ব্রেক্সিট জট ছাড়াতে তৃতীয় পথ
২৮ অক্টোবর ২০২০অনেক টানাপড়েনের পর চলতি সপ্তাহে আবার ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ বুধবার পর্যন্ত লন্ডনে বৈঠকের পর বাকি আলোচনা ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হবে৷ ইইউ কমিশনের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, যে দুই পক্ষই চুক্তির লক্ষ্যে জোরালো আলোচনা করছে৷
ব্রেক্সিট-পরবর্তী বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে মৌলিক মতবিরোধ কাটানোর নানা পথ খুঁজছেন মধ্যস্থতাকারীরা৷ আগামী ১লা জানুয়ারি পুরোপুরি ইইউ ত্যাগ করার পরেও ব্রিটেন ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বাজারে অবাধ ব্যবসাবাণিজ্য চালিয়ে যেতে চাইলে সে দেশকে অনেক ইইউ-বিধিনিয়ম মেনে চলতে হবে এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ন্যায্য পরিবেশের গ্যারেন্টি দিতে হবে৷ অন্যদিকে ব্রিটেন ইইউ-র নিয়মকানুনের বেড়াজাল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়৷
এই অচলাবস্থা কাটানোর পথ খুঁজছে দুই পক্ষ৷ ফলে তৃতীয় বিকল্প নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে৷ ইউরোপীয় কমিশনের আর্থিক পরিষেবা বিভাগের প্রধান জন বেরিগান ব্রিটেনের কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন, যে সে দেশ ইইউ-র বিধিনিয়ম থেকে ঠিক কতটা বিচ্যুতির পরিকল্পনা করছে৷ তাঁর মতে, বিচ্যুতির মাত্রা গ্রহণযোগ্য হলে বোঝাপড়া সম্ভব হতে পারে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সামনে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্রিটেন ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইইউ-র বিধিনিয়ম থেকে কিছু বিচ্যুতির পথে যাবেই৷ কিন্তু সে বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া থাকলে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হতে পারে৷
সেই বোঝাপড়ার উপর আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ ইইউ আপাতত কিছু সাময়িক ছাড় দিলেও চূড়ান্ত বোঝাপড়া সম্ভব না হলে লন্ডনের পুঁজিবাজারের অনেক কার্যকলাপ ইইউ-র কোনো দেশে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ অথবা পরিষেবা ক্ষেত্রকে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তির আওতার বাইরে রাখার বিষয়েও আলোচনা চলছে৷ সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী ইইউ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে৷ কিন্তু পদে পদে মতবিরোধ দেখা দিলে এমন কাঠামো কাজ করবে না বলে বেরিগান মনে করেন৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার উপর প্রভাব ফেলছে, নানা কারণে এমন ধারণা দানা বাঁধছে৷ সে ক্ষেত্রে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নিবাচিত হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অনেকটা স্বস্তি বোধ করবেন এবং অ্যামেরিকার ভরসায় ইইউ-র সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে আরও ঝুঁকি নিতে পারবেন৷ অন্যদিকে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে অ্যামেরিকার সঙ্গে জনসন সরকারের সম্পর্ক তেমন মধুর নাও হতে পারে৷ বিশেষ করে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তি বিঘ্নিত হলে আইরিশ বংশোদ্ভূত বাইডেন ব্রিটেনের প্রতি কড়া মনোভাব দেখাতে পারেন৷ ব্যক্তিগত স্তরে দুই নেতার মধ্যে শীতল সম্পর্কের সম্ভাবনাও যথেষ্ট বেশি৷ ট্রাম্প জনসনকে ‘ব্রিটেনের ট্রাম্প হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন৷ গত ডিসেম্বর মাসে ব্রিটেনের নির্বাচনে জনসনের জয়ের পর বাইডেন তাঁকে ‘শরীর ও আবেগের’ দিক থেকে ট্রাম্পের ক্লোন হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন৷ এমন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হলে জনসন ইইউ-র প্রতি নরম মনোভাব দেখাতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ জনসন অবশ্য এই যোগসূত্র মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন৷ ৩রা নভেম্বর কোনো স্পষ্ট ফলাফল না দেখা গেলে ইইউ-র সঙ্গে চুক্তির জন্য তাঁর হাতে সময় থাকবে না৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)