকোর্টে কিভাবে পৌঁছালেন?
আমি তো জেলে ছিলাম, ভাই জানে৷ তবে চ্যানেল ২৪ এর কারণে আমি নতুন জীবন পেয়েছি৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷