ব্রেক্সিটে ভয়াবহ অরাজকতার আশঙ্কা
১৯ আগস্ট ২০১৯‘যে কোনো মূল্যে' ৩১শে অক্টোবর ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নিয়ে যেতে চান ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ এই অবস্থানকে ঘিরে তিনি নৈরাশ্যের বদলে আশাবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছেন৷ কিন্তু ইইউ-র সঙ্গে কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেনের মানুষকে ঠিক কী মূল্য দিতে হবে, সে বিষয়ে এতকাল বিশেষজ্ঞদের কিছু সাবধানবাণী ছাড়া বিশেষ কিছু জানা যায় নি৷ এবার সেই সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির এক সামগ্রিক চিত্র উঠে এসেছে৷ দ্য সান্ডে টাইমস সংবাদপত্রে এমন কিছু গোপন সরকারি নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, যাতে একাধিক ক্ষেত্রে ঘাটতি ও তার পরিণাম তুলে ধরা হয়েছে৷
‘অপারেশন ইয়েলোহ্যামার' নামের এই সব সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী চুক্তিহীন ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ব্রিটেনের অবকাঠামো জোরালো ধাক্কা খাবে৷ সে ক্ষেত্রে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধপত্রের অভাব দেখা দেবে৷ শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গোটা দেশের বন্দরগুলিতে মালপত্র খালাসের কাজ থমকে যাবে৷ প্রায় ৮৫ শতাংশ ট্রাক ফ্রান্সের শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছ প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করতে প্রস্তুত না হওয়ায় তিন মাস পর্যন্ত বন্দরের কাজকর্ম ব্যহত হতে পারে৷ এই সমস্যার জের ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবের কারণে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভের আশঙ্কা রয়েছে৷ মোটকথা এই সব রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রিটেনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটতে বাধ্য৷
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাইকেল গোভ জানিয়েছেন, গোপন সরকারি রিপোর্টের সঠিক ব্যাখ্যা করা হয় নি৷ তাঁর মতে, সরকার চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে নানারকম সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম চিত্র সৃষ্টি করেছে৷ দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্রগুলিই তুলে ধরা হয়েছে৷ গত ৩ সপ্তাহে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার গতি আরও বাড়ানোর ফলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন৷ অতীতের তুলনায় সরকার এমন পরিস্থিতির জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত৷ ফলে পুরানো এই সব নথিপত্র এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে তিনি মনে করেন৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এক প্রাক্তন মন্ত্রী এই সব নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছেন৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি ইইউ-র সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করতেই এমনটা করেছেন৷ এই সব পুরানো রিপোর্ট এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে তিনিও দাবি করেন৷
সরকার ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও সংসদ সদস্যরা গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ ১০০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য একযোগে প্রধানমন্ত্রী জনসনকে চিঠি লিখে সংসদের আপতকালীন অধিবেশন আয়োজনের ডাক দিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, দেশের এই কঠিন সময়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংসদের অধিবেশন শুরু করে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত তা চালু রাখা উচিত৷ একমাত্র এভাবেই সরকারের কাজকর্মের উপর নজর রেখে সাধারণ মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরা সম্ভব৷
ক্ষমতায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চলতি সপ্তাহে এই প্রথম জার্মানি ও ফ্রান্সের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ তিনি ইইউ নেতাদের উপর নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য চাপ বাড়াতে চান৷ তাঁর মতে, ব্রিটেনের সংসদ ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারবে না৷ ইইউ অবশ্য এখনো পর্যন্ত এই প্রশ্নে সবরকম চাপ উপেক্ষা করে এসেছে৷ জনসনের বার্লিন ও প্যারিস সফরেও এই অবস্থান পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)