ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন মমতা?
৭ জানুয়ারি ২০১৯১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মহা সমাবেশের ডাক দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ রাজনৈতিক মহলের প্রত্যাশা, দেশজুড়ে বিজেপিবিরোধী মহাজোট গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী, তার একটা চেহারা দেখা যাবে এই সমাবেশে৷ গত কয়েক মাসে একাধিক আঞ্চলিক দলের নেতা কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে গেছেন৷ তার মধ্যে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী, এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির কে চন্দ্রশেখর রাও আছেন৷ জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা আছেন৷ গত বছর আগস্টে দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকে যে বিজেপিবিরোধী বৈঠক হয়েছিল সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলোর, সেখানেও মমতা হাজির ছিলেন৷ এবং বিজেপিকে হারাতে মমতা যে ফরমুলা বেঁধে দিয়েছেন, সেটি মোটামুটি সর্বদলস্বীকৃত রাস্তা হিসেবে গ্রাহ্য হয়েছে৷ মমতা যা বলেছেন, তা নিছক ভোটের অঙ্ক৷ বিজেপিবিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয়ে যায়, সেদিকেই নজর দিতে বলেছেন মমতা৷ তার জন্য মমতার ফরমুলা, যে দল যেখানে শক্তিশালী, বিজেপির বিরুদ্ধে সেখানে তারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ বাকি দলগুলি এবং তাদের ভোট থাকবে সহযোগী শক্তি হিসেবে৷ আঞ্চলিক পর্যায়ের নির্বাচনে এই ফরমুলা সবসময় কার্যকর না হলেও, সমবেতভাবে বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই রণকৌশল একরকম মেনে নিয়েছে৷
মমতা ব্যানার্জি এই রকম মহাজোটের উদ্যোগ এবারই যে প্রথম নিচ্ছেন, তা নয়৷ ২০১৪ সালেও মমতা কংগ্রেসকে বাইরে রেখে এরকমইএকটি বিজেপিবিরোধী জোটের ডাক দিয়েছিলেন৷ সেই জোট সফল হয়নি, কারণ, উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এবং মুলায়ম-অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মহাজোটের সম্ভাবনাকে ঝুলিয়ে রেখেছিল৷ এবারও কি পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে? এখনও পর্যন্ত না৷ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির বোঝাপড়া হওয়ায় জিততে রীতিমতো বেগ পেতে হযেছিল বিজেপিকে৷ এখনো ওই দুই দল কোনো স্পষ্ট সঙ্কেত পাঠাচ্ছে না যে, লোকসভা ভোটে তারা কী করতে চলেছে৷ ওদিকে এই মুহূর্তে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কোনো মহাজোট গড়ার সম্ভাবনার কথা এবারে আর মমতার পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়৷ তার কারণ, সদ্য হয়ে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ফলাফল এবং বিরোধী নেতা হিসেবে জাতীয় সংসদে রাহুল গান্ধীর নিজেকে ক্রমশই আরো শক্ত মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা৷ রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলই কার্যত একা হাতে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে৷
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, মমতার ফরমুলা মেনে, বিজেপিবিরোধী ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রেখে লোকসভা নির্বাচনে যদি সত্যিই বিজেপিকে হারানো সম্ভব হয়, তা হলে মমতা ব্যানার্জির নামই কি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হবে? উত্তর হ্যাঁ এবং না৷ আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে সরাসরি সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রধান আসনটিতে উঠে আসার ঘটনা আগেও ঘটেছে এইচ ডি দেবগৌড়া এবং ইন্দ্রকুমার গুজরালের ক্ষেত্রে৷ জাতীয় রাজনীতিতে নেহাতই অপরিচিত নাম ছিলেন তাঁরা, যদিও দেশের বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন গুজরাল৷ সেখানে মমতার রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি৷ পশ্চিমবঙ্গে যে বামফ্রন্ট সরকারকে অপরাজেয় মনে করা হতো, ৩৪ বছরের সেই জগদ্দল সরকারকে ফেলে দিয়ে মমতা ক্ষমতায় এসেছেন৷ জাতীয় রাজনীতিতেও বাস্তববাদী দর্শনের কারণে নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছেন৷ এবং তিনি যদি একদিন দেশের প্রদানমন্ত্রী হন, নেহাত খারাপ হবে না বলে এমনকি তাঁর অনেক বিরোধীও জনান্তিকে স্বীকার করছেন৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা একাধিক জনহিতকর সামাজিক প্রকল্প চালু করেছেন, যা সহজেই এবং সাফল্যের সঙ্গে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়৷ এবং প্রশাসক ও জননেত্রী হিসেবেও মমতা ব্যানার্জি বারবার এটা প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুরধার রাজনৈতিক মস্তিষ্কের পাশাপাশি তাঁর একটি মানবিক হৃদয়ও আছে৷
কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র৷ যে আঞ্চলিক দলগুলির ভরসায় মমতা মহাজোট গড়তে উদ্যোগী, তাদের নেতা-নেত্রীরাও সবাই কিন্তু ওই একটি আশা নিয়েই অপেক্ষায়৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার৷ অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নাইডু বারবার নিজেই প্রসঙ্গটা তোলেন এবং স্বেচ্ছায় ঘোষণা করেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবে, সেটা পরের ব্যাপার৷ উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী, অখিলেশ যাদব, তেলেঙ্গানায় চন্দ্রশেখর রাও, সবাই একই স্বপ্ন দেখে আসছেন৷ আর দল হিসেবে কংগ্রেসের যে উত্থান শুরু হয়েছে, তা যদি ২০১৯ লোকসভা ভোট অবধি বজায় থাকে, কংগ্রেসের নির্বাচনি সাফল্য আরো মজবুত হয়, তাহলে রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি কি কংগ্রেস ছেড়ে দেবে?
কাজেই বিজেপি হারতে পারে, কিন্তু মমতা প্রধানমন্ত্রী না-ও হতে পারেন৷ আপাতত নজর ১৯ জানুয়ারির সমাবেশের দিকে৷ কটা দল, কতজন নেতাকে মমতা নিজের পাশে দাঁড় করাতে পারেন৷