1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ভাঙনেই ভাঙন রুখবেন মমতা?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩০ আগস্ট ২০১৭

পাহাড়ের নেতারা সমতলে নেমে এসে বৈঠক করে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের সদর সচিবালয় নবান্নে৷ পাহাড়ে বসে বিমল গুরুং হুঙ্কার ছাড়লেন, বনধ চলছে, চলবে৷

https://p.dw.com/p/2j448
Bangladesch Mamta Bannerjee in Dhaka
ফাইল ফটোছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

দার্জিলিং পাহাড়ের অচলাবস্থা কাটাতে মঙ্গলবার পশ্চিবমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে গেলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং ও আরও চার নেতা ৷ বৈঠকে ছিলেন গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের তিন নেতা, জন আন্দোলন পার্টির পাঁচ নেতা এবং দার্জিলিং জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা, যেহেতু এটা তৃণমূল নেত্রী নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের প্রশাসনিক বৈঠক৷ এবং এই বৈঠক শেষ হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রীর উপযুক্ত নৈর্ব্যক্তিক ঢঙেই বললেন, বৈঠকে ওঁরা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলেছেন৷ সে তুলতেই পারেন৷ গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সবাই নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে পারে৷ আলাদা রাজ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার যে রাজ্য সরকারের নয়, জবাবে সেটাও ওদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবে পাহাড়ে লাগাতার বনধের কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা কাটাতে এই আলোচনা অত্যন্ত সদর্থকভাবে শেষ হয়েছে৷ এ নিয়ে পরবর্তী আলোচনা হবে ১২ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গের সচিবালয় উত্তরকন্যায়৷

মমতা ব্যানার্জি

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সিকিমে বসে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, যখন সরকার বলল আলাদা গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টি তাদের হাতে নেই, তখনই কেন বেরিয়ে এলেন না পাহাড়ের নেতারা?‌ সরাসরি কেন্দ্রের সঙ্গেই তা হলে আলোচনা হবে৷ এর পরই বিমল গুরুংয়ের ঘোষণা, এই বৈঠক নিয়ে তিনি খুশি নন৷ পাহাড়ে গত ৭৮ দিন ধরে চলা বনধও তুলে নেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই৷ এর আগে তিনিই বলেছিলেন, এই বৈঠকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের যাওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল৷ তাঁকে না জানিয়েই কিছু মোর্চা নেতা বৈঠক করতে চলে গেছেন৷

যাঁর নেতৃত্বে মোর্চা প্রতিনিধিদল নবান্নের এই বৈঠকে হাজির ছিল, সেই বিনয় তামাং কথাটা শুনে বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত, রীতিমাফিক গুরুংকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল৷ তারপরেও গুরুং কেন এ সব কথা বলছেন, তিনি জানেন না৷ এরপর বিনয় তামাং যা বলেছেন, তার ভাবার্থ হলো, পাহাড়ের জনজীবনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে লোকে এ রকমই মন্তব্য করে!‌

বিনয় তামাংয়ের এই মন্তব্যের প্রভাব কিন্তু অনেক সুদূরপ্রসারী৷ সামনেই দুর্গাপুজোর ছুটির মরশুম, যেসময় পাহাড়ে পর্যটকদের ঢল নামে৷ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পাহাড়ের মানুষদের সারা বছরের খোরাকির একটা বড় অংশ জোগাড় হয় এই ছুটির মরশুম থেকেই৷ গুরুংয়ের জেদে যদি পাহাড়ে বনধ চলতেই থাকে, তা হলে অবধারিতভাবে বহু মানুষ বেঁকে বসবে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দার্জিলিংয়ের এক হোটেল মালিক জোর দিয়ে বললেন, বনধ তুলতেই হবে, গুরুংও সেটা ভালোভাবেই জানেন৷ নয়ত, গুরুংয়ের ইচ্ছে-অনিচ্ছে যে পাহাড়ে আর শেষ কথা নয়, সেটা আরও বেশি করে প্রমাণ হয়ে যাবে!‌ বস্তুত নবান্নের বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে গুরুংয়ের আপত্তি এবং সে নিয়ে বিনয় তামাংয়ের মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, বনধ নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ভেতরেই স্পষ্ট দ্বিমত তৈরি হয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সেই সুযোগটাই নিয়েছেন, এবং সেটাও একেবারে মোক্ষম সময়েই৷ এর আগে গোর্খার বাইরে পাহাড়ের অন্য জনগোষ্ঠীকে আলাদা দল গড়তে উৎসাহ দিয়ে তিনি গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনকে কিছুটা দুর্বল করেছিলেন৷ এবার পর্যটন মরশুমের ঠিক আগে তিনি পরের চালটি দিলেন৷ দার্জিলিংয়ে সাম্প্রতিক রহস্যময় বোমা বিস্ফোরণ এবং সেই সূত্রে বহির্দেশীয় যোগসাজশের অভিযোগ ওঠায় বিমল গুরুং এমনিতেই এখন বেকায়দায়৷ তাঁকে এবার নিজেরই দলে আরও একঘরে করে দিতে চান মমতা৷ লক্ষণ স্পষ্ট যে, দার্জিলিং জেলায় এই বনধ আর বেশিদিন চলবে না৷ এমনকি বিল গুরুংও তাতে সায় দিতে বাধ্য থাকবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য