1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বভারতীর একগুঁয়েমিই তাণ্ডবের উৎসে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ আগস্ট ২০২০

পাঁচিল বিতর্কে ফের প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকা৷ গত সোমবারের তাণ্ডবের বিরোধিতা করেও পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনীদের একাংশের বক্তব্য, উপাচার্যের অনমনীয় মনোভাবের জন্য তৈরি হয়েছে আজকের পরিস্থিতি৷

https://p.dw.com/p/3hF1d
পাঁচিল বিতর্কে ফের প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকাছবি: DW/P. Samanta

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে গড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও ঐতিহ্য গত কয়েক বছরে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ অতীতে পড়ুয়াদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরোধ দেখা গিয়েছে৷ এবারের সংঘাতে লেগেছে রাজনৈতিক রং৷

গত সোমবার মেলার মাঠের নির্মীয়মাণ পাঁচিল ভেঙে দেয়া হয়৷ ভাঙচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসে৷ অভিযোগ, বহিরাগত তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে চলেছে ভাঙচুর৷ এই তাণ্ডবের নিন্দা হয়েছে সর্বস্তরে৷ কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি করার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ভূমিকা কম নয়, এমনটা অনেকে মনে করছেন৷ বিশ্বভারতীর পড়ুয়া জয়দীপ সাহা বলেন, ‘‘মেলার মাঠ ঘেরার বিরুদ্ধে আমরা প্রচার শুরু করেছিলাম৷ জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও উপাচার্য আমাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি৷ অথচ উনি পাঁচিলের সমর্থনে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেছেন৷ এই সুযোগে তৃণমূল এখানে পাল্টা তাণ্ডব চালিয়েছে৷ উপাচার্য আলোচনার মাধ্যমে এগোলে এত উত্তেজনা হতোই না৷’’

উপাচার্য স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেছেন: জয়দীপ সাহা

তৃণমূলের দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউড়ির নেতৃত্বে ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ৷ তবে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, এর সঙ্গে শাসক দলের যোগ নেই৷ একই দাবি করে তৃণমূল মুখপাত্র, অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কের কতটা অবনতি হয়েছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ৷ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গৈরিকীকরণের চেষ্টা করছেন, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাধিকারের পরিপন্থি৷’’

এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্র আছে বলে এত কিছু করতে পারছে বিজেপি৷ কিন্তু সব কিছু নিয়ে রাজনীতি চলে না৷ রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নকে ভেঙে উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে৷’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘যারা ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করেন, তারা বিশ্বভারতীর প্রাচীর ভাঙছেন৷ তারাই রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন৷ দ্বিতীয় তালিবানি শক্তি পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছে৷’’ এটা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা হলেও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সক্রিয় কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)৷ তারা ইতিমধ্যে সমন পাঠিয়েছে একাধিক অভিযুক্তকে৷

সংলাপহীনতা সমস্যা তৈরি করেছে: সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গন্ডগোলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চায়৷ তাঁর নির্দেশে বীরভূমের জেলাশাসক বৈঠক ডাকলেও সেখানে উপস্থিত হননি উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ বিশ্বভারতীর বক্তব্য, তারা চেয়েছিল বৈঠক হোক ক্যাম্পাসেই৷ বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের সদস্য জয়দীপের বক্তব্য, ‘‘উপাচার্য ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনের সময়ও এমন অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছেন৷ তিনি কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে চান না৷’’ এই বিতর্কে বিদ্ধ হয়েছেন পদ্মশ্রী সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বোলপুরের জীবিত কিংবদন্তি এই চিকিৎসকের মূর্তিতে কালি ছেটানো হয়েছে তিনি কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়ানোয়৷ ফলে ঐতিহ্যের পক্ষে সওয়ালকারীদের মূল আন্দোলন বিপথগামী হয়ে পড়েছে৷

যদিও এই চাপানউতোর ছাপিয়ে সামনে থাকছে একটিই প্রশ্ন— পাঁচিল তোলা কি রবীন্দ্র আদর্শের পরিপন্থি? আশ্রমিক শান্তিদেব ঘোষের বাড়ির সামনে পাঁচিল তোলার বিরুদ্ধেও মঙ্গলবার পদযাত্রা হয়েছে শান্তিনিকেতনে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, মেলার মাঠের ঐতিহ্য রক্ষা করতেই পাঁচিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ বিশ্বভারতীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘ওই মেলার মাঠে চলে অবৈধ কাজ৷ পড়ে থাকে মদের বোতল, কনডম, গাঁজা৷’’ এ কারণে পড়ুয়া ও প্রাক্তনীদের একাংশের প্রশ্ন, অবৈধ কাজকর্ম রুখতে পাঁচিল দেওয়া ছাড়া আর কী পথ রয়েছে? অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর…’৷ এতে বোঝা যায় প্রাচীরে তাঁর আপত্তি ছিল৷ যে কোনো জ্ঞানই বন্ধন থেকে ছিন্ন হওয়ার কথা বলে৷ যদি অসামাজিক কাজকর্মের জন্য পাঁচিল দিতেই হয়, তাহলে আলোচনা করতে হতো৷ সংলাপহীনতা সমস্যা তৈরি করেছে৷’’