বাংলাদেশের ‘বৃক্ষমানব'
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬আবুল বাজানদারের বয়স তখন দশ৷ হঠাৎ একদিন তিনি আবিষ্কার করেন, তাঁর হাত ও পায়ে গাছের শেকড়ের মতো কিছু একটা গজাচ্ছে৷ শুরুর দিকে সেগুলো নিজেই কেটে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি৷ কিন্তু তাতে খুব ব্যথা লাগতো৷ তাই সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
বার্তাসংস্থা এএফপিকে আবুল বলেন, ‘‘শুরুতে মনে করেছিলাম এগুলো ক্ষতিকর নয়৷ কিন্তু আস্তে আস্তে আমি আমার কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলি৷''
গত চার বছরে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকে৷ এক সন্তানের জনক আবুল এক পর্যায়ে তাঁর রিকশাচালক পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন৷ বর্তমান বয়স ২৬৷ চিকিৎসার জন্য এখন তিনি আছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে৷ তাঁর এই বিরল রোগ, যাকে বলে ‘এপিডার্মোডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস', তার চিকিৎসায় চিকিৎসকদের একটি বোর্ডও গঠন করা হয়েছে৷ বর্তমানে চলছে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷
চিকিৎসকদের লক্ষ্য হচ্ছে, তাঁর হাত-পায়ের যতটা সম্ভব ক্ষতি কম করে শেকড়ের মতো দেখতে অংশগুলো সরিয়ে ফেলা৷ হাসপাতালের পরিচালক ড. সামন্ত লাল সেন জানান, গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত আবুলসহ তিনজন মানুষের এই রোগ হয়েছে যা বৃক্ষমানব রোগ হিসেবে পরিচিত৷ বাংলাদেশে এই প্রথম এরকম এক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল৷ এর আগে ২০০৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় এক বৃক্ষ মানবের শরীরে কয়েকবার অস্ত্রপচার করা হয়েছিল৷
আবুল বাজানদার যেখানেই যান, সেখানে মানুষের ভিড় জমে যায়, জানান বোন আধুরী বিবি৷ তিনি বলেন, গ্রামে তাঁকে দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসত৷ এখন হাসপাতালেও প্রতিদিন অনেকে ভিড় করছে৷ দেশি, বিদেশি গণমাধ্যমে তাঁর ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে৷
উল্লেখ্য, এর আগে ভারতে চিকিৎসার চেষ্টা করেন আবুল৷ কিন্তু চিকিৎসার খরচ অনেক বেশি হওয়ায় সেখানে অস্ত্রপচার করা হয়নি তাঁর৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অবশ্য তাঁকে সেবা দিচ্ছে বিনা খরচায়৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনও আবুলকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে৷
এআই/ডিজি (এএফপি)