বিভক্ত কাশ্মীরে ম্লান ঈদের আনন্দ
১১ আগস্ট ২০১৩ভারত হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ৷ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ভারতের ১২০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ৷ কাজেই গোটা দেশে ঈদের উৎসব চিরাচরিত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গেই পালিত হয় এবং এ বছরও হয়েছে৷
বিশ্বের সবথেকে সামরিক প্রহরাধীন কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা৷ ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর হামেশাই লেগে আছে বিক্ষিপ্ত সামরিক সংঘর্ষ, গুলি বিনিময় এবং সন্ত্রাসী হামলা৷ বিষিয়ে তুলেছে দুদেশের সম্পর্ক৷ বাড়িয়ে তুলেছে উত্তেজনা৷ এই সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাঁচজন ভারতীয় সেনা নিহত হবার ঘটনায় বেড়ে গেছে উত্তেজনার তাপমাত্রা৷ তার ঝাপটায় ম্লান হয়ে পড়ছে দুদিকের হাজার হাজার বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরি পরিবারগুলির ঈদের আনন্দ৷ দুই কাশ্মীরের মধ্যে যাতায়াত ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে৷
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তান৷ অখণ্ড কাশ্মীরের দখল নিয়ে তিন-তিনবার যুদ্ধ হয়. কিন্তু সমাধান আজও দূর-অস্ত৷ শান্তির উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যায় নানা কারণে৷ তাই কাঁটাতারের বেড়ার দুদিকে বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরি পরিবারগুলি তাকিয়ে আছে কবে শান্তি আসবে৷ সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে৷ দুদিকের কাশ্মীরিরা সহজে যাতায়াত করতে পারে৷ মিলিত হতে পারবে ঈদে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে, অন্যান্য উৎসবে৷
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদ থেকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর পর্যন্ত চালু হয় বাস সার্ভিস, যাতে দুপারের কাশ্মীরিরা আসা যাওয়া করতে পারে, আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে৷ কিন্তু বিধিনিষেধের কড়াকড়ি, যাতায়াতের সময়, নিরাপত্তার বেড়াজালে বাসযাত্রা সুখকর নয়, এমনটাই অভিজ্ঞতা মুজফ্ফরপুরের উপকণ্ঠে শরণার্থী শিবিরে থাকা উজার মহম্মদ গাজালীর৷
ভারতের উরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে থাকেন খাজা গুলাম রসুল৷ তাঁর ভাই, কাকা, অন্যান্য পরিজন থাকে ওপারে৷ প্রতি বছরই ঈদের সময় বিশেষ করে তাঁদের মনে পড়ে৷ যেতে ইচ্ছে হয়৷ দেখতে ইচ্ছে হয়৷ কিন্তু সম্ভব হয়না নানা বিধিনিষেধের কারণে৷ দুদেশের সম্পর্কের বরফ না গললে, এই বাসযাত্রা সহজ, অবাধ হবেনা৷ তাই চাই শান্তি৷
এদিকে, ঈদের মত পবিত্র দিনেও জম্মুর কিস্টওয়ার জেলায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করা হয়৷ তবে তাতে রাজ্যের অন্যত্র ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েনি৷ নামাজের প্রধান জমায়েত হয় হজরতবাল ঈদগায়৷ দিল্লিতে সপ্তদশ শতাব্দীর জামা মসজিদে এবং ফতেপুরি মসজিদে৷ হায়দ্রাবাদে ঐতিহাসিক মিরালাম ঈদগায়৷ সেখানে রমজানের বিশেষ নমাজ পড়েন প্রায় তিন লাখ মুসলিম৷ হায়দ্রাবাদের ৭০ লাখ অধিবাসীর ৪০ শতাংশ মুসলিম৷ মুম্বই, লক্ষ্ণৌ, কলকাতাতেও ধুমধাম করে ঈদ পালিত হয়৷