গাছ কাটতে কম্পিউটার
২১ নভেম্বর ২০১৪ভার্চুয়াল অরণ্য – অর্থাৎ অবাস্তব কিন্তু বাস্তবের অনুরূপ, এমন অরণ্যে উড়ে বেড়ানোটা আজ সত্যিই সম্ভব৷ আখেন প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের মানব ও যন্ত্রের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইয়ুর্গেন রসমান জঙ্গলকর্মীদের কাজের প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাতে চান৷ মাউস ক্লিক দিয়ে যেখানে গাছ কাটা যায়৷ রসমান-এর প্রোগ্রাম দিয়ে দেখা যায়, বিশ বছর পরে এই বনানীর কী রকম চেহারা হবে, ততদিনে অন্য গাছগুলো কতটা বাড়বে৷
হার্ভেস্টার নামধারী গাছ কাটার বড় যন্ত্রগুলো বনের অনেক ক্ষতি করে৷ শুধু যে গাছটা কাটা হচ্ছে, সেটাই নয়, আশেপাশের গাছগুলোরও ক্ষতি হয়৷ অনেক সময় জঙ্গলের মাঝখানে একটা ন্যাড়া জায়গার সৃষ্টি হয়৷ রসমানের প্রোগ্রামে সিমিউলেশন করে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায় এবং সেই সব ক্ষতি রোখা যায়৷ রসমান বলেন: ‘‘আমরা সত্যিই কৌশলটা রপ্ত করে ফেলেছি: এক টুকরো জঙ্গল কী ভাবে পরিষ্কার করতে হয়; যে সব গাছ অবধি পৌঁছাতে চাই, তার জন্য কোথায় পথ কাটব৷ এছাড়া স্বভাবতই গাছ কাটার পন্থা: গাছটা কী ভাবে ধরব, কাঠের টুকরোগুলো কী ভাবে সাজিয়ে রাখব, যাতে সেগুলো পরিবহণ করতে সুবিধে হয়৷ বস্তুত কোনো গাছ কাটার আগেই আমি পুরো প্রক্রিয়াটা পরিকল্পনা করতে পারি৷''
গাছ চেনে রোবোট
তার জন্য আগে প্রতিটি গাছ কম্পিউটারের ভার্চুয়াল অরণ্যে চিহ্নিত হওয়া চাই৷ একটি রোবোটযানে লেজার স্ক্যানার, স্টিরিও ক্যামেরা ও জিপিএস-রিসিভার লাগানো রয়েছে৷ এই তিনটি যন্ত্র দিয়ে মাপার ফলে রোবোটের সংগৃহীত তথ্য খুবই বিশদ ও নিখুঁত হয়৷ পরে হার্ভেস্টার গাছ কাটার যন্ত্রটি সেই তথ্য ব্যবহার করবে৷ সেজন্য ঐ হার্ভেস্টারে ঠিক ঐ একই মাপার যন্ত্রগুলি থাকা চাই৷ আখেন প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ নিলস ভান্টিয়া বলেন, ‘‘লোকালাইজেশন, অর্থাৎ বৃক্ষের অবস্থান শনাক্তকরণ যন্ত্রটি আগে থেকেই হার্ভেস্টার-এ লাগানো ছিল৷ সেই যন্ত্রই কোন গাছ কাটা হবে, তা চিনিয়ে দিতো – ডাটাব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে৷ সে যন্ত্র এখানেও ব্যবহার করা হয়েছে৷''
কম্পিউটারে যে সব তথ্য আছে, তা অনুযায়ী হার্ভেস্টার কোন কোন গাছ কাটবে এবং কোথায় ও কখন কাটবে, বিজ্ঞানীরা তা প্রোগ্রাম করে দিয়েছেন৷ কাজেই হার্ভেস্টার সযত্নে জঙ্গলে গাছ কাটে, সঠিক গাছ – কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না করে৷ রসমান-এর ভাষ্যে, ‘‘নীতিগতভাবে আমরা জঙ্গলের গাছ কাটা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি যে, বনভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার হবে পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে৷''
অক্টোকপ্টার
আকাশ থেকেও জঙ্গলের মাপজোক করা চলে৷ অক্টোকপ্টার নামধারী যন্ত্রটি শুধু কোনো গাছের অবস্থানই নয়, বরং তার উচ্চতাও মাপতে সমর্থ৷ অক্টোকপ্টারের তোলা ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা বনের পরিবর্তনও লক্ষ্য করতে পারেন, যেমন গাছে পোকা লেগেছে কিনা, কিংবা কোনো ঝড়ে জঙ্গলের কতোটা ক্ষতি হয়েছে৷
এই সব তথ্য একত্রিত করে গবেষকরা ইতিমধ্যেই কম্পিউটারে ঝড় ‘সিমিউলেট' অর্থাৎ অনুকরণ করতে পারেন৷ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বিধ্বংসী ঝড়ের সম্ভাবনা বেড়েছে বৈ কমেনি৷ লাল-সবুজ-হলুদ বিন্দু দিয়ে বাতাসের গতি দেখানো হয় – লাল মানে এই ঝড় বিপজ্জনক, এতে গাছ ভেঙে পড়তে পারে৷ রসমান বলেন, ‘‘আমরা ফ্লুইড মেকানিক্স সংক্রান্ত গবেষণার সর্বাধুনিক ফলাফল নিয়ে সেগুলিকে ভার্চুয়াল বনানীতে প্রয়োগ করেছি – আমাদের সংগৃহীত অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে৷ এর ফলে আমরা বলতে পারি, জঙ্গলের কোথায়, কোন ঢালে কী ধরনের গাছ লাগানো উচিত – অথবা লাগানো উচিত নয়; কোথায় গাছগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত, ইত্যাদি৷''
এ যাবৎ মূলত বিজ্ঞানীরাই ভার্চুয়াল অরণ্য নিয়ে কাজ করতেন৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত যে, সারা বিশ্বের অরণ্যরক্ষীরা একদিন এই ভার্চুয়াল অরণ্যে তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করবেন৷