বেশি অভিযোগকারীদের ব্লক
১৭ আগস্ট ২০১৩ইন্টারনেটে প্রায় সব রকম পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোটা বিশ্বেই পরিচিত অ্যামাজন৷ বলা যায়, ইন্টারনেট ভিত্তিক কেনাবেচা জনপ্রিয় করে তোলার মূলে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি৷ সেই অ্যামাজন জার্মানিতে তোপের মুখে রয়েছে গত কয়েকদিন ধরে৷ বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েব পোর্টালে তাদের এক নতুন নীতির বিরুদ্ধে লিখছেন অনেকে৷ যেসব ব্যবহারকারী পণ্য কেনার পর ঘনঘন ফেরত দেন, তাদের ব্লক করে দিচ্ছে অ্যামাজন৷ এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে আগেভাগে সতর্কও করছে না এই অনলাইন জায়ান্ট৷
এই নতুন নীতির কারণে বেশি বেশি অভিযোগকারী খদ্দেররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷ তারা অ্যামাজন থেকে নতুন কোন পণ্য আর কিনতে পারছেন না৷ জার্মানিতে ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে পণ্য বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিভিএইচ-এর কর্মকর্তা ক্রিস্টিন স্মিট অ্যামাজনের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অন্য কোন বিক্রেতার কথা জানিনা, যে এ ভাবে খদ্দেরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়৷
পণ্য ফেরত নেয়া ব্যবসারই অংশ
একজন খদ্দের পণ্য কেনার পর বারবার ফেরত দিলে তা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে সমস্যায় ফেলে৷ রেগেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ইন্টারনেটে পণ্য কেনেন, এরকম প্রতি দশজন খদ্দেরের মধ্যে চারজন পণ্য ফেরত দেওয়ার চিন্তা মাথায় রেখেই কেনাকাটা করেন৷ স্মিট এই বিষয়ে বলেন, বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু পণ্য ফেরত আসার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই ব্যবসার কৌশল নির্ধারণ করেন৷''
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সালান্ডো-র কথা৷ এই অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি খদ্দেরের ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্য ফেরত নিয়ে থাকে৷ এ ক্ষেত্রে আলাদা কোনো পয়সা খরচ করতে হয়না খদ্দেরকে৷ সালান্ডো-র কর্মকর্তা ক্রিস্টিন ডল্গনার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘পণ্য ফেরত আসাটা কোন সমস্যা বলে আমরা মনে করিনা৷ বরং বিষয়টি আমাদের বাজেটের মধ্যেই থাকে৷''
অস্পষ্ট নীতি
একজন খদ্দের কী পরিমাণ পণ্য ফেরত দিলে অ্যামাজন সেটা সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে? ডয়চে ভেলের এমন প্রশ্নের জবাবে ১৯৯৪ সালে অনলাইনে কেনাবেচা চালু করা এই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ‘‘গভীরভাবে তদন্তের পরই অ্যাকাউন্ট ব্লকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷'' অ্যামাজনের মুখপাত্র ক্রিস্টিনে হ্যোগার বলেছেন একথা৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন খদ্দের পণ্য কেনা এবং ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোক্তার মতো আচরণ না করলে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়৷'' তবে ঠিক কী পরিমাণ পণ্য ফেরত দিলে একজন ক্রেতাকে ব্লক করা হবে, সেটা পরিষ্কারভাবে জানায়নি অ্যামাজন৷ এর অর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আগ্রহী নয়৷
অ্যামাজনের সিদ্ধান্ত আইনসম্মত
আইনি দিক বিবেচনায় অ্যামাজনের এই নতুন নীতি অবৈধ নয়৷ জার্মান ভোক্তা অধিকার রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের কর্মকর্তা টোমাস ব্রাডলার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘একজন বিক্রেতা কার সঙ্গে ব্যবসা করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার৷'' ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত খদ্দেরদের বাদও দিতে পারেন বিক্রেতা৷ আর পণ্য ফেরত দেওয়া নীতির অপব্যবহার রোধে অন্য অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানও অ্যামাজনের মতো নীতি অনুসরণ করছে৷
কিন্তু অ্যামাজন এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এই নীতিতে একটু পার্থক্য রয়েছে৷ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খদ্দেরকে অন্তত একবার হলেও সতর্ক করে৷ স্মিট বলেন, ‘‘ইমেল অথবা ফোনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো খদ্দেরকে তার অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে জানায়৷'' আর এতে খদ্দের নিজের আচরণ সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার সুযোগ পান৷
অ্যামাজন কেন খদ্দেরদের সতর্ক করে না, সেটা পরিষ্কার নয়৷ স্মিডটের মতে, ‘‘এভাবে বিনা নোটিসে কারো অ্যাকাউন্ট বন্ধটা অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ৷ এতে করে একজন খদ্দের পরবর্তীতে আর পণ্য কিনতে পারেন না৷''
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খদ্দেরের সঙ্গে এরকম কঠোর আচরণ করে অ্যামাজন কি নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে? বর্তমান বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু কম নয়৷